সত্যিটা কেউ জানেনা, বার্বি কী আসলেই শিশুদের খেলনা? The History of the Barbie Doll

Author
0

 


রুথ মারিয়ানা হ্যান্ডলার বিশ্ববিখ্যাত বার্বি পুতুলের আবিষ্কারকশুরুতে সোনালি চুল ও নীল চোখের শেতাঙ্গ বার্বির যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে তার ৫৫ পার্সেন্টেরই সোনালি চুল বা নীল চোখ নেই। এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ম্যাটেল এক বিলিয়ন বার্বি বিক্রি করেছে।

সময়টা ১৯৫৫ সাল। সেসময় বাচ্চারা যেসব পুতুল নিয়ে খেলত সেগুলোর বেশিরভাগই ছিল কাগজ কিংবা কাপড়ের তৈরি। তার ওপর পুতুল মানেই ভাবা হতো একটি শিশুর অবয়ব, পুতুল যে শৈশব অতিক্রম করে কৈশোর কিংবা যৌবনের চেহারা পেতে পারে তা তখনো কারো মাথায় আসে নি। ততদিনে আমেরিকায় খেলনা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাটেল মোটামুটি পরিচিতএলিয়ট এবং ম্যাট নামের দুই ব্যবসায়ী একত্রে ম্যাটেল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এলিয়টের স্ত্রী রুথ হ্যান্ডলার তখন কোম্পানির মার্কেটিং সাইড দেখতেন।

 

পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



বাড়ি ফিরে রুথ প্রায়ই লক্ষ্য করতেন তাঁর কিশোরী মেয়ে বারবারা কাগজের পুতুলদের জামাকাপড় পড়িয়ে বয়সে বড় বানিয়ে খেলছেসেই দেখে রুথও আইডিয়া পেয়ে গেলেন, তিনি তাঁর স্বামী এলিয়টকে বললেন – প্রাপ্তবয়স্ক চেহারার পুতুল বানালে কেমন হয়?

এলিয়ট এবং কোম্পানির অন্যান্য পরিচালক কেউই এই প্রস্তাবে রাজি হলেন না। পরিণত চেহারার প্লাস্টিক পুতুল একেবারেই ভালো চোখে দেখবেনা সমাজ। কোন অভিভাবকই তাঁর সন্তানকে কিনে দিতে চাইবেন না। ফলে এধরণের পুতুল বানালে ম্যাটেলের লোকসান ছাড়া আর কিছুই নয়- এই বলে রিজেক্ট করে দিলেন রুথকে। কিন্তু রুথ এতে থেমে গেলেন না। তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে কৈশোর আর যৌবনের মাঝামাঝি বয়সের মেয়েরা উপযুক্ত খেলনা পুতুলের অভাব বোধ করছেবয়ঃসন্ধির মানসিক এবং শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুতুলের চাহিদাও পরিবর্তিত হতে বাধ্য। রুথের মাথায় রয়ে গেল সেই চিন্তার বীজ। কিছুদিন পর সপরিবারে ইউরোপে ছুটি কাটাতে গিয়ে একটি সুইস দোকানে রুথ হঠাৎ দেখতে পেলেন পশ্চিম জার্মানির ফ্যাশন ডল ‘বিল্ড লিলি’বিল্ড লিলি তখন সদ্য ইউরোপের বাজারে এসেছে। তবে এই পুতুলগুলোর উদ্দেশ্য ভিন্ন। এগুলো মূলত যৌন আবেদনে ভর্তি এবং পরিনত চেহারার নারীমূর্তি যা কেবল ঠাট্টা করে বড়দেরই উপহার দেওয়া যায়, ছোটদের জন্য একেবারেই নয়। রুথ সেই বিল্ড লিলি দেখে অভিভূত হলেন। তিনি বুঝে গেলেন অনেকটা এরকম একটি পুতুলই দরকার বয়ঃসন্ধিকালের মেয়েদের জন্য। নিজের সাথে একটি বিল্ড লিলি পুতুল নিয়ে এলেন তিনি।

এরপর চলল দীর্ঘ পরিকল্পনা এবং পরিশ্রম। বিল্ড লিলি ডলকে সামনে রেখে ইঞ্জিনিয়ার জ্যাক রায়ানকে সাথে নিয়ে, বারবার নক্সা পরিবর্তন করে রুথ একদিন বানিয়ে ফেললেন তাঁর স্বপ্নের বার্বি ডলনামটি রাখলেন কন্যা বারবারার নাম অনুসারে। ১৯৫৯ সালের ৯ই মার্চ, নিউইয়র্কের একটি খেলনার মেলায় বার্বি ডলের প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটলো।

 

বার্বি ডলের সাধারণ মাপ সাড়ে এগারো ইঞ্চি। প্রথম বার্বির পোশাক ছিল একটি কালো-সাদা জেব্রা স্টাইলের স্যুইমসুট, মাথায় গোছ করে বাঁধা পনি টেইল। সোনালি এবং বাদামি চুল দুই ডিজাইনেই তৈরি হয়েছিল প্রথম ডলটিতার পোশাক তৈরি করেছিলেন ম্যাটেল ফ্যাশন ডিজাইনার শার্লট জনসন। দ্রুতই “টিন-এজ ফ্যাশন মডেল” হিসাবে বার্বি র চাহিদা বাড়তে শুরু করেপ্রথম লটের পুতুলগুলো তৈরি হয়েছিল জাপানে। জাপানি গৃহবধূরা নিজে হাতে বার্বির পোশাক সেলাই করেছিলেন। উৎপাদনের প্রথম বছর অর্থাৎ ১৯৫৯ সালেই প্রায় ৩৫0,000 বার্বি ডল বিক্রি হয়েছিল। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে এবং সিনেমায় বার্বির উপস্থিতি দেখতে পায় সারা পৃথিবী। যদিও অভিভাবকরা প্রাথমিকভাবে এই পুতুল বাচ্চাদের কিনে দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না, কারণ সেই প্রথম কোন পুতুলের শরীরে স্পষ্ট স্তনাভাস ও নিতম্ব দেখা যাচ্ছিল।

ইতিমধ্যে লুই মার্কস অ্যান্ড কোম্পানী ১৯৬১ সালের মার্চ মাসে ম্যাটেলের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিলতাঁদের অভিযোগ ম্যাটেল বিল্ড লিলির নিতম্বের জয়েন্টের জন্য গ্রিনিয়ার এবং হাউসারের পেটেন্ট চুরি করেছে। অবশেষে মামলার নিষ্পত্তি করে ১৯৬৪ সালে ম্যাটেল ২১,৬০০ ডলারের বিনিময়ে গ্রিনিয়ার এবং হাউসারের কপিরাইট এবং পেটেন্ট কিনে নিতে বাধ্য হয়।



এরপর কালের পরিক্রমায় প্রচুর পরিবর্তন এসেছে বার্বি ডলের ডিজাইনে। এসেছে হরেক রঙ্গের, হরেক ডিজাইনের নতুন নতুন বার্বি ডল। বার্বি পরিবারের সমস্ত চরিত্রদের নিয়ে তৈরি হয়েছে একের পর এক অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রও। রিসেন্টলি মুক্তি পেয়েছে ‘বার্বি’ নামক একটি ফিচার ফিল্মও। যেখানে অভিনয় করেছেন মার্গোট রোবি ও রায়ান গসলিং এর মতো তারকারা। সিনেমাটি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে ইতিমধ্যেই। যাই হোক, এসব অ্যাডাপ্টেশন থেকেই মানুষ বার্বিদের নিত্য নতুন গল্প জানতে পারে। বাড়ি, গাড়ি, ইউনিকর্ন, প্রাসাদ এসবকিছু নিয়ে রুপকথার জগৎ যেমন তৈরি হয়েছে শিশুদের জন্য, তেমনি রোলমডেল হিসেবেও রয়েছে বিভিন্ন বয়সী বার্বি ডল।

মানুষ তার নিজের বয়স ও পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো ধরনের বার্বি ডল পেতে পারে আজ। কোন অসুস্থ শিশুর মনোবল বাড়াতে সঙ্গীর হিসেবে আছে ক্যান্সার পেশেন্ট বার্বি কিংবা হুইল চেয়ারে বসা বার্বি-ও।

অসম্ভব জনপ্রিয় এই পুতুলটি বিশ্বের প্রায় ১৫০টি দেশে বিক্রি হয়। খাদ্য থেকে ফ্যাশন পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের ৪৫টি পণ্যের সঙ্গে বার্বি যুক্ত রয়েছে। করোনা মহামারীর সময়ে বার্বির জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় বহুগুণ। গত ২০ বছরের মধ্যে বার্বি সর্বোচ্চ বিক্রি হয়েছিল ২০২০ সালে। এবং ম্যাটেলের পক্ষ থেকে এক পরিসংখ্যানে জানানো হয়েছে, এ সময়ের মধ্যেই বার্বি সংশ্লিষ্ট পণ্যের বিক্রি ১ দশমিক ৫ বিলিয়নে দাঁড়ায়। বর্তমানে বিশ্বের ১৫টি দেশে প্রতি বছর প্রায় ৫৮ কোটি ‘বার্বি’ ও ‘কেন’ বিক্রি হয়।

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!