৪টি অবিশ্বাস্য শিল্পকর্ম, যা হারিয়ে যাওয়ার পর আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। Priceless Lost Artifacts

Author
0

 

ইতিহাসের পরতে পরতে এমন অনেক অমূল্য আর্টিফ্যাক্ট রয়েছে যা হারিয়ে গেছে। যার মধ্যে অনেকগুলোরই রয়েছে কালচারাল, হিস্টোরিকাল কিংবা আর্টিস্টিক গুরুত্ব। এর মধ্যে কিছু আর্টিফ্যাক্টস পুনরায় খুঁজে পাওয়া গেছে, কিছু যায় নি। আজ কথা বলবো হারিয়ে যাওয়া সেসব অমূল্য আর্টিফ্যাক্টস নিয়ে।

 

পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



১. দ্য আর্ক অফ কোভেনেন্টঃ একটি সিন্দুকের মতো, যা বানানো হয় বাবলা তথা অ্যাকাসিয়া গাছের কাঠ থেকে, লম্বায় আড়াই ফুট এবং প্রস্থে ও উচ্চতায় দেড় ফুট। পুরো বাক্সটির ভেতর ও বাইরে সোনার পাত দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়। সিন্দুকটির নিচের ভাগে লাগানো হয় চারটি সোনার রিং, যার মধ্য দিয়ে বাবলা গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি এবং সোনায় মোড়ানো দুটো দণ্ড প্রবেশ করানো হতো যাতে একে বহন করা যায়। ইহুদীদের প্রাচীন ইতিহাসের বর্ণনামতে, কেহাথ-এর পরিবার এবং লেভাই নামক গোত্রই এই আর্ক অফ দ্য কভেনেন্ট বহন করত।

আর্ক অফ দ্য কভেনেন্টের ভেতরে কী ছিল, তা নিয়ে খানিকটা বিতর্ক আছে। তবে প্রচলিত মতে, এই সিন্দুকের ভেতরে বনি ইসরাইলদের নবী হযরত মুসা (আ) তাঁর স্রষ্টার কাছ থেকে পাওয়া দশটি আদেশ সম্বলিত দুটি প্রস্তরখণ্ড রাখা ছিল। বলা হয়ে থাকে, এই দুটি প্রস্তরখণ্ডের উপর স্রষ্টা নিজেই লিখেছিলেন।

৫৮৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্যবিলনীয়রা জেরুজালেম দখল করে ফেলার পরে এটি আর খুঁজে পাওয়া যায় নি।

 

২. রোসেটা স্টোনঃ আলেক্সান্দ্রিয়ার ৩৫-৪০ মাইল পূর্বে নীলনদের পশ্চিম তীরের কাছে রাশিদ শহর, ইউরোপিয়ানরা যাকে বলে রোসেটা। এর নিকটেই অটোমান আমলে নির্মিত এক দুর্গ, ফোর্ট জুলিয়ান। নেপোলিয়নের সেনাবাহিনীর কর্নেল দোপুর নেতৃত্বে সেনারা এখানকার প্রতিরক্ষা জোরদার করছিল। পুরনো দেয়াল আর খিলান ভেঙে চলছিল নতুন করে মজবুত কাঠামো তৈরির কাজ। হঠাৎ ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পসের লেফটেন্যান্ট পিয়ের ফ্রাঁসো বুঁশ্যার চোখ আটকে গেল একটা বিশেষ পাথরের উপর। কালো ব্যাসাল্টের এই পাথরে হিজিবিজি কী যেন লেখা। তারা উপলব্ধি করলেন এটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু হতে পারে। অবিলম্বে তারা রোসেটাতে থাকা লেখাটি ফরাসি জেনারেল মেন্যুর কাছে বার্তা পাঠালেন।

এটি ১৭৯৯ সালে আবিষ্কৃত হয়। প্রাচীন মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক্স পাঠোদ্ধারে রোসেটা স্টোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নেপোলিয়নের মিশর আক্রমণের সময় এটি হারিয়ে যায়। এরপরে বৃটিশরা এটি খুঁজে পায়। কিন্তু আরো একবার হারিয়ে যায় এই রোসেটা স্টোন। বর্তমানে এটি নিখোঁজ অবস্থায় আছে।

৩. দ্য অ্যাম্বার রুমঃ দ্য অ্যাম্বার রুল ছিল রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গের ক্যাথেরিন প্যালেস অফ জার্সকোয়ে সেলোতে অবস্থিত একটি ঐশ্ব্যর্যশালী চ্যাম্বার। যেখানে ছিল অ্যাম্বার প্যানেল, স্বর্ণের পাতা এবং আয়না। অ্যাম্বার মূলত গাছের নিঃসৃত রস জমে তৈরি হওয়া একরকম পদার্থ। বাতাস,  ঝড়ঝঞ্ঝা বা কোনো আঘাতে গাছের বাকল ফেটে একপ্রকারের রস বেরিয়ে আসে। সূর্যতাপে এর উদ্বায়ী অংশটুকু বাষ্পীভূত হয়ে গেলে যা পড়ে থাকে তা বহু বছর ধরে আস্তে আস্তে জমাট বেধে ফসিলের রূপ নেয়। এই সময়ের মধ্যে এর মাঝে ছোট ছোট পোকামাকড়ও আটকে যেতে পারে। জুরাসিক পার্ক চলচ্চিত্রের কথা মনে পড়ে? সেখানে একখণ্ড অ্যাম্বারের ভেতর থাকা মশার থেকেই কিন্তু ডাইনোসরের ডিএনএ বের করা হয়েছিল।

অ্যাম্বার হতে পারে স্বচ্ছ বা অস্বচ্ছ। আকার আর রঙের বেলাতেও ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। হলুদাভ থেকে শুরু করে দুধসাদা, কমলা, বাদামি, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে লাল অ্যাম্বারও পাওয়া যায়। রত্নপাথর হিসেবে গাঢ় স্বচ্ছ বা ঈষদচ্ছ অ্যাম্বারের বিরাট চাহিদা আছে। কারণ এর এই রকম অ্যাম্বার খুব সহজলভ্য নয়। দুর্ভাগ্যবশত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে নাৎসী বাহিনী এটি ভেঙ্গে ফেলে। এরপরে আর এর কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় নি।

৪. দ্য হলি গ্রেইলঃ দ্য হলি গ্রেইল ধর্মীয় কিংবা মিথোলজিকাল দিক থেকে খুবই গুরুত্ব বহনকারী একটি আর্টিফ্যাক্ট। হলি গ্রেইল নিয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় ধারণাটি হলো, এটি হচ্ছে একধরনের পানপাত্র যা যিশুখ্রিস্ট তার ‘লাস্ট সাপারে’ ব্যবহার করেছিলেন। এমন বিশ্বাসও রয়েছে, পরবর্তীতে এতে যিশুর রক্তও সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল। হলি গ্রেইলের পেছনে ছোটা মানুষেরা একে নিয়ে গিয়েছে পবিত্র ভূমি থেকে ইউরোপে, এমনকি ব্রিটেনেও নাকি হলি গ্রেইল ইতিহাসের কোনো একসময়ে ছিল। একে রক্ষা করতে গঠন করা হয়েছিল বিভিন্ন গোপন সংগঠন, এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত বোধহয় ফিশার কিং এবং নাইটস টেম্পলাররা। তবে যুগ যুগ ধরে এর ব্যাপারে কথা চলে আসলেও হলি গ্রেইল আসলেই ছিল কিনা তার উপযুক্ত কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি।

 

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!