২৩ ২৪ বছর বয়সের একটা ছেলে। সবেমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। তবে তার ধ্যান-জ্ঞান জুড়ে সিনেমা। এক পরিচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করে ইতোমধ্যে নিজেকে বেশ গুছিয়ে নিয়েছে। নিজের প্রথম সিনেমায় তার পছন্দের নায়িকা শাবনুর। কিন্তু তখনকার সময়ে বাংলা সিনেমা দখল করে রাখা শাবনুর কি তাকে পাত্তা দিবে?
মনে এই শঙ্কা নিয়ে যখন সেই তরুন শাবনুরের কাছে গেলো তার সিনেমার অফার নিয়ে, অবাক করা বিষয় হলো অল্প বয়েসী এই ছেলেটাকে শাবনুর ৪০ দিনের শিডিউল দিয়ে দিলেন। সেই ছেলেটি ছিলেন “মোস্তাফিজুর রহমান মানিক”। তার প্রথম সিনেমা ‘দুই নয়নের আলো’।
এক সাক্ষাৎকারে মানিক বলেন, “আমি ‘ভালোবাসা কারে কয়’ নামের একটি সিনেমার সহকারী হিসেবে কাজ করি। সেই সিনেমার নায়িকা ছিলেন শাবনূর। তখন থেকেই তাকে চিনতাম। পরে একদিন আপাকে বললাম, আপনাকে নিয়ে আমি একটি সিনেমা বানাব। তিনি কোনো গুরুত্বই দিলেন না। কিন্তু আমার গল্পের জন্য তাকেই দরকার। উপায় না পেয়ে আমার বস জাকির হোসেন রাজু ভাইকে বললাম।
সব শুনে রাজু ভাই শাবনূরকে ফোন দিয়ে বললেন, ‘আমি একটি সিনেমা বানাব। তোমার সঙ্গে একটি ছেলে দেখা করবে’। তারপর আমি শাবনূরের বাসায় গেলাম। তাকে গল্প শোনালাম। গল্প ও গানগুলো শুনে আপা দারুণ খুশি। পরে জানতে চাইলেন, ‘সিনেমা বানাবে কে?’ বললাম, আমি। শুনে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
এরপর শাবনূর টানা ৪০ দিন শুটিংয়ে শিডিউল দিলেন। এক বছর পরে, এপ্রিল-মে মাসে শুটিং হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান মানিক একদিন শাবনূরকে বললেন, একটি দৃশ্য আছে সর্ষেখেতের মধ্যে। ডিসেম্বরে সেই দৃশ্যের শুটিং করলে ভালো হয়। এদিকে শাবনূর যাবেন অস্ট্রেলিয়া। দুই দিন শাবনূর শিডিউল দিলেন। কিন্তু দুই দিনই কুয়াশায় শুটিং করা গেল না। পরে আরেক দিন সকাল আটটায় শাবনূর শিডিউল দিলেন। পরিচালক দোটানায় পড়ে গেলেন। তিনি শুনেছিলেন শাবনূর সকালে ঠিকমতো শুটিংয়ে যান না। পরে দেখলেন ঠিক সময়ে প্রস্তুত হয়ে আছেন এই চিত্রনায়িকা। সেই শুটিং ১২টার শেষ হলো। পরে পরিচালক শাবনূরকে বললেন, ২টার মধ্যে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে। আজ তার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। শুনে শাবনূরই ঠিকমতো পরিচালককে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছে দিলেন। শুটিংয়ের প্রথম দিনের এই ঘটনাই পরিচালককে ভালো কাজের অনুপ্রেরণা দিয়েছিল।
মোস্তাফিজুর রহমান মানিক বলেন, “তখন শাবনূরের শিডিউল পাওয়া অনেক কঠিন ছিল। প্রথম দিনের শুটিং করতে গিয়ে দেখলাম তিনি অনেক কো-অপারেটিভ একজন অভিনেত্রী। তখনই মনে হয়েছিল আমাদের কাজটি ভালো হবে। তিনিসহ সব সহকর্মীর সহযোগিতা আমাকে আশাবাদী করেছিল। সেই সিনেমা থেকে শাবনূর তার ক্যারিয়ারের প্রথম ও একমাত্র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়াটা আমার জন্য ছিল দারুণ আনন্দের খবর। এটা তাঁর জন্য কাঙ্ক্ষিত পুরস্কার ছিল। আমি একবার শাবনূরের জন্মদিনে তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনার বিশেষ এই দিনে কী উপহার দেব। শুনে শাবনূর বলেছিলেন, আপনি আমার জীবনের বড় উপহারটি দিয়েছেন”।
শাবনূরের ক্যারিয়ারে অনেক বাণিজ্যসফল ও সমালোচক প্রশংসিত সিনেমা থাকলেও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন মাত্র একবার। এটি ছিল ২০০৫ সালে ‘দুই নয়নের আলো’ সিনেমার জন্য।