“Don't wake me for the end of the world unless it has very good special effects.” রজার জেলাজনির প্রিন্স অফ কেওস বইয়ের এই উক্তিটি অদ্ভুতভাবে পোস্ট-মডার্নিজমকে ডিফাইন করে। এই ধারণা মতে পৃথিবীটাই অর্থহীন, আধুনিক ধ্যান ধারণা ও থিওরি তো পরের কথা।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
পোস্ট-মডার্নিজম একটি জটিল ব্যাপার। একে নির্দিষ্ট কোন ডেফিনিশন দেওয়া যায় না। উত্তর আধুনিকতাকে একটি মুভমেন্টও বলা চলে। উত্তর আধুনিকতাকে বোঝার আগে আধুনিকতাকে বোঝা দরকার। আধুনিকতাবাদ একটি অ্যাস্থেটিক মুভমেন্ট। সহজ বাংলায় নান্দনিক আন্দোলন। আর্ট কালচার, মিউজিক, লিটারেচার, ড্রামাসহ নান্দনিকতার বিভিন্ন সেক্টরে প্রাচীন ভিক্টোরিয়ান ধ্যান-ধারণাকে রিজেক্ট করে দিয়ে নতুন একটি স্টাইল তৈরি করা। ১৯১০ থেকে ১৯৩০ পর্যন্ত সময়কালকে পিরিয়ড অফ হাই মডার্নিজম বলা হয়। এই সময়ে মডার্নিজমকে প্রতিষ্ঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন প্রুস্ত, জয়েস, উলফ, এলিয়টরা।
তারা ইম্প্রেশনিজম ও সাব্জেক্টিভিটির
উপরে গুরুত্ব দিতো। ‘কি দেখি’ এর থেকে ‘কিভাবে
দেখি’ ছিল বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। সে সময়ে সবকিছুই অ্যাবস্ট্রাক্টলি
প্রেজেন্ট করার একটি প্রচলন শুরু হয়। মডার্নিজমের আরো একটি
গুরুত্বপূর্ণ চেইঞ্জ দেখা যায়, উপন্যাসগুলোতে কাব্যিকতার একটি ছাপ চলে আসা।
মডার্নিজমকে এবারে উদাহরণ দিয়ে
বুঝানো যাক। আমরা সবাই-ই ভিনসেন্ট ভ্যান গগের আর্টের সাথে পরিচিত। তার মোস্ট ফেমাস
আর্টপিস ‘দ্য স্টারি নাইট’ কিন্তু একটি পিওর মডার্ন আর্ট। স্টারি নাইটের রাতের
আকাশে উজ্জ্বল চাঁদ ও ভেনাসের মাধ্যমে ভ্যান গগ মূলত মডার্ন পেইন্টিং এর মুড,
এক্সপ্রেশন, সিম্বল এবং সেন্টিমেন্টকে স্বাদরে গ্রহণ করার ব্যাপারটি বুঝিয়েছেন।
এবারে আসা যাক পোস্ট-মডার্নিজমে। উত্তর-আধুনিকতা শব্দের ব্যবহার সত্তর এবং আশির দশকের মধ্যে দেখা যায়। কালচার, আর্ট, ফিলোসফি ও লিটারেচারকে আধুনিকতাবাদের বিপরীতে নিয়ে নতুনভাবে স্টাইলাইজ করা হয়। 1979 সালে ‘দ্য পোস্টমডার্ন কন্ডিশন’ নামে জন-ফ্রাঁসোয়া লিওটার্ডের একটি লেখার মাধ্যমে উত্তর-আধুনিকতা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ইংরেজ চিত্রশিল্পী জন ওয়াটকিন্সসহ বেশ কয়েকজন এর নাম দেন পোস্ট-মডার্নিজম। তবে ক্রিটিক্স রজার ফ্রাই পরামর্শ দিয়েছিলেন পোস্ট-ইম্প্রেশনিজম নামটি ব্যবহার করার জন্য।
অনেক জনপ্রিয় লেখক তাদের লেখায় পোস্টমডার্নিজম তুলে এনেছে। যেমন – ফ্রানয কাফকা, ইটালো ক্যালভিনো, মিলান কুন্দেরা, সালমান রুশদি, ফিলিপ কে ডিক, হারুকি মুরাকামি, মার্গারেট অ্যাটউড, ওরহান পামুক, উমবার্তো একো, চাক পালানিয়াক। পোস্ট-মডার্নিজমকেও এবারে একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাক। তবে আর্ট দিয়ে বোঝানোর থেকে কবিতা দিয়ে বোঝানো বেটার। কারণ বেশিরভাগ পোস্টমডার্ন আর্ট লিটারেলি ভাওতাবাজি ছাড়া কিছুই না। সত্যজিত রায় তার একটি ছোটগল্পে সার্কাজমের মাধ্যমে পোস্টমডার্ন আর্টের চমৎকার সমালোচনা করেছিলেন।
যাই হোক, মার্কিন কবি ল্যাংস্টন হিউজের পোস্টমডার্ন কবিতা ‘সুইসাইড’স নোট’ এর তিনটি লাইনের দিকে দেখা যাক।
The calm,
Cool face of the river
Asked me for a kiss.
এই তিনটি লাইন যদি লিটারাল অর্থে
দেখা হয়, তাহলে মনে হবে জীবনানন্দ দাশের মতো নদীর সৌন্দর্যের প্রতি কবি তার আবেগঘন
ভালোবাসা জানাচ্ছে। কিন্তু আসলে রুপক অর্থে কবি একজন ডিপ্রেসড মানুষের জীবনের
আশাহীনতা, আত্মহত্যা প্রবণতা ও মৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানানোর ইচ্ছাকে প্রকাশ করছে
এখানে।
আশা করি, মডার্নিজম এবং
পোস্ট-মডার্নিজম সম্পর্কে আপনাদেরকে একটু হলেও ধারণা দিতে পেরেছি।