এনটিভির পপুলার শো “ইন্ডিয়াজ মোস্ট হন্টেড” এর পরিচালক রকি সিং ও ময়ুর
শর্মা। একদিন তারা যান রাজস্থানের
এক পরিত্যাক্ত রাজ প্রাসাদে। সারাদিন
ধরে প্রাসাদের বিভিন্ন জায়গায় ফিট করেন নাইট ভিউ ক্যামেরা। কিন্তু
অদ্ভুত কিছু শব্দ আর গা হিম করা পরিবেশে তারা কিছুতেই আলাদা হয়ে থাকতে পারেন না। বাধ্য
হয়ে বেড়িয়ে আসেন প্রাসাদ থেকে। পরদিন
ক্যামেরাগুলো সংগ্রহ করে দেখা যায়, পুরো রাত জুড়ে নাইট ভিশনের
সেনসর একদমই কাজ করেনি, আবার দিন হতেই সেনসর ঠিক হয়ে গেছে। বলছি
ইন্ডিয়ার রাজস্থানের ভানগড় গ্রামে অবস্থিত ভানগড় দুর্গের কথা।
কেন ভানগড়ের দূর্গকে শাপিত বা কার্সড বলা হয়? সন্ধ্যা থেকে সকাল হওয়ার আগ পর্যন্ত কেনো সেখানে অবস্থান করা নিষেধ? অন্ধকারে কেনইবা এই গ্রামে অবস্থান করা রীতিমত সরকারিভাবে নিষিদ্ধ? এখন কী অবস্থা এই ভানগড়ের দূর্গের?
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
ভানগড় দূর্গ, ভানগড়, রাজস্থানঃ
তো বন্ধুরা, যা বলছিলাম , আমরা সবাই জানি বাইরের দুনিয়ার কাছে রাজস্থান মূলত এর মরুভূমি আর প্রাসাদগুলোর জন্যই বিখ্যাত। প্রাসাদগুলো আবার আলাদা করে বিখ্যাত এদের ইতিহাস ও রয়্যালটির জন্য। শুরুতে যে ভানগড়ের প্রাসাদ বা দূর্গের কথা বলছিলাম সেই প্রাসাদের পাশাপাশি ভানগড়ে আরো ৯০০০ টি বাড়ি ছিল। কিন্তু হুট করেই ১৭২০ সালে সম্পূর্ণ ভানগড় গ্রামটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ৪০০ বছরের পুরনো এই ধংসাবশেষ নিয়ে ইতিহাসবিদদের দুটি ভয়াবহ মতবাদ আছে।
কেনো শাপিত বা কার্সড?
যার মধ্যে একটি ‘গুরু বালুনাথের
কার্স’ নামে পরিচিত। কথিত আছে এখানে “গুরু বালু নাথ” নামক এক সন্ন্যাসী ধ্যান করতেন। তখনকার রাজা “মধু সিং” এর সেই জায়গাটি পছন্দ হয়। সে তার
রাজপ্রাসাদ বানাতে চায় সেখানে। গুরু বালু নাথ তাকে পারমিশন দেয় ঠিকই। তবে সাথে একটি শর্ত জুড়ে দেয়।
সেই প্রাসাদের ছায়া যেন তার বাড়ির উপরে এসে না পড়ে। রাজা মধু সিং সেই কথা মেনে
নেয়। কিন্তু তার এক উত্তরসূরী সেই শর্তকে পাত্তা না দিয়ে প্রাসাদটির উচ্চতা আরো
বাড়ায়। তখন সেই প্রাসাদের ছায়া এসে গুরু বালুনাথ এর বাড়ির উপরে পড়ে। এরপরেই গুরুর
অভিশাপে সম্পূর্ণ গ্রাম ধ্বংস হয়ে যায়। এর প্রভাব গিয়ে পড়ে গ্রামের অন্যান্য
বাড়িগুলোর উপরেও। ফলস্বরূপ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় সবগুলো বাড়ির ছাদ।
অন্য প্রবাদটির সাথে মিশে আছে
ব্ল্যাক ম্যাজিক। বলা হয়, ভানগড়ের রাজকুমারী রত্নাবতী ছিলেন অনন্য সুন্দরী। এক
তান্ত্রিক তাকে দেখে প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু রাজকুমারী তার প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া
না দিলে সে তার চুলে ব্যবহার করা তেলে কালো জাদু করে। যাতে করে রত্নাবতী তার
প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু রত্নাবতী তার সেই ফন্দি ধরে ফেলে। তেলের সেই বোতল নিয়ে সে
পাথরের উপরে ফেলে দেয়। এর ফলে সেই তান্ত্রিক মারা যায়। মারা যাওয়ার আগে সে পুরো
গ্রামের উপর কালো জাদু করে যায়। পরের বছর ভানগড়ের সাথে আজবগড়ের যুদ্ধ লাগে। সেই
যুদ্ধে ভানগড়ের বেশিরভাগ মানুষ মারা যায়।
সরকারি নিষেধাজ্ঞাঃ
বর্তমানে পুরো ভানগড় এলাকাটিই
পরিত্যক্ত। সেখানে কেউ থাকে না। যদিও অনেক পর্যটক জায়গাটি ঘুরে দেখতে যায়। তবে
সূর্যাস্তের পরে আর কাউকে ভেতরে অ্যালাউ করা হয় না। দুজন লোক একবার সন্ধ্যা হওয়ার
পরে দুর্গের পাঁচিল টপকে ভেতরে ঢুকেছিল। কিন্তু তারা আর কখনো ফিরে আসে নি। মারা গেছে কিনা তাও নিশ্চিত হওয়া যায় নি।
এরপর থেকে সরকারিভাবে নোটিশ দেওয়া
হয় সেই ‘অভিশপ্ত’ এলাকায় রাত কাটানো একেবারেই
নিষেধ। কেউ
নিষেধ অমান্য করলে জেল জরিমানাও হবার সম্ভাবনা আছে।
বর্তমানে ভানগড় দূর্গঃ
কিছুদিন আগেই আরো একটি ঘটনা ঘটে
সেখানে। তিনজনের একটি দল সরকারি নিষেধ অমান্য করে ভূতুড়ে অভিজ্ঞতা
নিতে লুকিয়ে সন্ধ্যার পর আলো জালিয়ে ঢুকে পড়ে দুর্গে।
একজন পুরো রাত সেখানে কাটিয়ে দিতে চায়। কিন্তু বাকিরা তাকে নিষেধ করে। কিন্তু
তিনি বাইরে আসতে রাজি হলেন না। তাকে রেখে বাকি দুজন অপেক্ষা করতে থাকলেন দূর্গের
বাইরে। পরদিন ভোরে তারা ভেতরে গিয়ে দেখে তাদের
সেই বন্ধুটি পড়ে আছে অর্ধমৃত অবস্থায়। তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে
যাওয়ার ব্যবস্থা করে তারা। কিন্তু তাদের গাড়িটি রাস্তায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সেই
দুর্ঘটনায় তারা তিনজনই মারা যায়।