রাজারা কেনো একটি কুমারী মেয়ে বিয়ে করতো প্রতি বছর??। Sumerian civilization Discussed

Author
0

 


প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার অনেকগুলো সভ্যতার মধ্যে সবথেকে প্রাচীন হচ্ছে সুমেরিয়ান সভ্যতা। এর অবস্থান ছিল ইরাকে। প্রায় ৫৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই সভ্যতার জন্ম হয়। মেসোপটেমিয়া মূলত গ্রিক শব্দ। এর অর্থ দুই নদীর মাঝামাঝি ভূমি। মেসোপটেমিয়া অঞ্চলের পূর্ব দিকে ছিল টাইগ্রিস ওরফে দজলা নদী ও পশ্চিমে ছিল ইউফ্রেটিস ওরফে ফোরাত নদী। সুমেরিয়ানরা ছিল খুবই ইউনিক।


সুমেরিয়ান সভ্যতা ছিল খুবই লম্বা সময় ধরে টিকে থাকা একটি সভ্যতা। ৫৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে শুরু হয়ে ১৯৪০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত টিকে ছিল এই সভ্যতা। অর্থাৎ নব্যপ্রস্তরযুগের শেষ দিকে শুরু হয়ে প্রায় ব্রোঞ্জ যুগের শুরুর সময় পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল এই সভ্যতাটি। মডার্ন সভ্যতার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আবিষ্কার করেছিল সুমেরিয়ানরা। এর মধ্যে গণিতবিদ্যা, আইনবিদ্যা, জ্যোতির্বিজ্ঞান, আর্কিটেকচার, লেখালেখি, কৃষিকাজে পানি ও চাকা, গোল আকৃতির মাটির পেয়ালা, লাঙ্গল অন্যতম।


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



সুমেরিয়ানরাই প্রথম জাতি যারা লেখালেখির প্রচলন শুরু করেতারা ৫০০ এরও বেশি পিক্টোগ্রাফ ব্যবহার করত। যা পরে সুমেরিয়ানদের ভাষা ‘কিউনিফর্ম স্ক্রিপ্ট’ আকারে আবিষ্কার করা হয়েছে। প্রথম দিকে তারা শুধুই ব্যবসার কাজে লেখালেখি শুরু করে। তখন শুধুমাত্র প্রোডাক্ট ও সংখ্যাকেই পিক্টোগ্রাফের মাধ্যমে লিখত। পরবর্তী সময়ে অন্যসব ব্যাপারও এর আওতায় আসে। লেখকরা লেখালেখির জন্য কাদামাটি ও সরু ধাতব দণ্ড ব্যবহার করতো। এরপর সেগুলো রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতো। এই পদ্ধতি তাদের থেকে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে গিয়েছিল। সুমেরিয়ানরা এমনকি এই পদ্ধতিতে কবিতা ও গল্পও লিখেছিল।

সুমেরিয়ানরা ম্যাথমেটিক্সে ছিল দুর্দান্ত। তারা ৬০ সংখ্যাটিকে বেজ ধরে হিসাব-নিকাশ করতো। যার ফলে এখন আমরা এক ঘণ্টাকে ৬০ মিনিট ও একটি সার্কেলকে ৩৬০ ডিগ্রি হিসেবে কাউন্ট করি।


সুমেরিয়ানরা তাদের নিজস্ব একটি ক্যালেন্ডারও বানিয়েছিল। এই কাজটি তারা করেছিল চাঁদ ও সূর্যকে ভিত্তি করে। তাদের ক্যালেন্ডারে প্রত্যেক মাসেই ছিল ৩০ দিন করে।

সুমেরিয়ানদের পরিস্থিতিই তাদের সৃষ্টিশীল হতে সাহায্য করেছিলো। সেই সময় দক্ষিণ ইরাকের ঐ এলাকায় খুবই সামান্য পরিমাণে গাছপালা ছিলো। যথেষ্ট পরিমাণে পাথর ও ধাতব পদার্থও ছিলো না সেখানে। তাই মাটি এবং নদীর পানিকে কাজে লাগিয়েই সুমেরিয়ানরা শুরু করেছিল তাদের প্রযুক্তির উন্নতি সাধন। তবে তারা শুধুমাত্র মৃৎশিল্পই শুরু করেনি, পাশাপাশি বস্ত্রশিল্পও গড়ে তুলেছিল। এগুলোর মাধ্যমেই তারা অন্যদের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে শুরু করে

পশুর লোম ব্যবহার করে সর্বপ্রথম পোশাক তৈরি শুরু করে সুমেরিয়ানরা। পোশাক তৈরির ব্যাপারটিকে তারা শিল্পে রূপ দিয়েছিলেন। সেই ধারণা থেকেই আজকের যুগের গার্মেন্টস শিল্পের উৎপত্তি।


সুমেরিয়ানদের প্রত্যেকটি শহরের ছিল আলাদা আলাদা গড। তাদের মেজর গড ছিল মোট সাতটি এবং মাইনর গড ছিল একশোরও বেশি। তবে তারা অনেক দেবতায় বিশ্বাস করলেও পরকালে বিশ্বাসী ছিল না তাই এ সভ্যতা থেকে কোনো মমি পাওয়া যায় না। তাদের প্রধান দেবতা ছিলেন গড অফ সান ‘উতু’ অন্য ছয় মেজর গড ছিলেন গড অফ হেভেন ‘অ্যান’, সুপ্রিম লর্ড ‘এনলিল’, ওয়াটার গড ‘এনকি’, লেডি অফ দ্য স্যাক্রেড মাউন্টেন ‘নিনহুরসাগ’, গড অফ মুন ‘নান্না’ ও গডেস অফ লাভ অ্যান্ড ওয়ার ‘ইনান্না’।

সুমেরিয়ানরা বিশ্বাস করতো তাদের সভ্যতার শুরুর দিকের রাজাদের সুপারন্যাচারাল পাওয়ার ছিল। এই ধারণা থেকেই লেখা হয়েছিল দুনিয়ার প্রথম মহাকাব্য ‘গিলগামেশ’। তিনি ছিলেন উরুক শহরের রাজা। যেই শহরে এক সময়ে একসাথে ৮০ হাজার মানুষও বাস করেছে।

সেই সময়ে পুরোহিতরা ছিল অত্যন্ত প্রভাবশালী। সুমেরিয়ান রুলাররা তাই নিজেদেরকে পুরোহিতদের চেয়েও ধার্মিক প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে এক বিশাল প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিলেনছোট ছোট অসংখ্য ইট দ্বারা তারা তৈরি করেছিলেন পিরামিডের মতো দেখতে বিশাল ধর্মীয় স্থাপনাযার নাম দেওয়া হয়েছিল জিগুরাতসুমেরিয়ান প্রায় সবগুলো প্রধান শহরেই একটি করে জিগুরাত বানানো হয়েছিল। কালের বিবর্তনে অধিকাংশ জিগুরাত ধ্বংস হয়ে গেলেও উনবিংশ শতাব্দিতে মাটি খুঁড়ে ইরাক ও ইরানের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু জিগুরাতের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে।



সুমেরিয়ান সমাজে আফিম ছিল খুবই জনপ্রিয়। আফিমকে তারা নাম দিয়েছিল আনন্দের উদ্ভিদ। তবে আফিম দিয়ে তারা নেশা করার পাশাপাশি ঔষধ তৈরিতেও ব্যবহার করতো। এছাড়াও তাদের কাছে বিয়ারও ছিল তুমুল জনপ্রিয়। প্রতি বেলায় তারা বিয়ার পান করতো।

সুমেরিয়ান শাসকরা প্রতি বছর একটি করে বিয়ে করতো। কুমারী মেয়েদের মধ্য থেকে সবথেকে নিখুঁত দেহের নারীকে বেঁছে নেওয়া হত। তারা বিয়েতে রাজি না হলে তাদের বন্ধ্যা করে দেওয়া হত। বিয়ের দিন নববধূকে গোসল করিয়ে সবথেকে সুন্দর পোষাক পরিয়ে মন্দিরে নিয়ে আসা হত। রাজা সেখানে পৌছে নতুন বউকে উপহার দিতেন। এরপর তারা একসাথে বসে ধুমপান করতেন। আশেপাশে পুরোহিতরা প্রেমের গান গাইতো। এরপর রাজা নতুন বৌকে নিয়ে বাসর ঘরে চলে যেতেন। প্রতিবার বাসরের বিছানা স্পেশালি বানানো হত।

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!