এমন যদি হয় যে শতাব্দীর পর শতাব্দী এই পৃথিবী পরিচালিত হচ্ছে সিক্রেট সোসাইটি দ্বারা। শুনে খানিকটা হলেও কি আঁতকে উঠবেন না আপনি! ভাববেন না এমনটি কি আসলেও সম্ভব? গুজব হোক কিংবা গোপনীয়তার চাদরে মোড়া এক অজ্ঞাত সত্য, অনেকেই বিশ্বাস করেন এই পৃথিবী পরিচালিত হচ্ছে আসলে সবচেয়ে বিপজ্জনক, শক্তিশালী ও গোপন সংঘ দ্বারা। যারা নিজেদের গোপনীয়তা রক্ষা করতে যে কোন কিছু করতে সক্ষম।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
১. ইলুমিনাতিঃ দাবি করা হয়ে থাকে, ‘ক্ষমতা পিরামিড’ এর চূড়ায় গুপ্ত নিয়ন্ত্রকেরা অবস্থান করে ‘কমিটি অফ থ্রি হান্ড্রেড’ রূপে। বলা হয়, ফ্রিম্যাসন, স্কাল অ্যান্ড বোন্স, ইয়েল এবং বোহেমিয়ান গ্রোভ এইসব প্রধান প্রধান সিক্রেট সোসাইটিগুলোর মধ্যে ইলুমিনাতি প্রভাব বিস্তার করেছে।
১৭৭৬
সালে রথচাইল্ড পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় অ্যাডাম উইশোপ্ট ষোড়শ শতাব্দীর মুসলিম
‘রোশনিয়া’ গোষ্ঠীর মতো একটা পাশ্চাত্য ঢং-এর ‘আলোকিত’ সিক্রেট সোসাইটি প্রতিষ্ঠা
করেন। এই পরিষদে মারকিস ডি সেড ও বিখ্যাত ‘হেলফায়ার ক্লাব’ এর স্যার ফ্রান্সিস
ড্যাশউডও যোগদান করেন। উইশোপ্ট দীক্ষাদানের ১৩ টি ধাপ প্রবর্তন করেন। যার প্রথম
নয়টির মূল ছিল ক্ষমতা। কথিত আছে তখন থেকেই ইলুমিনাতির সদস্যরা ফ্রিম্যাসনসহ
অন্যান্য গুপ্তসংঘের অনুপ্রবেশ শুরু করেন। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কিভাবে
আন্তর্জাতিক বিষয়াদি নিজেদের নিয়ন্ত্রনে রাখা এবং পৃথিবীতে একটা নতুন শাসন
ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, শুরু থেকেই এই গোষ্ঠী খ্রিষ্টানদের
প্রধান তিনটি শঙ্কা সাথে নিয়ে তৈরি হয়েছে – মুসলিম সম্প্রদায়, ইহুদিদের টাকা এবং
ড্যাশউড রূপী শয়তান ও তার শয়তানি সঙ্ঘ হেলফায়ার ক্লাব, যাদের মাধ্যমে ইলুমিনাতি
একটি শক্তিশালী সঙ্ঘ হিসেবে আবির্ভূত হয়।
উইশোপ্ট শিক্ষা দিতেন যে মানব ইতিহাসের প্রায় সবকিছুই পাঁচটি জিনিসের ভিত্তিতে তৈরি – বিশৃঙ্খলা, অনৈক্য, সংশয়, আমলাতন্ত্র ও পরিণাম। বলা হয়ে থাকে ফরাসি বিপ্লব ছিল ইলুমিনাতিবাদের একটি এক্সপেরিমেন্ট। অভিযোগ আছে যে, ইলুমিনাতির কথিত সদস্য যেমন – রকফেলার, রথচাইল্ড, মরগান, রুজভেল্ট, ডলেস ও অন্যান্য বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীর বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, বিশ্বযুদ্ধ, রুশ বিপ্লব ইত্যাদির পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন। ইলুমিনাতির মূল উদ্দেশ্য মানুষের মাঝে বিভাজন তৈরি ভয়ের সংস্কৃতি জারি রেখে নিজেদের কার্যসিদ্ধি করা।
২.
ফ্রিম্যাসনঃ ফ্রিম্যাসনের
একটি অদ্ভুত নিয়ম হচ্ছে এই সোসাইটির সকল সদস্য এলিট পুরুষ। ১৭১৭ সালে লন্ডনে এই
সিক্রেট সোসাইটি টি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আজকে সমগ্র বিশ্বে এই সিক্রেট সোসাইটির ছয়
মিলিয়নের বেশি সদস্য রয়েছে বলে জানা যায়। ফ্রিম্যাসন সিক্রেট সোসাইটির সুপরিচিত ও
বিশ্ববিখ্যাত সদস্যদের মধ্যে রয়েছে হ্যারি হুডিনি, জর্জ ওয়াশিংটন,
উইনস্টন চার্চিল, মোজার্ট এবং বেঞ্জামিন ফ্র্যাংকলিন। এর সদস্যরা তাদের গোপন
হ্যান্ডশেক এবং পাসওয়ার্ডের জন্য পরিচিত। এমনকি ফরাসি বিপ্লবের পিছনে দ্য ফ্রিমেসনস-সদস্যদের সক্রিয় ভূমিকা
ছিল বলে জানা যায়। জ্যাক দ্য রিপার কর্তৃক সিরিয়াল কিলিং থেকে শুরু করে ওয়ার্ল্ড
ট্রেড সেন্টারে আক্রমণ পর্যন্ত ফ্রিম্যাসনদের দায়ী করা হয়ে থাকে। এর মাত্রা খুবই
বিস্তৃত। অবাক করা ব্যাপার হলো, বাংলাদেশেও কয়েক জায়গায় ফ্রিম্যাসনদের অফিস ছিল।
৩. দ্য
স্কাল এন্ড বোনসঃ ‘দ্য
স্কাল এন্ড বোনস’- সিক্রেট সোসাইটির পরিচয় প্রসঙ্গে এক কথায় বলা হয়ে থাকে ‘ষড়যন্ত্রের
সূতিকাগার’। বিশ্বকে বদলে দেওয়ার, রাজনৈতিক পট পাল্টে দেবার মত বড় বড় ষড়যন্ত্রের
নায়করা এই সোসাইটির সদস্য। ১৮৩২ সালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীদের দ্বারা এই সিক্রেট সোসাইটি টি
প্রতিষ্ঠিত হয়। ‘দ্য স্কাল অ্যান্ড বোনস’- এর স্মরণীয় কীর্তি কি জানতে চান?
এই সিক্রেট
সোসাইটির সভ্যদের হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয়
নিরাপত্তা সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি-সিআইএ। সিআইএ’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হওয়ায় ‘দ্য স্কাল এন্ড
বোনস’-এর এই সংস্থাটির উপর রয়েছে অসামান্য প্রভাব ও প্রতিপত্তি। তাদের হাতে
নিয়ন্ত্রিত হয়ে সিআইএ জন্ম দিয়েছে অনেক সমালোচিত ঘটনার। প্রেসিডেন্ট
জন এফ কেনেডির হত্যাকান্ড, ঔষধের চোরাচালান, রাষ্ট্র দখলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড
পরিচালনা, অদ্ভুত
যৌনাচার, মাদক
ব্যবসায় সহ গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে সরাসরি বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে দ্য
স্কাল এন্ড বোনসের সদস্যদের বিরুদ্ধে। তবে কোন অভিযোগ বা এই সংক্রান্ত তদন্ত কখনোই
আলোর মুখ দেখেনি।
৪. দ্য
নাইটস টেম্পলারঃ ১১১৯
সালে নয়জন নাইট দ্বারা গঠিত হয়েছিল,’ দ্য নাইটস টেম্পলার’ নামক সংগঠন টি। ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের সামরিক
যোদ্ধারা ছিল এই গুপ্ত সংগঠনের সভ্য। মূলত তারা অপরাধী ও ডাকাতদের হাত থেকে
খ্রিষ্ট সম্প্রদায়ের তীর্থযাত্রীদের রক্ষা করতে সংগঠিত হয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে
ধর্ম যাজক ও গীর্জার সম্পদ রক্ষার কাজে এমন কি জোর পূর্বক খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচারের
কাজেও তাদের ব্যবহার করা হয়েছিলো। খ্রিষ্ট ধর্মের মহামূল্যবান পুরাতত্ত্ব ও ধর্মীয়
সম্পদের রক্ষায় ‘দ্য নাইটস টেম্পলার’ নাইটরা আজীবন প্রতিজ্ঞ ছিলো। কথিত রয়েছে
প্রাচীন ব্যাংকের নির্মাণও নাইট টেম্পলারদের হাতে হয়েছিলো। খ্রিষ্টানদের পূণ্য
ভূমি রক্ষায় ইউরোপে শক্তিশালী অনেক দুর্গ
ও নির্মাণ করে নাইট টেম্পলাররা। ১৩১২ সালে এই সিক্রেট সোসাইটি বিলুপ্ত হয়ে গেলেও, কথিত রয়েছে আজও নাইট টেম্পলারের অস্তিত্ব রয়েছে
যা পরিচালনা করছে ‘দ্য ফ্রিমেসনস’ সিক্রেট সোসাইটি।
৫. দ্য ক্যাডেভার সোসাইটিঃ ‘দ্য ক্যাডেভার সোসাইটি’- নামক সিক্রেট সোসাইটি টি লি ইউনিভার্সিটি এবং ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। কথিত রয়েছে এমন অনেক ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ রয়েছে যার
সনাক্ত
করা সম্ভব হয় নি এবং এই সিক্রেট সোসাইটির সদস্যরা এই সুড়ঙ্গ পথে ক্যাম্পাসের
বিভিন্ন অংশে আসা যাওয়া করে। দ্য ক্যাডেভার সোসাইটি কে ‘ইলুমিনাটি’ নামক গুপ্ত
সংগঠনের শাখাও বলা হয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে বিশ্বের যে কোন ব্যাংক ও সরকারের
নিয়ন্ত্রণ তথা তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করার বিরল ক্ষমতা রয়েছে দ্য ক্যাডেভার
সোসাইটির সদস্যদের।
৬. দ্য
অর্ডো টেমপ্লি অরিয়েন্টিসঃ দ্য অর্ডো টেমপ্লি অরিয়েন্টিস একটি ধর্মান্ধ ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ গুপ্ত
সংগঠন যারা অতি প্রাকৃত ঘটনায় বিশ্বাসী। এই গুপ্ত সংগঠনটি
ফ্রিম্যাসনস এর
গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে গড়ে তোলা হলেও সুনির্দিষ্ট কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমনঃ এই
সংগঠনের সকল সদস্য শয়তানের উপাসক ও তাদের কার্যক্রম যাবতীয় অকল্যাণ ও ধর্মীয় ও
মানবতার বিরুদ্ধে চলা আচার ব্যবহারকে সমর্থন করে। গুপ্ত সংগঠনের সদস্যরা প্রাচীন মিশরীয় ঈশ্বর ও শয়তানের উপাসনা এবং
রীতিনীতি অনুসরণ করে। যার মধ্যে রয়েছে নগ্ন উপাসনা,কুমারী পূজা। এসব আচার অনুষ্ঠানে
যাজিকা এবং এমনকি নিজেদের নাবালক সন্তানদের ব্যবহার করা হয়।