রাগের মাথায় অনেকেই আমরা বলে থাকি, "জাহান্নামে যাচ্ছি"
অথবা "জাহান্নামে যাও"
আদতে এ কথা বলার পরে কেউ জাহান্নামে যায় না। তবে যদি সত্যি আপনি
আপনার কথাটি পালন করতে চান, তবে চলে যেতে পারেন তুর্কমেনিস্তানে অবস্থিত "নরকের
দরজা" দেখতে।
মধ্য এশিয়ার দেশ "তুর্কমেনিস্তান"। তুর্কমেনিস্তানের
রাজধানী "আশগাবাত" থেকে ২৬০ কিলোমিটার দূরে আছে "দারভাজা" গ্রাম।
খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত এই এলাকাটি। ১৯৭১ সালে, রাশিয়ার
অনুসন্ধানকারীরা আবিষ্কার করেছিলেন 'খনিজ তেল' এর খনি। এই তোলার জন্য আনা হয়েছিল বিশাল
বিশাল ড্রিল মেশিন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল, ড্রিল করলেই সেখান থেকে বেরিয়ে
আসছে এক ধরনের গ্যাস। ড্রিল করার সময় একটি বিশাল এলাকা জুড়ে ধ্বস নামে। তৈরি হয়, ২২৬
ফুট ব্যাস ও ৯৮ ফুট গভীরতা যুক্ত এক বিশাল
গর্ত। গর্ত থেকে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস বের হতে শুরু করেছিল। পরবর্তীতে গবেষণা করে জানা
যায়, এটি একটি 'প্রাকৃতিক গ্যাস'র খনি। আর সেখান থেকে নির্গত হচ্ছিলো 'মিথেন' গ্যাস।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
খনি থেকে নির্গত গ্যাসের বিষক্রিয়ায় মারা যেতে শুরু করেছিল সেখানকার
পশুপাখি। মৃত্যুভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালাতে শুরু করলো দারভাজা গ্রামের বাসিন্দারা। চিন্তায়
পড়ে গেলো খনি কর্তৃপক্ষ। গ্যাস নির্গমণের পথ কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছিল দেখে এক অদ্ভুত
সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ভূতত্ত্ববিদ ও বিজ্ঞানীরা। বিশাল সেই গর্ত থেকে বেরিয়ে আসা মিথেন
গ্যাসে তারা আগুন জ্বালিয়ে দিলেন। গবেষকদের ভাবনা ছিলো, খনিতে থাকা গ্যাস কিছুদিনের
মধ্যেই পুড়ে শেষ হয়ে নিভে যাবে আগুন। বেঁচে যাবে পরিবেশ। বিশাল গর্ত থেকে বেরিয়ে আসা
কোটি কোটি ঘনফুটের গ্যাস দাউদাউ করে জ্বলছিলো।
গবেষকদের দুই এ দুই এ চার মিললো না। সেই খনির আগুন আজ পর্যন্তও নেভেনি। জ্বলে চলছে প্রায় বাহান্ন বছর ধরে। কবে খনিটির প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার ফুরাবে! আর কবেইবা নিভবে আগুন! এই লেলিহান আগুনের গর্ত নিয়ে অনেক রকম রহস্য ও মিথ রয়েছে। স্থানীয় লোকেরা অনেকেই একে দৈবশক্তির প্রকাশ বলেও মনে করেন। স্থানীদের কারো কারো মতে, এই দরজা সরাসরি নরকের পথে গিয়েছে। তাই লোক মুখে এর নাম হয়েছে 'নরকের দরজা'। অনেকে আবার একে ডেভিল সুইমিংপুল বলেও ডাকে। ২০১৮ সালে তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্ট নিজেই আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানটিকে ‘শাইনিং অব কারাকুম’ নামকরণ করেছিলেন।
বর্তমানে তুর্কমেনিস্তানের অন্যতম এক পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এই জ্বলন্ত খনিটি। 'কারাকুম' মরুভূমিতে প্রতিবছর ট্রেকিং ও ক্যাম্পিং করতে আসা হাজার হাজার পর্যটক, ভিড় করেন খনিটি দেখবার জন্য। তবে নরকের দরজার প্রকৃত রূপ দেখা যায়, রাতে অন্ধকারে। অনেক দূর থেকে দেখা যায় নরকের দরজার রক্তিম আভা। ঠিক তখন খনিটিকে দেখলে পৃথিবীর বাইরের কোনো জগত বল মনে হয়। মিশকালো অন্ধকারে দগদগে আগুনের ঢেউ দেখে কেউ কেউ একে ‘শয়তানের সুইমিংপুল’ বলে থাকে।
তবে সম্প্রতি সেই ‘নরকের দরজা’ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন
তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্ট "গুরবাঙ্গুলি বার্দিমুখামেদভ"। তবে সম্প্রতি
কারাকুম মরুভূমির বুকে 'নরকের দরজা' খ্যাত গর্তটি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির
প্রেসিডেন্ট। পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত কারণের পাশাপাশি প্রাকৃতিক গ্যাসের রপ্তানি বাড়ানোর
প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বন্ধ করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। টেলিভিশনে এক সাক্ষাতকারে প্রেসিডেন্ট
বলেন, ‘আমরা অনেক মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ হারাচ্ছি। যা দিয়ে আমরা অনেক মুনাফা অর্জন
করতাে পারতাম এবং সেগুলো জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা যেত’।