২০শে জুলাই, ১৯৬৯ সাল। নাসার তৈরী ‘অ্যাপোলো ইলাভেন’ নামক একটি
মহাকাশযানে চড়ে মার্কিন নভোচারি নীল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন চাঁদে অবতরণ করেন।
এটা ছিল একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত এবং লাখ লাখ মানুষ ছিলেন এই ঘটনার সাক্ষী। তবে পৃথিবীতে
এখনো বহু মানুষ আছে যারা বিশ্বাস করেন যে চাঁদে অবতরণ একটি সাজানো নাটক ছাড়া কিছু না।
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা ‘নাসা’ এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে জরিপ চালিয়েছে।
দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় পাঁচ শতাংশ মানুষ চাঁদে অবতরণের এই ব্যাপারটিকে সাজানো
ঘটনা বলে মনে করে। সংখায় এরা কম হলেও ঐতিহাসিক এই ঘটনা নিয়ে মানুষের মনে অবিশ্বাস জিইয়ে
রাখতে এতটুকুই যথেষ্ট।
চাঁদে মানুষ যাওয়ার ব্যপারটিকে পুরোপুরি ধাপ্পাবাজি বলে যাদের
দাবী, তারা এর সপক্ষে বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরেন। এরা মনে করেন সেসময় মার্কিন মহাকাশ
গবেষণা সংস্থা নাসা'র কাছে তেমন কোনো প্রযুক্তিই ছিল না, যা এই সফল অভিযানের জন্য দরকার
ছিল।
নিল আর্মস্ট্রং চাঁদের বুকে পা দিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসার প্রায়
সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ডালপালা ছড়াতে থাকে।
১৯৭৬ সালে একটি বই প্রকাশ হওয়ার পর এসব তত্ত্ব আরো বেশি শক্তপোক্ত হতে শুরু করে। বইটির লেখক ‘বিল কেসিং’ একজন সাংবাদিক। তার বইটির নাম ছিল, "উই নেভার ওয়েন্ট টু মুন: আমেরিকাস থার্টি বিলিয়ন ডলার সুইন্ডল" লেখকের মূল বক্তব্য হচ্ছে, মানুষ কখনো চাঁদে যায়নি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আসলে তিন হাজার কোটি ডলারের প্রতারনা করা হয়েছে।
চাঁদে অবতরণ ভুয়া ছিল বলে লোকেরা বিশ্বাস করার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে একটি কারণ হল চাঁদে তোলা কোনো ছবি বা ভিডিওতে কোনো তারকাপুঞ্জ নেই। এর কারণ, চাঁদে অবতরণের দৃশ্য একটি স্টুডিওতে ভিডিও ধারণ করা হয়েছিল বলে অনেকের দাবী। চাঁদে অবতরণকে ভুয়া বলে বিশ্বাস করার আরেকটি কারণ হ'ল চাঁদে বাতাস না থাকলেও আমেরিকান পতাকা বাতাসে দোলাচ্ছে বলে মনে হয়। এর কারণ কি? এর কারণ হিসেবে যুক্তি দাড় করানো হয়, পতাকাটি আসলে একটি তার দ্বারা ধরে রাখা হয়েছিল, যা পরে ফুটেজ থেকে এডিট করে সরানো হয়েছিল। চাঁদে অবতরণ যে ভুয়া ছিল এমন যুক্তি থাকা সত্ত্বেও, তার কোনও নিশ্চিত প্রমাণ এখনো অব্দি নেই। এই নিয়ে এখনো পর্যন্ত বহু যুক্তি তর্ক চলছে।
চাঁদে অবতরণ বাস্তব হওয়ার পক্ষে কিছু যুক্তি দেখানো হয়। উদাহরণস্বরূপ, চাঁদে অবতরণের হাজার হাজার ফটোগ্রাফ এবং ভিডিও রয়েছে, যা একাধিক ক্যামেরা দ্বারা তোলা হয়েছে। এই ছবি বা ভিডিওগুলোতে চাঁদের পৃষ্ঠকে স্পষ্ট দেখা যায়। এছাড়াও, চাঁদে অবতরণের আরো কিছু প্রমাণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে পাথর, মাটি এবং পায়ের ছাপ। এই প্রমাণগুলো বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করেছেন এবং তাদের মতে মহাকাশচারীরা চাঁদে অবতরণ করেছিলো।
আবার কারোও কারোও মতে চাঁদে অবতরণ এর এই নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছিল মার্কিন ঘাটি ‘এরিয়া ফিফটি ওয়ান’এ। যে ঘাটিটি এতোটাই সুরক্ষিত যে কোনও সাধারণ মানুষকে সেখানে কখনও ঢুকতে দেয়া হয় না। এমনকি এই ঘাটির পাশ দিয়েও কেউ গেলে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
চাঁদে অবতরণ বাস্তব হওয়ার পক্ষে এবং বিপক্ষে প্রমাণগুলি জটিল এবং
বহুমুখী। চাঁদে অবতরণ যে বাস্তব বা নকল ছিল এমন কোন নিশ্চিত প্রমাণ নেই এবং এটি যে
একটি প্রতারণা ছিল তা নিয়ে আগামী বহু বছর ধরে বিতর্ক রয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।