ব্যাবিলনীয় সভ্যতার আশ্চর্যজনক ব্যাপার-স্যাপার | Babylon: Where Myth Meets History

Author
0

 


মেসোপটেমিয়ার প্রথম সভ্যতা ছিল সুমেরিয়ান সভ্যতা। বহুকাল ধরে সগৌরবে টিকে থাকা এই সভ্যতা ধ্বসে পড়ার পরে গড়ে উঠে আক্কাদিয়ান সাম্রাজ্য। মাত্র ২০০ বছরেই পতন ঘটে এই সাম্রাজ্যের। আক্কাদিয়ান সাম্রাজ্য ভাগ হয়ে উত্তরে গড়ে ওঠে অ্যাসিরিয়ান সভ্যতা ও দক্ষিণে গড়ে উঠে ব্যাবলনিয়ান সভ্যতা। ধারণা করা হয় ২৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে গড়ে ওঠে এই ব্যাবিলন সাম্রাজ্য। দুই মিলেনিয়ারও বেশি সময়ধরে ব্যাবিলন ছিল মেসোপটেমিয়া সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র। এই ব্যাবিলনীয় সভ্যতা ছিল খুবই ইন্টারেস্টিং। চলুন দেখে নেওয়া যাক ব্যাবিলনের অবাক করার মতো কিছু তথ্য।


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



১. ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগান

ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগানের কথা আমরা সকলেই জানি। এটি পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে একটি। রাজা দ্বিতীয় নেবুচাদনেজার তার রাণী অ্যামিটিসের জন্য এটি তৈরি করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন রাণী যেন তার জন্মভূমির মাঠ ও পাহাড়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত না হয়। বাগানটি ছিল ৭৫ ফুট লম্বা। সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে সাজানো ছিল বাগানটি। ছিল দারুণ সুন্দর সব গাছ ও ফুলে ভর্তি। এই বাগানটি প্রমাণ করে যে, ব্যাবিলনের আর্কিটেক্টদের এক্সট্রাঅর্ডিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতা ছিল। ধারণা করা হয়, ঝুলন্ত এই বাগানটি দ্বিতীয় সেঞ্চুরির একটি ভয়ানক ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যায়।

রাজা দ্বিতীয় নেবুচাদনেজারের জীবন ছিল খুবই ঘটনাবহুল। তিনি পরবর্তীতে বিরল সাইকোলজিকাল ডিজঅর্ডার ‘বোনথ্রোপি’তেও ভুগেছিলেন। এই রোগ হলে মানুষ নিজেকে ষাড় মনে করে। এই রোগের কারণে তিনি প্রায় ৭ বছর গৃহবন্দী ছিলেন।


২. দ্য কোড অফ হাম্মুরাবি

ব্যাবিলনীয় সভ্যতার সবথেকে সফল ও ক্ষমতাশালী রাজা ধরা হয় হাম্মুরাবিকে। তিনি ক্ষমতায় আসার পরেই ব্যাবিলনের মারাত্মক উন্নতি হতে থাকে। হাম্মুরাবির কোড ছিল মানব ইতিহাসের প্রথম কোন রাজনৈতিক দলিল। এর মধ্যে ২০০ এরও বেশি লিখিত দলিল ছিল। যেখানে জমি, সম্পদ, ইন্ডাস্ট্রি, কৃষিকাজ থেকে শুরু করে সমাজের সকল বিষয়ই তুলে ধরা হয়েছিল। কোডটি লেখা হয়েছিল কাদামাটির ট্যাবলেটে ও পাথরের পিলারে। কোডটি নিয়ে রাজা হাম্মুরাবি ছিলেন খুবই স্ট্রিক্ট। হাম্মুরাবি কোডের মূল নীতি ছিল ‘চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত’। নিয়ম-নীতিগুলোর দেখাশোনা করতেন জাজ ও আমলারা। যাদেরকে বেঁছে নেওয়া হতো সমাজের উঁচু স্তর থেকে। এই হাম্মুরাবি কোডই পরবর্তীতে আমাদের আধুনিক সমাজের নিয়ম-নীতির ফাউন্ডেশন হিসেবে কাজ করেছে।


৩. নারীদের জন্য লিবারেল সমাজ

ব্যাবিলনীয় সমাজে নারীরা তুলনামূলকভাবে অনেক সম্মানের অধিকারী ছিল। তারা চাইলে মন্দিরের প্রিস্ট হতে পারতো, পারতো ওয়াইন বেচতে। নিজস্ব ব্যবসা খুলতেও বাঁধা ছিল না তাদের। যদিও ঘর-সংসারের কাজ তারা ঠিকই করতো। ব্যাবিলনীয় সমাজে কোন নারীর স্বামী মারা গেলে তার সম্পত্তির অর্ধেক ভাগ পেত সেই নারী।


৪. অতুলনীয় আর্ট ও আর্কিটেকচার

ব্যাবিলনীয় আর্ট ছিল একইসাথে খুবই সুন্দর ও ইউনিক। তারা জুয়েলারি মেকিং এর মতো ছোট স্কেলের আর্টের পাশাপাশি আর্কিটেকচারের মতো বড় স্কেলের আর্টেও ছিল সমান পারদর্শী। রাজা হাম্মুরাবির আমলে তাদের প্রধান দেবতা মারদুকের উদ্দেশ্যে ‘এতেমেনানকি’ নামক একটি জিগুরাত মন্দির বানানো হয়েছিল। যার উচ্চতা ছিল ৩০০ ফুট! একে বলা হত ‘দ্য ফাউন্ডেশন অফ হেভেন অ্যান্ড আর্থ’। এছাড়াও বিশ্ববিখ্যাত ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগান, ইশতার গেট, লায়ন অফ ব্যাবিলন তো রয়েছেই।



৫. ব্যবসা-বানিজ্য

ব্যবসা-বানিজ্যেও ব্যাবিলনীয়রা ছিল সমান দক্ষ। তারাই প্রথম বারের মতো ক্রয়-বিক্রয় চুক্তির ধারণা নিয়ে আসে। এমনকি চুক্তিতে সিল করার ব্যাপারটিও তারাই প্রথম বের করে। তারা নিয়মিত সোনা, রূপা, কপার, কাঠ, লবণ ও পাথর ইমপোর্ট করতো। এবং শস্য, মাটির পাত্র, তেল ও পোশাক এক্সপোর্ট করতো।


৬. শিক্ষা ও সাহিত্য

ব্যাবিলনে শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল নারী-পুরুষ সকলের জন্যই। রাজা হাম্মুরাবি প্রথমবারের মতো স্কুল তৈরি করেছিল ব্যাবিলনে। এমনকি অনেক এক্সপার্টের মতে ব্যাবিলনে লাইব্রেরিও ছিল। তারা মূলত সুমেরিয়ানদের মতোই কাদামাটির ট্যাবলেটে হাড় ও বাঁশ ব্যবহার করে কিউনিফর্ম পদ্ধতিতেই লিখত। তারাও সুমেরিয়ান এই প্রবাদটিতে বিশ্বাসী ছিল – ‘স্কুলের লেখাপড়ায় যারা ভালো করবে, ভোরের আলোর মতোই তাদের জীবনটাও আলোকিত হয়ে উঠবে।’

অনেকের মতে গিলগামেশের মহাকাব্য লেখা হয়েছিল ব্যাবিলনেই। ব্যাবিলনের আরো একটি বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম এনুমা এলিস মিথোলজি।


৭. ধর্মীয় বিশ্বাস

ব্যাবিলনের মানুষরা পলিথিজমে বিশ্বাসী ছিল। অর্থাৎ একাধিক দেবতা ও দেবীতে বিশ্বাসী ছিল তারা। মারদুক ছিল তাদের প্রধান দেবতা। তাকে তারা পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা মানত। এছাড়াও জনপ্রিয় ছিল সূর্যদেবতা সামাশ, কৃষিদেবতা দুমুজিদ ও প্রধান দেবী ইশতার, যাকে তারা মা হিসেবে শ্রদ্ধা করতো। বিখ্যাত স্থাপত্য ইশতার গেটও তার নাম অনুসরণেই রাখা হয়েছিল।

মানুষজন জুগুরাতে গিয়ে প্রার্থনা করতো। এসবের জুগুরাতের টপ ফ্লোরে থাকতো প্রিস্টরা। তারা ধর্মকর্ম পরিচালনার পাশাপাশি ভবিষ্যতবাণীও করতো।

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!