ছোটবেলা থেকেই নাচে বেশ পারদর্শী ছিলেন অঞ্জনা রহমান। আর সেই সুবাদে দেশের নানা মঞ্চ থেকে নৃত্য পরিবেশনের জন্য তাকে আমন্ত্রণ করা হতো। ৯ বছর বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলে নৃত্য পরিবেশন করতে গিয়ে নায়ক সোহেল রানার নজরে পড়েন অঞ্জনা। সোহেল রানা অঞ্জনার নাচের বেশ প্রশংসাও করেন। কেটে যায় বেশ কয়েক বছর। অঞ্জনার বয়স তখন ১৪ বছর। এক অনুষ্ঠানে গিয়ে আবার তার সাথে দেখা হয় সোহেল রানার। অঞ্জনার নাচ এবং রূপে মুগ্ধ হয়ে সোহেল রানা তাকে প্রস্তাব দেন সিনেমায় অভিনয় করার। আর সেই প্রস্তাবে রাজীও হয়ে যায় অঞ্জনা।
সেসময় সোহেল রানা বাংলা সিনেমার বেশ ভালো
একজন প্রযোজক। তার প্রযোজিত
‘দস্যু বনহুর’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়েই অঞ্জনার চলচ্চিত্রে অভিষেক। এক সাক্ষাৎকারে এসে
নায়িকা অঞ্জনা বলেন, ‘পারভেজ ভাই আমার চলচ্চিত্র জীবনের গুরু, তিনিই আমাকে হাত ধরে
চলচ্চিত্রে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু ‘দস্যু বনহুর’ সিনেমায় সাইন করার আগের দিন বাবুল চৌধুরীর
‘সেতু’ নামে একটি চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হই। শুটিংও শুরু করি। পরে অবশ্য পারভেজ ভাই
কথা বলেন বাবুল চৌধুরীর সঙ্গে। কারণ, পারভেজ ভাই চেয়েছিলেন তাঁর চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়েই
যেন আমার অভিষেক হয়। এরপর ‘দস্যু বনহুর’ ছবির শুটিং দ্রুত শেষ করে মুক্তি দেন।’
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
কথায় কথায় অঞ্জনা জানান যে নিজের অভিনীত প্রথম সিনেমা দেখতে তিনি
গুলিস্তান সিনেমা হলে যান। সাথে ছিলেন নায়ক সোহেল রানা। তিনি অঞ্জনাকে কিছু কৌশল শিখিয়েছিলেন
যে, হলের সামনে গাড়ি থেকে নামার পরে দর্শকদের হাত নেড়ে অভিবাদন জানাতে হবে। আরও অনেক
কিছুই শিখিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানান অঞ্জনা নিজেই। সোহেল রানার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
করে অঞ্জনা জানান, ‘আজ আমার এই নাম–যশ–খ্যাতি–অর্থ–বিত্ত–সম্পদ সবকিছুই আপনার জন্য।
আপনার এই ঋণ কোনো দিন শোধ করার মতো নয়। পারভেজ ভাই, আপনার কাছে আমি চিরঋণী’।
শাবানার প্রতি কেনো অঞ্জনার এত রাগ?
১৯৮০ সালে মুক্তি পাওয়া বাংলা সিনেমা “ছুটির ঘন্টা” সেসময়ে বেশ জনপ্রিয়তা
অর্জন করে। বিশেষ করে এই সিনেমায় অভিনয় করা রাজ্জাকের চরিত্রের প্রতি দর্শক আলাদা একটা
টান অনুভব করেছিলো। এই সিনেমায় রাজ্জাকের পাশাপাশি অভিনয় করে নায়িকা শাবানাও বেশ প্রশংসিত
হন। কিন্তু হয়তো অনেকেরই অজানা যে সিনেমায় শাবানার চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিলো নায়িকা
অঞ্জনার। এ বিষয়ে অঞ্জনা জানান যে তিনি ‘ফিল্ম পলিটিক্সের স্বীকার হয়েই সিনেমা থেকে
বাদ পড়েছেন। কেননা সিনেমার জন্য প্রথমে তাকে সাইন করানো হয়েছিলো। সিনেমার মহরতেও তিনি
ছিলেন। এমনকি চারদিন শ্যুটিং-ও করেছেন। পরবর্তীতে পরিচালকের সাথে সখ্যতা করে নায়িকা
শাবানা অঞ্জনার থেকে চরিত্রটিকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। এমনটাই দাবী করেন নায়িকা অঞ্জনা।
তিনি আরো জানান, এই সিনেমার জন্য প্রযোজক সত্য সাহা তাকে যে সাইনিং মানিটা দিয়েছিলেন,
সেটা তিনি আর ফেরত নেননি। তবে হ্যা, প্রযোজক পরবর্তীতে তার অন্য একটি সিনেমা “গুনাইবিবি”-তে
অঞ্জনাকে কাস্ট করেন।
নায়িকা অঞ্জনার চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ারের শুরুটা ‘দস্যু বনহুর’ সিনেমার
মাধ্যমে হলেও, তিনি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন পরিচালক আজিজুর রহমানের ‘অশিক্ষিত’ সিনেমার
মাধ্যমে। আর এই আজিজুর রহমান ছিলেন ‘ছুটির ঘণ্টা’ সিনেমার পরিচালক।