২০০৯ এর ৯ই আগস্ট। এবিসি চ্যানেলে প্রচার শুরু হয় শার্ক ট্যাঙ্ক আমেরিকার প্রথম সিজন। এরপর থেকেই শার্ক ট্যাঙ্ক নামটি একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়। তবে শার্ক ট্যাঙ্ক আমেরিকা কিন্তু প্রথম না। এই স্ট্রাকচারের শো প্রথম আয়োজন করে জাপানের নিপ্পন টিভি। ২০০১ সালে তারা ড্রাগন্স ডেন নামক রিয়েলিটি শো শুরু করে। সেই শোয়েরই আমেরিকান ভার্সন এই শার্ক ট্যাঙ্ক। এমনকি শোয়ের নামে শার্ক উল্লেখ করার দিক দিয়েও আমেরিকা প্রথম না। ২০০৬ সালে ড্রাগন্স ডেনের ইসরায়েলে ভার্সনে নাম চেঞ্জ করে রাখা হয় ‘হাক্রিশিম’। হিব্রু এই শব্দের ইংরেজি অর্থ ‘দ্য শার্কস’। যাই হোক, পৃথিবীজুড়ে ৪০টিরও বেশি দেশে এই শো তৈরি হয়েছে। তারই কন্টিনিউয়েশন হিসেবে শুরু হতে যাচ্ছে শার্ক ট্যাঙ্ক বাংলাদেশ। দেশের শীর্ষস্থানীয় এন্টারটেইনমেন্ট প্ল্যাটফর্ম বঙ্গ রিসেন্টলি সনি এন্টারটেইনমেন্ট-এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। শো-এর টাইটেল স্পন্সর রবি এবং পাওয়ারড বাই স্পন্সর স্টার্টআপ বাংলাদেশ, ব্যাংকিং পার্টনার প্রাইম ব্যাংক, স্ন্যাকস পার্টনার অলিম্পিক ফুডি ইনস্ট্যান্ট নুডুলস, বেভারেজ পার্টনার সানকুইক এবং ব্রডকাস্টিং পার্টনার হিসেবে থাকছে দীপ্ত টিভি।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
শার্ক ট্যাঙ্কে শার্ক হিসেবে দেশের পাঁচজন বড় বড় ইনভেস্টর
থাকবেন। তাদের সামনে দেশের উদ্যোক্তারা বিভিন্ন স্টার্ট আপ বিজনেস আইডিয়া নিয়ে
হাজির হবে। তবে একদমই নতুন আইডিয়া নিয়ে আসলে হবে না। সেই বিজনেস কিছুটা হলেও
স্টেবল হতে হবে। যেন ইনভেস্টররা ভরসার জায়গাটি খুঁজে পায়। শার্ক ট্যাঙ্ক ভক্তরা
এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সেই পাঁচজন ইনভেস্টরের নাম জানার জন্যে। বঙ্গ বিডির
তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তারা অলরেডি দেশের পাঁচজন সফল বিজনেস লিডারকে ইনভেস্টর জাজ
হিসেবে ফাইনালাইজড করে ফেলেছে। কিন্তু এখনই তারা নাম প্রকাশ করতে ইচ্ছুক না।
সময়মতো সব কিছু জানানো হবে।
শার্ক ট্যাঙ্ক ইন্ডিয়ার মাধ্যমে আশনীর গ্রোভার, পিয়ুষ
বানসাল, আমান গুপ্তার মতো ইনভেস্টর শার্করা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। শোতে
তাদের অ্যাক্টিভিটিজ ভক্তদের খুবই পছন্দ হয়েছে। বাংলাদেশের ফ্যানরাও নিশ্চয়ই
তাদেরই মতো শার্কই এক্সপেক্ট করছে শার্ক ট্যাঙ্ক বাংলাদেশে। চলুন দেখে আসা যাক
কাদের মধ্যে সেই পোটেনশিয়াল আছে।
নাম্বার ওয়ান –
ইরেশ জাকের (এশিয়াটিক 360)
প্রথমেই বলতে হয় ইরেশ জাকেরের কথা। তার বাবা লেজেন্ডারি
অভিনেতা আলী জাকেরের তৈরি করা প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটি এর ম্যানেজিং
ডিরেক্টর এখন তিনিই। যেহেতু ইরেশ জাকের একজন জনপ্রিয় অভিনেতাও, তাই তাকে শার্ক
বানালে শো এক্সট্রা এক্সপোজারও পাবে।
নাম্বার টু –
হুসেইন ইলিয়াস (পাঠাও)
বাংলাদেশের সবথেকে জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং কোম্পানি পাঠাও।
২০১৫ তে শুরু হওয়া এই কোম্পানির বর্তমান ভ্যালুয়েশন প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার। তাই
হসেইন ইলিয়াসকে হয়তো দেখা যেতে পারে বাংলাদেশী শার্ক হিসেবে।
নাম্বার থ্রি – আফিফ
জামান (শপআপ)
মাইক্রো, স্মল এবং মিডিয়াম সাইজড এন্টারপ্রাইজের জন্য
বর্তমানে বাংলাদেশের সবথেকে বড় বিটুবি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম শপআপ। আফিফ জামান
প্রথম শুরু করেন ২০১২ সালে। তখন প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল আইস নাইন। গত বছর শপআপ সাউথ
এশিয়ান মার্কেটে সবথেকে বড় ফান্ডিং তোলে। যার টোটাল ভ্যালুয়েশন ছিল ৭৫ মিলিয়ন
ডলার!
নাম্বার ফোর – তানভীর
মিশুক (নগদ)
নগদ বাংলাদেশের মোবাইল বেইজড ডিজিটাল আর্থিক সেবা
প্রদানকারী জনপ্রিয় একটি প্রতিষ্ঠান। নগদের ফাউন্ডার এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর
তানভীর মিশুকের মতে কোম্পানিটির বর্তমান ভ্যালুয়েশন প্রায় এক বিলিয়ন ডলার! এছাড়াও
মাঝেই মাঝেই দেখা যায় দেশের সুপারস্টার ক্রিকেটারদের হাত দিয়ে নগদ ইউজারদের মধ্য
থেকে ভাগ্যবান ব্যক্তিদের বিশাল বিশাল সব উপহারও দেওয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে
বিএমডব্লিউ গাড়িও।
নাম্বার ফাইভ –
মালিহা কাদির (সহজ)
মালিহা কাদির অনলাইন টিকিট বিক্রি প্রতিষ্ঠান সহজ ডট কমের
ফাউন্ডার এবং সিইও। ২০২০ এ বিজনেস ফাইন্যান্সিং ইউকে একটি লিস্ট পাবলিশ করে।
সেখানে বাংলাদেশের সেরা নারী উদ্যোক্তা নির্বাচিত হন মালিহা কাদির। ২০১৪ তে লঞ্চ
হওয়া কোম্পানিটির বর্তমান ভ্যালুয়েশন প্রায় ৭৫ মিলিয়ন ডলার।
নাম্বার সিক্স –
সোনিয়া বশির কবির (এসবিকে টেক ভেঞ্চার)
এসবিকে টেক ভেঞ্চার আরো আগে থেকেই বিভিন্ন সম্ভাবনাময়ী
স্টার্টআপ বিজনেসে ইনভেস্ট করে আসছে। কোম্পানিটির ফাউন্ডার এবং সিইও সোনিয়া বশির
কবির। এর আগে তিনি শার্ক ট্যাঙ্কের মতোই অনেকটা সিমিলার স্টাইলের শো আর
ভেঞ্চার্সেও জাজ হিসেবে ছিলেন। যেখান থেকে উঠে এসেছে শাটলের মতো কোম্পানি।
নাম্বার সেভেন – সাকিব আল হাসান (মাস্কো সাকিব ক্রিকেট অ্যাকাডেমি)
লাস্ট, বাট নট দ্য লিস্ট। দি ওয়ান অ্যান্ড ওনলি, সাকিব আল
হাসান। সাকিবের মধ্যে যে র স্যাভেজনেস আছে, একমাত্র ওর দ্বারাই সম্ভব বাংলাদেশী
আশনীর গ্রোভার হওয়া। আমাদের সাধারণ দর্শকদের জন্যেও বেশ উপভোগ্য হবে ব্যাপারটা।
তবে নিজের ক্রিকেটীয় ও রাজনৈতিক ব্যস্ততার মধ্যে তাকে শার্ক হিসেবে দেখা হয়তো
সম্ভব হবে না। তবুও আশা রাখতে দোষ কি?