২০১৪ সালের ৮ই মার্চ। কুয়ালালামপুরের ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে বোয়িং "সেভেন সেভেন সেভেন" চীনের রাজধানী "বেইজিং"
এর রওনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।
মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস
"এম এইচ থ্রী সেভেন জিরো " একটি প্যাসেঞ্জার ফ্লাইট। যেটা 'কুয়ালালামপুর' এবং
'বেইজিং' এ নিয়মিত যাতায়াত করতো। সেদিন রাত ১২ টা ৪১ মিনিটে 'ফ্লাইট থ্রী সেভেন জিরো'কে টেক অফ করার জন্য "এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল" থেকে ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়েছিলো। ফ্লাইটটির প্রধান পাইলট ছিলেন "জাহারি আহমেদ শাহ" এবং কো-পাইলট ছিলেন "ফারিক আব্দুল হামিদ"। ২২৭ জন যাত্রী ও ১২ জন ক্রু মেম্বারকে নিয়ে উড়ে যায় 'এম এইচ থ্রী সেভেন জিরো' বিমানটি। চায়না, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত সহ কয়েকটা দেশের যাত্রী ছিলো বিমানটিতে।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
আকাশ ছিলো ঝকঝকে পরিষ্কার। আবহাওয়াও বেশ শান্ত। টেক অফ করার ১ ঘন্টার মধ্যে 'ফ্লাইট থ্রী সেভেন জিরো' মালয়েশিয়া পেরিয়ে সাউথ চায়না সী এর ওপর প্রায় ৩৫ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থান করছিলো। এসময় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে বিমানটিকে তার অবস্থানের কথা জানান দেওয়া হচ্ছিলো। এর ঠিক ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ড পর বিমানটি হঠাতই এয়ারপোর্টের রাডার স্ক্রিন থেকে রীতিমতো ভ্যানিশ হয়ে যায়। এর পর বিমানটির সাথে অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও, সেটি আর সম্ভব হয় না।
নিয়মমাফিক পরদিন ভোর ৬ টা ৩০ মিনিটে বিমানটি বেইজিং এ ল্যান্ড করতে পারে নি। এবং এর কিছুক্ষণ পরে " ফ্লাইট থ্রী সেভেন জিরো"কে অফিশিয়ালি মিসিং ঘোষনা করা হয়।
প্রশ্ন জাগতেই পারে, "এতো এতো স্যাটেলাইট, এয়ার রাডার, উন্নত প্রযুক্তি থাকা স্বত্বেও একটা গোটা বিমান কিভাবে হারিয়ে যেতে পারে? তাও সকলের চোখের সামনে থেকে!!"
কেউ কেউ মনে করে মাঝ আকাশে বিমানটি হাইজ্যাক হয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করে বিমানটি সিষ্টেমেটিক ত্রুটির কারণে ক্র্যাশ করেছে। আবার কারো সন্দেহ, 'এম এইচ থ্রী সেভেন জিরো' হারিয়ে যাওয়ার সাথে এলিয়েনের কোনো সম্পর্ক আছে।
নিখোঁজ হবার পরদিনই 'ফ্লাইট এম এইচ থ্রী সেভেন জিরো' খোঁজার জন্য মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস একটি মাল্টিন্যাশনাল সার্চ অপারেশন শুরু করে। ৬৪ টি এয়ারক্রাফট এবং ৬৯ টি সামুদ্রিক জাহাজ নিয়ে পুরো সাউথ চায়না সী'তে খোঁজ চালানো হয়। কারণ যদি বিমানটি ক্র্যাশ করে, তাহলে সেটি এই সাগরেই পড়বে। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, পুরো সাগর তল্লাশির পরও বিমানের কোনো কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি।
নিখোঁজের তিন দিন পরে জানা যায়, ট্রাফিক কন্ট্রোল রাডার থেকে 'থ্রী সেভেন জিরো' বিমানটি ডিসকানেকট হবার পর মালয়েশিয়ান মিলিটারি রাডারে ধরা পড়েছিলো। সেখানে দেখা যায়, বিমানটি 'সাউথ চায়না সী' ধরে বেইজিং এর দিকে না গিয়ে মালয়েশিয়ার পেনাং দ্বীপের উপর দিয়ে উত্তর পশ্চিমে আন্দামান সাগরের উপরে থাইল্যান্ডের আকাশে উড়ে যাচ্ছিলো। আর ঠিক তখন মালয়েশিয়ান মিলিটারি রাডার থেকেও বিমানটি ডিসকানেকট হয়ে যায়। এই সূত্র ধরে লাগাতার ৬ দিন বেঙ্গল ঘাট থেকে ইন্ডিয়ান ওশান অব্দি খোঁজা হয়, কিন্তু এখানেও বিমানটির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।
সকলের মনে তখন নতুন প্রশ্ন বাসা বাঁধতে শুরু করলো। বিমানটি তার নির্দিষ্ট পথে না গিয়ে, কেনো দিক পরিবর্তন করলো? আর কেনইবা রাডারের সাথে বিমানটি সম্পর্কচ্যুত হলো?
এতসব প্রশ্ন যখন জট পাকাচ্ছিলো, ঠিক তখন তদন্তকারীদের হাতে আসে এক বিস্ময়কর তথ্য। সেদিন অন্যান্য যাত্রীদের সাথে দুজন ফেক পাসপোর্টধারী
'এম এইচ থ্রী সেভেন জিরো' বিমানটিতে যাত্রা করছিলো। যারা দুজনেই ছিলো চায়নিজ। তবে তদন্তকারীরা তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করে কোনো প্রকার ব্যাড রেকর্ড পায় না।
এখন সন্দেহ কেবল বিমানটির পাইলটদের ওপর। বিশেষত বিমানের ক্যাপ্টেন 'জাহারি আহমেদ শাহ'কে ঘিরেই শত রহস্যের ডালপালা বাড়ে। ৫৩ বছরের এই ব্যাক্তি ৩০ বছর সম্মানের সাথে বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিলো। এতো এতো তল্লাশী অভিযানের পরেও বিমানটিকে কোথাও পাওয়া যায়নি। বিমানটি হাইজ্যাক হলেও, কারা বা কেনো করেছে? ক্যাপ্টেন যদি এর সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে, তবে তার স্বার্থ কি?
সব প্রশ্ন সামনে রেখে "ফ্লাইট থ্রী সেভেন জিরো" যেন এক রহস্যই থেকে গেলো।