ধরুন, আপনাকে জিজ্ঞেস করা হলো; আপনি আপনার অতীতে করা তিনটি ভুল
বর্তমানে সংশোধন করতে পারবেন। কোন তিনটি ভুল আপনি সংশোধন করতে চাইবেন?
আমার মতে, এই ভুল সংশোধনী দৈব শক্তি পাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার মাথায় এটা কাজ করবে, যে অতীতে করা ভুল সংশোধন করা কিভাবে সম্ভব? আদৌ কি অতীত পরিবর্তন করা যায়? আর ঠিক তখনই একটা জিনিস চোখের সামনে ভেসে উঠবে, "টাইম ট্রাভেল"। বাংলায় যাকে বলা হয় সময় ভ্রমণকারী। মানুষ সবসময়ই চায় তার অতীতে করা ভুলগুলোকে মুছে দিতে। কিন্তু আদতে কি এটা সম্ভব? এ বিষয়ে পরে বলছি। তার আগে বলি, গ্র্যান্ড ফাদার প্যারাডক্স কি? আর টাইম ট্রাভেলের সাথে এর সম্পর্কই বা কি??
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
"গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স" মূলত এমন একটি ধাঁধা যেটা
বাস্তবে কখনোই সম্ভব না।
ধরুন, জীবনের একটা পর্যায়ে এসে আপনার মনে হলো আপনার এ জীবন পুরোপুরি ভুলে ভরা যার জন্য আপনি আপনার জন্মটাকে দায়ী করছেন। কারণ আপনি যদি না'ই জন্মাতেন, তাহলে আপনি এতো এতো ভুলও করতেন না। আর তাই আপনার জন্মের জন্য আপনি আপনার বাবাকে দায়ী করছেন। আর বাবাকে জন্ম দেওয়ার জন্য দায়ী করছেন আপনার দাদুকে। আপনার মনে হলো, মেইন কালপ্রিট আপনার দাদু। সুতরাং তাকে যদি আপনি শেষ করে দিতে পারেন, তাহলে আপনার বাবা'ও জন্মাবে না, আপনিও জন্মাবেন না, আর আপনার জীবনে করা ভুল গুলো নিয়েও আপনার আর আক্ষেপ থাকবে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আপনি টাইম ট্রাভেল করে অতীতে চলে গেলেন আপনার দাদুকে মারার জন্য। আপনার দাদু বিয়ে করার আগেই তাকে আপনি মেরেও ফেললেন। সুতরাং আপনার বাবা জন্মানোর কোনো স্কোপ নেই আর, ফলে আপনিও আর জন্মাবেন না। কিন্তু তাহলে আপনার অস্তিত্বটা কোথায়? আপনি কিভাবে অতীতে গিয়ে আপনার দাদুকে মারবেন, যদি আপনার জন্মই না হয়? টাইম ট্রাভেলের বিষয়টা এতটাই রহস্যময় যে বিজ্ঞানীরা আজও পর্যন্ত এর কোনো মীমাংসা করতে পারেনি।
তবে পদার্থবিদ্যায় টাইম ট্রাভেল নিয়ে অনেক তত্ত্ব আছে। বিজ্ঞানী
"আইজ্যাক নিউটন" মনে করতেন, মহাবিশ্বের সব স্থানে সময় প্রবাহের হার সমান।
অর্থাৎ পৃথিবীতে এক ঘণ্টা অতিক্রম হওয়া মানে মহাবিশ্বের সবখানে এক ঘণ্টা অতিক্রম হবে।
যা অলরেডি ঘটে গেছে তা সবার জন্যই অতীত।
কিন্তু অন্যদিকে বিজ্ঞানী "আলবার্ট আইনস্টাইন" এর বিরোধিতা
করে বলেছেন, 'মহাবিশ্বের সব স্থানে সময় প্রবাহের হার এক না, যা ঘটে গেছে তা সবার জন্য
অতীত নাও হতে পারে।'
এ সম্পর্কে তার "থিওরি অব রিলেটিভিটি" বা আপেক্ষিকতা
তত্ত্ব প্রকাশের পর সময় সম্পর্কে সবার ধারণার আমুল পরিবর্তন হয়ে যায়। ধরুন, কোন ব্যক্তিকে
আলোর গতিতে ছুটে চলতে পারে এমন কোনো একটি মহাকাশযানে উঠিয়ে দেয়া হল এবং তিনি ভ্রমণে
বেরিয়ে পড়লেন মহাজগতের এপার থেকে ওপার। কিন্তু পৃথিবীতে ফিরে এসে দেখা যাবে অনেক বছর
কেটে গেছে যেখানে ওই ব্যক্তির কাছে মনে হবে মাত্র অল্প কিছু সময় পার হয়েছে।
এভাবেই আইনস্টাইন তার থিওরীতে টাইম ট্রাভেলের ফর্মুলা ব্যাখ্যা
করেছেন। এটি পরিষ্কার যে টাইম ট্রাভেল সাধারণ কোনো ঘটনা নয়, এটি প্রকৃতিবিরোধী। মজার
ব্যাপার হলো, আইনস্টাইনের থিওরি অনুযায়ী যে বিশেষ ক্ষেত্রগুলোর উপস্থিতিতে টাইম ট্রাভেল
সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে, তার সবকিছু আবার 'স্টিফেন হকিং'এর কোয়ান্টাম তত্ত্ব সাপোর্ট
করছে না। তবে আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিং, থর্নের মতে, ওয়ার্মহোল বাস্তবে পাওয়া সম্ভব
হলে এটা দিয়েই টাইম ট্রাভেল সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হবে বলে মত তাদের। তাই সায়েন্টিফিক থিওরি
অনুযায়ী টাইম ট্রাভেল সম্ভব, তবে বাস্তবিক অর্থে তা আলোর গতির সাথে একই গতিতে চলতে
হবে৷ সেক্ষেত্রে, এমন একটি টাইম ট্রাভেল মেশিন বানাতে হবে 'যেখানে আলোর গতির কাছাকাছি
গতি অর্জন করা সম্ভব। "ইউনিভার্সিটি অব কানেক্টিকাট" এর ফিজিক্সের প্রফেসর
'রোনাল্ড ম্যালেট' একটি সার্কেলড লেজারের সাহায্যে ঘূর্ণায়মান ব্ল্যাকহোলের মত পরিস্থিতি
সৃষ্টির করে টাইম ট্রাভেলকে বাস্তবায়িত করার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তার এই ডিভাইসের
আদলে ভবিষ্যতে টাইম মেশিন বানানো যাবে বলে তার দাবি। তবে আদৌ সেটা কখনো সম্ভব কিনা!
আর প্রকৃতির নিয়মের সাথে বিরোধিতা করার ফলে সেটা কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারে, সেটাই দেখার
বিষয়।