বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বাংলা সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় পাঁচ নায়িকা জয়া আহসান, পরীমনি, বিদ্যা সিনহা মিম, পূজা চেরি ও নুসরাত ফারিয়া। তাদের অভিনীত প্রথম সিনেমাগুলো কেমন ছিল?
১. জয়া আহসানঃ যদি একইসাথে কমার্শিয়াল ও ক্রিটিকাল সাকসেসের হিসাব করা হয়, তাহলে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের সেরা অভিনেত্রীর জায়গা ধরে রেখেছেন জয়া আহসান। তার বয়স যেমন অসীম এক রহস্য, তেমনি তার দারুণ দারুণ মুভি সিলেকশন এবং পারফর্ম্যান্সও আরেক রহস্যের ব্যাপার। জয়া আহসান জন্মগ্রহণ করেন গোপালগঞ্জ জেলায়। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা এ এস মাসউদ এবং মা রেহানা মাসউদ ছিলেন একজন শিক্ষিকা। তারা দুই বোন এক ভাই। অভিনয় শুরুর আগে জয়া নাচ ও গানের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি ছবি আঁকা শিখেছিলেন। তিনি একটি সংগীত স্কুলও পরিচালনা করেন।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
সিনেমায় ক্যারিয়ার শুরু করার আগে তিনি মডেলিং করেছেন এবং নাটক ও
টেলিফিল্মেও নিয়মিত অভিনয় করেছেন। জয়ার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ২০০৪ সালে মোস্তফা
সরয়ার ফারুকীর ব্যাচেলর চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ব্যাচেলর ছবিটিতে পরিচালক তৎকালীন
এবং বর্তমান সময়ের সামাজিক সম্পর্কের অসংগতির চিত্র বেশ সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন।
এখানে তিনি শায়লা নামক পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ব্যাচেলর সিনেমাটি সেসময়ে মিডল ক্লাস দর্শকদের মধ্যে
ব্যাপক সাড়া জাগায়। বর্তমান সময়ে এসে এটি কাল্ট ক্লাসিক সিনেমার মর্যাদা পেয়েছে।
তবে জয়া প্রথম লিড চরিত্রে অভিনয় করেন নুরুল আলম আতিক পরিচালিত
ডুবসাঁতার চলচ্চিত্রে। সেখানে সে রেণু নামক এক সাধারণ
মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন যার স্বপ্নময়তা, সংবেদনশীলতা
ঢাকা পড়ে আছে সংসারের কষ্টকর বাস্তবতায়।
২. পরীমনিঃ বর্তমানে বাংলা সিনেমার সবথেকে আলোচিত নায়িকা পরীমনি। সিনেমার থেকে বেশি সে নানা রকম বিতর্ক দিয়েই আলোচনায় থাকেন। আসুক দেখা যাক তার সিনেমা জগতের শুরুর গল্প। তার পারিবারিক নাম শামসুন্নাহার স্মৃতি। ছোটবেলাতেই বাবা-মা হারিয়ে নানা-নানি ও খালার কাছে বড় হন তিনি। তিনি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগে স্নাতক পড়াকালীন ২০১১ সালে ঢাকায় চলে আসেন এবং বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নাচ শেখেন।
পরি তার বাবার মতো পুলিশ হতে
চেয়েছিলেন, তবে তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন মডেলিং এর মাধ্যমে। কর্মজীবনের
শুরুতে মডেল ছাড়াও তিনি বিভিন্ন নৃত্যানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন এবং টিভি নাটকে
অভিনয় করেন। তিনি মডেলিং থেকে ছোটপর্দায় এবং তারপর রূপালী পর্দায় অভিনয় শুরু
করেন। অভিনয় জীবন শুরু করেন টিভি নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে।
মুক্তির আগেই ২৩টি চলচ্চিত্রে
অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে রীতিমত হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন পরী মনি। ছবি মুক্তির
আগেই মিডিয়ায় নানা ধরনের খবরের জন্ম দিয়ে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন তিনি। শাহ
আলম মন্ডল পরিচালিত ভালোবাসা সীমাহীন তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র। এই সিনেমায় তার
বিপরীতে ছিলেন জায়েদ খান। সিনেমাটি যদিও বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়।
৩. বিদ্যা সিনহা মীমঃ বিদ্যা সিনহা মীমের ফিল্ম ক্যারিয়ারের শুরুর জার্নিটা খুব একটা স্মুথ না হলেও, গত বছর রায়হান রাফির ‘পরাণ’ ও ‘দামাল’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে দারুণ কামব্যাক করেন তিনি। বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী তিনি। বিদ্যা সিনহা সাহা মীম ১৯৯২ সালের ১০ নভেম্বর রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলায় বিরেন্দ্র নাথ সাহা ও ছবি সাহার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার ২০০৭ প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম-স্থান লাভ করেন। একই বছরে হুমায়ুন আহমেদ পরিচালিত আমার আছে জল চলচ্চিত্রে অসাধারন অভিনয় করে মীম সবার নজরে আসেন। এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ সমালোচকদের বিচারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পীর পুরস্কার লাভ করেন। এই সিনেমায় তার বিপরীতে ছিলেন জাহিদ হাসান ও ফেরদৌস। মীম এখানে দিলশাদ নামক এক চঞ্চল তরূণীর চরিত্রে অভিনয় করেন। যার ট্র্যাজিক সমাপ্তি চরিত্রটিকে দর্শকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে।
৪. পূজা চেরিঃ মডেলিং ও শিশুশিল্পী
হিসেবে পূজা চেরির কর্মজীবন শুরু হয়। পূজা শিশুশিল্পী হিসেবে ভালোবাসার রঙ, তবুও ভালোবাসি,
অগ্নি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। মারাঠি ভাষার বিপুল প্রশংসিত
সৈরাট-এর ছায়া অবলম্বনে নির্মিত নূর জাহান চলচ্চিত্র দিয়ে পূজার প্রাপ্ত বয়স্ক
অভিনেত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ হয়। ছবিটিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন আরেক নবাগত
অভিনেতা আদৃত। সিনেমাটি ভালো না চললেও, একই বছর তিনি ব্যবসাসফল পোড়ামন ২ ও দহন
চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। নবাগত পরিচালক রায়হান রাফী পরিচালিত এই দুটি চলচ্চিত্রেই
তার বিপরীতে ছিলেন আরেক নবাগত অভিনেতা সিয়াম আহমেদ।
৫. শবনম বুবলিঃ বুবলির কর্মজীবন শুরু
হয় সংবাদ পাঠ দিয়ে। তিনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল
বাংলাভিশন-এ ২০১৩ সালে সংবাদ পাঠ শুরু করেন। ২০১৬ সালে বসগিরি চলচ্চিত্রের পরিচালক
শামীম আহমেদ রনি তাকে এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি সম্মত হন। অপু
বিশ্বাসকে এই চরিত্রের জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল। পরে অপু বিশ্বাস নিজেকে এই
চলচ্চিত্র থেকে সরিয়ে নিলে তার স্থানে বুবলিকে নির্বাচন করা হয়। এই চলচ্চিত্রে
তার বিপরীতে অভিনয় করেন শাকিব খান। চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে তিনি শ্রেষ্ঠ নবীনশিল্পী
বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেন।