বলুন তো পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে কিভাবে? এই প্রশ্নের উত্তরে বিভিন্ন ধর্মের মানুষরা হয়তো বিভিন্ন রকমের উত্তর দেবেন। বিজ্ঞানমনস্করা ডিরেক্ট বিগ ব্যাং থিওরির কথা বলবেন। তবে এই প্রশ্নের সবথেকে মজার মজার উত্তর পাওয়া যায় বিভিন্ন দেশের মিথলজির দিকে তাকালে। যেমনঃ চাইনিজ মিথে বলা হয়েছে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে ডিম থেকে! আফ্রিকার কুবা সম্প্রদায় আবার মনে করে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে তাদের দেবতা এমবম্বোর বমি থেকে। অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীদের মতে সবকিছুর সৃষ্টি হয়েছে সাপ থেকে!
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
আফ্রিকার কুবা সম্প্রদায়
মধ্য আফ্রিকার কুবা সম্প্রদায়ের
মধ্যে পৃথিবী সৃষ্টি নিয়ে প্রচলিত আছে মজাদার একটি মিথ। তাদের মতে, পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছিল বমি থেকে। হ্যা ঠিকই
শুনেছেন। তাদের দেবতা এমবম্বোর বমি থেকেই তৈরি হয়েছিল এই পৃথিবী।
শুরুতে পুরো পৃথিবী ডুবে ছিল
পানিতে। সেই পানিতেই পা ডুবিয়ে বসে ছিলেন এমবম্বো। হঠাৎ তার গা গুলিয়ে উঠে এবং সে
বমি করে দেয়। বমির ফলে তার পেট থেকে বের হয়ে আসে চাঁদ,
সূর্য ও তারা। সেই সূর্যের তাপে
ধীরে ধীরে বাষ্প হয়ে উড়ে যায় সব পানি। দেখতে
দেখতে ভেসে উঠে মাটি এবং সে বাষ্প ঘন হয়ে
সৃষ্টি হয় মেঘ।
এরপর আবারও গুলিয়ে উঠে এমবম্বোর
শরীর। আবারও বমি করেন তিনি। এবার তার পেট থেকে বেরিয়ে আসে ৯টি প্রাণী ও মানুষ। এই
৯টি প্রাণী থেকেই সৃষ্টি হয় বাকি সকল প্রাণীর।
চাইনিজ মিথলজি
চাইনিজ মিথ অনুসারে, বহু
বছর আগে যখন স্বর্গ ও নরক একসাথে যুক্ত ছিল, তখন সম্পূর্ণ ইউনিভার্স একটি ডিমের
মধ্যে ছিল। মহাবিশ্বের
সবকিছু সেই ডিমের মধ্যে ঘুরে বেড়াতো। সেখানেই জন্ম হয় ‘পানগু’ নামক এক দৈত্যের। ১৮,০০০ বছর ধরে পানশু সেই ডিমের মধ্যেই বড় হতে থাকে। এতদিন সে ছিল ঘুমিয়ে। এরপর
এক দিন তার ঘুম ভাঙ্গে। ঘুম থেকে উঠে হাই তুলে আড়মোড়া ভাঙ্গে সে। তখনই ডিমের খোলসও ভেঙ্গে যায়। এর ফলে ডিমের
ভেতরে থাকা সম্পূর্ণ ইউনিভার্স বেরিয়ে আসে।
আমরা মাঝে মাঝে মজা করে ধাঁধা
ধরি না? ডিম আগে নাকি মুরগি আগে? চাইনিজ মিথলজি অনুযায়ী ডিম শুধু মুরগিই না, ইউনিভার্সের
বাকি সবকিছুর আগে।
অস্ট্রেলিয়ান
আদিবাসী
আমরা বেশিরভাগ মানুষই সাপ ভয় পেলেও, আমাদের পাশের দেশ ইন্ডিয়ার অনেক জায়গাতেই সাপকে ভগবান মানা হয়। তেমনি অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরাও সাপকে দেবতা মানে। শুধু দেবতাই না, তারা সাপকে মনে করে সৃষ্টির দেবতা। তাদের মিথলজি অনুযায়ী, সৃষ্টির শুরুতে ঘুমের মধ্যে একটি স্বপ্নে আটকে ছিল পৃথিবী। সেই সময়ে মাটির নিচে শুধু একটি প্রাণী জেগে ছিল। একটি রংধনু সাপ। সেই সাপের পেটের মধ্যেই ছিল সমস্ত প্রাণী। এক সময় সে উপরে উঠে এসে সমস্ত প্রাণীকে পৃথিবীতে বের করে দেয় সে। যেসব প্রাণী তার কথা মতো চলতো তাদেরকে সে মানুষ বানিয়ে দিত। আর যারা শুনতো না তাদেরকে বানাতো পাথর। খাবারের ব্যবস্থার জন্যেও একটি অদ্ভুত নিয়ম করে সে। প্রত্যেক প্রাণিকে নির্দেশ দেয় একটি নির্দিষ্ট প্রাণিকে পূজা করার জন্যে। সেই প্রাণী বাদে বাকি সব প্রাণীকে মেরে খেতে পারবে তারা। অদ্ভুত হলেও অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীরা এগুলোই মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে।
নর্থ
অ্যামেরিকান মিথ
সাধারণত পৃথিবী সৃষ্টির বেশিরভাগ গল্পেরই শুরু হয় কোনো দেবতা কিংবা শক্তিশালী কারো মাধ্যমে। কিন্তু উত্তর আমেরিকার ‘চিরোকী ইন্ডিয়ানরা’ বিশ্বাস করে সবকিছুর শুরু হয়েছিল একটি পোকা থেকে! তাদের উপকথা অনুসারে প্রাণীরা বাস করতো আকাশের এক স্বর্গীয় রাজ্যে। নিচ দিয়ে বয়ে চলতো বিশাল এক সমুদ্র। একবার ডায়ুনিসি নামক এক পোকা ঠিক করলো ডুব দিয়ে পানির নিচে কী আছে তা দেখে আসবে। যেই ভাবা সেই কাজ! পানির তলদেশে গিয়ে সে দেখলো সেখানে আছে শুধু নরম কাদা। সে এই নরম কাদা নিয়ে উপরে উঠে এলো। পানির উপরে এসে সেই কাদা সবদিক দিয়ে বেড়ে পৃথিবীর রূপ নিলো। নতুন সৃষ্টি হওয়া এই পৃথিবী দেখে আকাশ থেকে সব পশুপাখি পৃথিবীতে থাকতে শুরু করলো। কিন্তু তার আগে বসবাসযোগ্য বানানোর জন্য তারা পৃথিবীতে বিশাল এক বাজপাখি পাঠালো। এই বাজপাখির পায়ের নখের আঘাতে নরম মাটি থেকে তৈরি হলো পাহাড়-পর্বত। তবে তখনো সবকিছু ছিল অন্ধকার। তাই তারা উপর থেকে সূর্যকে পৃথিবীর কাছে নিয়ে আসলো। ফলে বসবাসযোগ্য হলো পৃথিবী! হাস্যকর হলেও নর্থ অ্যামেরিকান চিরোকী জাতি এই গল্পই বিশ্বাস করে!
জ্যাপানিজ মিথ
জাপানিজ মিথ অনুযায়ী পৃথিবী সৃষ্টির আসল কারণ হচ্ছে সেক্স। তাদের মিথ অনুসারে মহাবিশ্বের শুরুতে সবকিছু ছিল আকারহীন। চারিদিকে ছিল সাইলেন্স। এই অবস্থা থেকে জন্ম নেয় পদার্থ ও সময়। আর তা থেকে সৃষ্টি হয় স্বর্গ ও বিভিন্ন দেবতা। এই সময় ৫ জোড়া দেব-দেবীর জন্ম হয়। এদের মধ্যে সবথেকে ছোট ছিল ‘ইজানামি’ ও ‘ইজানাগী’। তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয় পৃথিবী সৃষ্টির। তারা একটি বর্শার সাহায্যে মহাজাগতিক বস্তু থেকে কয়েকটি দ্বীপ তৈরি করেন এবং এমনই একটি দ্বীপে গিয়ে সঙ্গমে মিলিত হন। এর মাধ্যমেই ইজানামি জাপানের সবগুলো দ্বীপ ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র দেব-দেবীর জন্ম দেন। এভাবেই গড়ে ওঠে পৃথিবী!