বিজ্ঞানের ভাষায়, বিশাল
বিশাল দেহী ডাইনোসরের বিলুপ্ত হওয়ার পরেই সূচনা হয়েছে স্তন্নপায়ী প্রানিদের যুগ।
বর্তমানে প্রাক ঐতিহাসিক যুগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এই সকল ডাইনোসরের শুধু মাত্র হাড়
খুঁজে পাওয়া যায় পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায়। সেই আমলে স্থল ভাগে যেমন বিলুপ্ত হয়েছিল
বিভিন্ন প্রজাতির ডাইনোসরের ঠিক তেমনি জলেও ১.৫ মিলিয়ন বছর আগে বিলুপ্ত ঘটেছিল ৯৮
ফুট লম্বা মেগালোডন হাঙ্গরের।
মেগালোডন হলো হাঙরের একটি প্রজাতি যেটি আজ থেকে ২ কোটি থেকে ৩০ লক্ষ বছর আগের সময়ের মধ্যে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মেগালোডনকে গ্রেট হোয়াইট শার্কের পূর্বপুরুষ বলা হয়ে থাকে। মেগালোডন ওজনে ৪৮ টন এবং লম্বায় ৫৫ ফুট হতো। বর্তমান সময়ে পাওয়া যাওয়া হাঙ্গর মাছের তুলনায় মেগালোডনের আকৃতি তিনগুণ বড় ছিল। এরা সাধারণত তিমি মাছ এবং ডলফিনের শিকার করতো। অনেক বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন মেগালোডন কখনো বিলুপ্ত হয়নি, এরা আজও সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে আছে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে; আসলেই কি এই মেগালোডন হাঙ্গরের বিলুপ্তি ঘটেছিল নাকি আজ পর্যন্ত সে তার নিজের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে?
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
গবেষক দলেরা তাদের নিত্য
দিনের মত যখন খুঁজে বেড়াচ্ছিল ডাইনোসরের কোন হাড় তখন তারা আবিস্কার করল বিশাল এক
হাঙ্গরের দাঁতের মত হাড় বিশেষ। প্রথমে সকলেই ধারনা করেছিল এটি হয়ত কোন ড্রাগন বা
বিশাল আকৃতির কোন সাপের দাঁত।
কিন্তু সকলের ধারনাকে পাল্টে দেন Nicolas Steno ১৬৬৭ সালে। যিনি প্রথম সবাইকে জানান দেন যে এটি আসলে বিশাল আকৃতির কোন এক হাঙ্গরের দাঁত। আর তিনি এই দাঁতকে কেন্দ্র করে বিশাল এক হাঙ্গরের চোয়াল আঁকেন যা এই হাঙ্গরের বিশালতার প্রমান দেয়। তিনি এই ছবিটি প্রকাশ করেন তার লেখা "The Head of a Shark Dissected" বইটিতে। এরপর থেকেই পৃথিবী জানল বিশাল এক হাঙ্গরের অস্তিত্বের কথা। এরপরে প্রানি বিজ্ঞানি "Louis Agassiz" এই বিশাল আকৃতির হাঙ্গরের প্রাথমিক নামকরন করেন "Carcharodon Megalodon" নামে ১৮৩৫ সালে। আর এ কারনেই Louis Agassiz এই মেগালোডন হাঙ্গরের স্থান দেন প্রানি জগতের "Carcharodon" প্রজাতির মধ্যে আর এর নাম বৈজ্ঞানিক সক্ষিপ্ত নামকরন করা হয় "C. megalodon" নামে। অবশ্য অনেকেই একে "Megatooth Shark", "Giant White Shark" অথবা "Monster Shark" নামেও ডাকে।
আচ্ছা যে প্রানি বিলুপ্ত হয়ে
গেছে, সেই প্রানিকে কি জীবিত অবস্থায় দেখা বর্তমানে সম্ভব? এক কথায় উত্তর "না"। কিন্তু এই মেগালোডন হাঙ্গর মাছের
বর্তমান সময়ে যে জীবিত রয়েছে তার অনেক ভিডিও চিত্র রয়েছে যা প্রমানে করে যে এই
মেগালোডন হাঙ্গর এখনো বেঁচে আছে আর তা বিচরন করছে সমুদ্রে। কি বিশ্বাস হচ্ছে না
তাই না? তাহলে চলুন দেখে নেই একে একে সব প্রমান আর এরপরে
সিদ্ধান্ত আপনিই নিবেন।
তখন ২য় বিশ্ব যুদ্ধ চলছে
বিশ্ব জুড়ে। সারা বিশ্ব জুড়ে চলছে জার্মানির হিটলার বাহিনীর আগ্রাসন। আর এ সময়
ফ্রান্সের অনেক গুলি সমুদ্র বন্দর চলে যায় হিটলার অর্থাৎ জার্মানদের দখলে। এসময় এই
জায়গাকে সুরক্ষিত রাখতে জার্মান বাহিনী নৌবহর বৃদ্ধি করে। এসময় তাদের সাথে দেখা হয়
এই মেগালোডন হাঙ্গর মাছের সাথে। এর ছবি তুলে রেখেছিল তারা কিন্তু তা সে সময় প্রকাশ
করা না হলেও সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে জার্মানিদের অনেক গোপন নথির মত এটিও
উন্মুক্ত হয় সকলের সামনে।
৫ই এপ্রিল ২০১৩ সাল, আফ্রিকার কেপ টাউনের সমুদ্র এলাকায় বন্ধুরা মিলে সমুদ্রে মাছ ধরার আয়োজন করে। তাদের এই আয়োজনের সম্পূর্নটাই ভিডিও করার আয়োজন ছিল তাদের। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত প্রানী তাদের স্পিড বোটে আক্রমন করে বসে। আর এই দূর্ঘটনায় সকলেই নিখোঁজ হয়। কিন্তু অনুসন্ধানের সময় তাদের ধারন করা ভিডিও ক্যামেরাটি উদ্ধার করা সম্ভব হয় সমুদ্রতল থেকে। বলে রাখি তাদের ভিডিও ক্যামেরাটি ছিল পানি নিরোধক। এই দূর্ঘটনার পরে সকলেই নিখোঁজ হয় কিন্তু সমুদ্রের পানির নিচে খুঁজে পাওয়া যায় তাদের বোটের ভাংগা অংশ। আর সেখানে স্পষ্ট দেখা যায় বোটের গায়ে রয়েছে বিশাল আকৃতির কামড়ের দাগ যা হুবাহু হাঙ্গরের কামড়ের মত কিন্তু আঁকার এবং আকৃতিতে বিশাল বড়। তাহলে এই কামড় কি মেগালোডনের?
এবারের ঘটনাটি ঘটে দক্ষিন আফ্রিকায়। আপনারা সকলেই জানেন যে আফ্রিকাতে যত প্রজাতির প্রানির সন্ধান পাওয়া যায় তা আর কোন একক অঞ্চলে এত প্রানি পাওয়া যায় না। এর স্থল ভাগের মত এর সমুদ্র অঞ্চলেও জলজ প্রানিরও সংখ্যা কম না। আর এই জলজ জগতকে দেখার জন্য শুধু আফ্রিকাতে নয় বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে গভীর সমুদ্র অঞ্চলে বসানো আছে ক্যামেরা। যা দিয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রতিনিয়ত এই জলজ জগতকে দেখেন। আর এখানেই আবার ধরা পরে মেগালোডন। সমুদ্রের পরিবেশের তারতম্য বোঝার জন্য রবটের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছিল সমুদ্র তলের মাঠি বা বালি। আর এসময় যা ক্যামারায় ধরা পরে তা সকলকেই হতবাক করে দেয়। চলুন তাহলে দেখে নেই সে সময় কি ধরা পরেছিল ক্যামেরায়। এখানে ক্যামেরায় ধরা পরা হাঙ্গরের পাখার আঁকার হিসাব করে যদি এই হাঙ্গরের আকৃতি বের করা হয় তা হয় ৬২ ফুট লম্বা হাঙ্গর।
তাহলে এটাই কি ছিল মেগালোডন? মেগালোডনের কন্সেপ্টের উপরে ভিত্তি করে স্ট্রিভ অল্টেনের উপন্যাস ‘মেগঃ আ নভেল অফ ডিপ টেরর’ অবলম্বনে ২০১৮ সালে জন টার্টেলটব ‘দ্য মেগ’ সিনেমাটি নির্মাণ করেন। মুখ্য চরিত্রের ছিলেন বিখ্যাত অভিনেতা জ্যাসন স্ট্যাথাম। ব্যবসাসফল এই সিনেমার সিক্যুয়েল ‘মেগ টুঃ দ্য ট্রেঞ্চ’ আসবে এই বছরের আগস্টে।
অনেকে মনে করে মেগালোডন এখন
মারিয়ানা ট্রেঞ্চে লুকিয়ে আছে। মেগালোডন এখনো আছে কিনা অথবা আদৌ কখনো এর অস্তিত্ব
ছিল কিনা, ব্যাপারগুলো রহস্যই থেকে যাবে। রহস্যপ্রেমীরাও বারবার এর অস্তিত্বের
খোঁজে লেগে পড়বে।