ছোটবেলায় আমরা সবাই কমবেশি আফ্রিকার জঙ্গলের ভয়ঙ্কর মানুষখেকো গাছের গল্প শুনেছি। বটগাছের মতো সেই গাছগুলোর বড় বড় লেজের মতো কাণ্ড আছে, যেগুলো দ্বারা তারা মানুষকে পেঁচিয়ে আটকে খেয়ে ফেলে! আমার মতো অনেকেই নিশ্চয় ছোটবেলায় মানুষ-খেকো গাছের গল্প শুনেছেন। কখনো কি জানতে ইচ্ছে করেছে আসলেই পৃথিবীতে এমন গাছ আছে কিনা?
[ দ্য
মাদাগাস্কার ট্রি ]
মানুষখেকো গাছের ধারণাটা প্রথম আসে আজ থেকে দেড় শ বছর আগে। ১৮৭৪ সালে এডমন্ড স্পেনসর নামে এক ব্যক্তি ‘নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড’ পত্রিকার জন্য একটি কাল্পনিক প্রবন্ধ লেখেন। সেখানে তিনি কার্ল লিঞ্চ নামে একজন জার্মান অভিযাত্রীর কাছ থেকে পাওয়া একটি চিঠির উল্লেখ করেন। চিঠিতে কার্ল লিঞ্চ আফ্রিকার মাদাগাস্কারে তাঁর দেখা একটা মানুষখেকো গাছের বর্ণনা দেন। এই গল্প পরে আরো কিছু পত্রিকায় ছাপা হয়। চেজ ওজবোর্নের লেখা বই ‘মাদাগাস্কার, ল্যান্ড অব দ্য ম্যান-ইটিং ট্রি’ প্রকাশিত হওয়ার পর এই মানুষখেকো গাছ ব্যাপারটা বেশি পরিচিতি পায়। কিন্তু এসবই ছিল বানোয়াট গল্প।
[ দ্য
নিউবিয়ান ট্রি ]
ফিল রবিনসন ১৮৮১ সালে একটি বই
লেখেন “আন্ডার দ্যা পুঙ্খা” নামে। তিনি
বইটি লিখেছিলেন তার এক আত্মীয়ের বিশ্ব ভ্রমণের কাহিনীকে কেন্দ্র করে। সেখানে বলা
হয় - নীল নদের তীরে নুবিয়া নামক এক জায়গায় একটি মানুষখেকো গাছের দেখা পায় সে। গাছটি দেখতে কেমন, সেটি কি করে তার এক বন্ধুকে খেয়ে ফেলে এবং গাছটির সাথে লড়াই করে
কিভাবে বেঁচে ফেরেন তিনি সেই বর্ণনাই আছে বইটিতে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই গল্পটিও
বানোয়াট।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
[ দ্য
ভ্যাম্পায়ার ভাইন ]
এরপর মানুষখেকো গাছের কথা জানা যায় ব্রিটিশ জার্নাল ‘রিভিউ অব রিভিউ’-এর সম্পাদক উইলিয়াম থমাস স্টেডের লেখা থেকে। ১৮৯১ সালের কথা। উইলিয়াম থমাস তাঁর জার্নালে ‘দ্য ভ্যাম্পায়ার ভাইন’ নামে একটি ছোট প্রবন্ধে লেখেন নিকারাগুয়াতে ‘দ্য ডেভিলস্ স্নেয়ার’ নামে একটি গাছের খোঁজ পাওয়া গেছে। সেই গাছের কাছে কোনো জীবিত প্রাণী গেলে গাছটি নাকি তার রক্ত চুষে মেরে ফেলে। পরে অবশ্য বলা হয়, আসলে লুসিফার ম্যাগাজিনে এরকম কোনো লেখা ছাপাই হয়নি। তাই ‘দ্য ভ্যাম্পায়ার ভাইন’ ব্যাপারটাই একটি বানানো লেজেন্ড বলা চলে। এ তো গেল মানুষখেকো গাছের কথা, যা আদতে সম্পূর্ণ বানোয়াট একটি ধারণা। তবে মাংসখেকো উদ্ভিত কিন্তু আসলেই আছে।
[ কার্নিভোরাস
প্লান্ট ]
প্রতিকূল পরিবেশে জন্মাবার কারণে
এই ধরণের গাছ বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন মূল দ্বারা শ্বসন করতে পারে না।
শরীরে নাইট্রোজেনের চাহিদা পূরণ করার জন্য গাছগুলো বিভিন্ন ধরণের পোকামাকড় এমনকি
ছোট ছোট ইঁদুরকে পর্যন্ত শিকারে পরিণত করে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। মাংসখেকো এই
গাছগুলো এসব প্রাণীকে বিভিন্ন উপায়ে ফাঁদে ফেলে। প্রাণীগুলো যখন ফাঁদে আটকে মারা
যায় তখন এদের দেহ থেকে খনিজ উপাদান সংগ্রহ করার মাধ্যমে টিকে থাকে গাছগুলো।
নেপেন্থেস পিচার প্ল্যান্ট,
ক্যালিফোর্নিয়া পিচার প্ল্যান্ট, ড্রোসেরা, ভেনাস ফ্লাইট্রাপ, ইউট্রিকুলারিয়া
ব্লাডারওয়ার্ট মাংসখেকো উদ্ভিদের উল্লেখযোগ্য কিছু উদাহরণ। এদের শিকারকে ট্র্যাপে
ফেলার পদ্ধতিগুলোরই গালভর্তি সব নাম আছে। যেমন, পিটফল ট্র্যাপ, ফ্লাইপেপার ট্র্যাপ,
স্ন্যাপ ট্র্যাপ ও ব্লাডার ট্র্যাপ।