বাংলাদেশে রয়েছে অসংখ্য রহস্যময় স্থান, যার মধ্যে কয়েকটি সম্পর্কে বেশীর ভাগ মানুষ অবগত থাকলেও বেশির ভাগ সম্পর্কে আমরা তেমন কিছুই জানেনা। ঠিক তেমনি ঢাকা লালবাগ কেল্লার সুরঙ্গপথ। ঢাকায় অবস্থিত লালবাগ কেল্লা উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহাসিক দুর্গগুলোর একটি। এটি বাংলাদেশে মুঘল স্থাপত্যকলার অন্যতম বড় এক নিদর্শনও। প্রাচীন এই লালবাগের দুর্গ সম্পর্কে রয়েছে নানা অন্ধবিশ্বাস, কল্প-কাহিনী আর কিংবদন্তি।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
লালবাগ কেল্লার নিচে রয়েছে অসংখ্য
সুড়ঙ্গ যা জমিদার আমলে তৈরি করা হয়েছিল। সুড়ঙ্গগুলোর মধ্যে একটি সুড়ঙ্গ আছে যার
ভেতরে কেউ ঢুকলে তাকে আর ফিরে পাওয়া যায় না। পর্যটকরা বেড়াতে গেলে এই সুড়ঙ্গের
গল্প অনেকেই শোনেন। বলা হয়, এখান দিয়ে নাকি
সুরঙ্গ পথে দিল্লি পর্যন্ত যাওয়া যেত! কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। এটি যুদ্ধকালীন
বা বিপদের মুহূর্তে সুবেদারদের নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাওয়ার পথ হিসেবে তৈরি করা
হয়েছিল। ভারতের সব দুর্গেই এরকম সুড়ঙ্গের ব্যবহার দেখা যায়। সাধারণত নদীর ধারের
দুর্গের নকশায় সুড়ঙ্গটি তৈরির কৌশল ছিল যেন তাড়াতাড়ি দুর্গ থেকে নৌপথে যাওয়া যায়।
তাই সম্ভাবনা আছে লালবাগ দুর্গের এই সুড়ঙ্গটির বুড়িগঙ্গাতে গিয়ে শেষ হওয়ার। তবে এই রহস্যময়
সুড়ঙ্গে কোনো মানুষ প্রবেশ করলে আর ফেরত আসে না। এর কারণ হতে
পারে সুড়ঙ্গের ভেতরের অতিরিক্ত অন্ধকার পরিবেশ অথবা ভেতরে কোন ক্ষতিকর গ্যাস জমে
থাকা। আবার প্যারানরমাল কোন কারণও হতে পারে। আমরা জানি কিছু প্রকৃতির জ্বিন আছে
যারা পরিত্যক্ত পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে।
যাই হোক, পূর্বে একদল বিদেশি
গবেষক এই রহস্য উদঘাটনের জন্য সুড়ঙ্গের মধ্যে দুটি কুকুর পাঠায়, কিন্তু কুকুর দুটি
আর ফিরে আসেনি। পরবর্তীতে শিকল বেঁধে আবার দুটি কুকুরকে পাঠানো হয়েছিল। তখন শিকল
আসলেও কুকুরগুলো ফেরত আসেনি। অনেকের মতে এর মধ্যে এমন এক প্রকার গ্যাস রয়েছে যার
প্রভাবে যেকোনো প্রাণী দেহের হাড়, মাংস গলে যায়। আবার
কারও কারও ধারণা এর মধ্যে এমন এক প্রকার শক্তি রয়েছে যার ভেতর প্রবেশ করে কোনো
প্রাণীর পক্ষেই আর ফিরে আসা সম্ভব নয়। লোকমুখে শোনা যায়, এই
সুড়ঙ্গ দিয়ে পাশেই বুড়িগঙ্গা নদীতে যাওয়া যেত। সুড়ঙ্গমুখ থেকে বেরিয়েই নৌকায় উঠে
যাওয়া যেত জিঞ্জিরা প্রাসাদে। আবার নদীর বাতাস অনুভবের জন্য ওই সময়ের সেনাপতিরা এই
সুড়ঙ্গ ব্যবহার করতেন। তবে এসব কথাকে শুধুই কল্পকাহিনী বলে দাবি করেছে লালবাগ
কেল্লার কাস্টোডিয়ান কার্যালয়। কারণ এসব কথার কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তবে যুদ্ধের সময় মুঘল সেনারা যখন বুঝতেন তাদের পরাজয় কাছাকাছি, তখন তারা এই সুড়ঙ্গ দিয়ে দুর্গের দেয়াল পেরিয়ে পালিয়ে যেতেন।
স্থাপত্যবিদদের মতে, এ পথটি প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে টঙ্গী নদীর সঙ্গে যুক্ত। আবার কেউ মনে
করে, এটি একটি জলাধারের মুখ। এর ভেতরে একটি বড় চৌবাচ্চা
রয়েছে। মুঘলদের পতনের পর লালবাগ দুর্গ যখন সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়,
তখন ঢাকাবাসীর সব আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এই সুড়ঙ্গ। যেহেতু
সুড়ঙ্গ পথের রহস্য উদঘাটনের জন্য আজ পর্যন্ত প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ হয়নি,
তাই এটি নিয়ে নানা কল্পকাহিনী চালু আছে। তাই আজও এই সুড়ঙ্গের
সামনে তারা জড়ো হয়ে দাঁড়ায়। জানমালের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় বা কৌতূহলবশত কেউ যেনো
এর ভেতরে প্রবেশ না করে, সেজন্য সুড়ঙ্গমুখে গেট নির্মাণ
করে তাতে তালা দেওয়া হয়েছে।