ভারতে অনেক ধরণের জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। বহু বছর ধরেই তারা মিলেমিশে থাকছে। কিন্তু কয়েকটি কমিউনিটির সাথে ইন্ডিয়ান গভমেন্টের সিরিয়াস গ্যাঞ্জাম আছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে শিখ কমিউনিটি। বর্তমানে পুরো ভারতজুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে তাদের বসবাস হলেও, মূলত পাঞ্জাব স্টেট পুরোটাই তাদের দখলে। তাদের সাথে ভারত সরকারের গ্যাঞ্জাম এতটাই গুরুতর যে, তারা রীতিমত আলাদা রাষ্ট্র চায়। যার নামও তারা ঠিক করে ফেলেছে; খালিস্তান। এরসাথে মিলিয়েই তাদের মুভমেন্টের নামও রাখা হয়েছে খালিস্তান মুভমেন্ট।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
২০২৩ এর জুনে খালিস্তানি নেতা
হারদীপ সিং নিজ্জারকে কানাডার মাটিতে গুলি করে খুন করা হয়। এরপর কানাডার
প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডো সেই দায় চাপিয়ে দেয় ভারত সরকারের উপরে। যদিও ভারত সেই
অভিযোগকে অবিশ্বাস্য বলে অস্বীকার করেছে।
ভারত সরকার ও শিখদের মধ্যে ব্যাপারটা
আসলে এই পর্যায়ে পৌছালো কি করে? মূলত পাঞ্জাব অঞ্চলেই বসবাস ছিল শিখ
ধর্মাবলম্বীদের। উনিশশো সাতচল্লিশ সালের দেশ ভাগের সময় পাঞ্জাবকে দুই ভাগে ভাগ করা
হয়েছিলো। সারা বিশ্বে এখন প্রায় আড়াই কোটি শিখ ধর্মাবলম্বী আছেন। ধর্ম বিশ্বাসের
দিক থেকে এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ধর্মীয় সম্প্রদায়।
ভারতের বাইরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিখ বাস করে কানাডায়, যার সংখ্যা প্রায় সাত লাখ আশি হাজার। এটি কানাডার মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই শতাংশ। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বাস করে আরও প্রায় পাঁচ লাখ। এর বাইরে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন প্রায় দু লাখ শিখ ধর্মাবলম্বী।
যাই হোক, ঝামেলার শুরু আরো প্রায় ৫০ বছর আগে। ভারতের পাঞ্জাবে ১৯৮০-র দশকে এ আন্দোলন উত্তাল হয়ে উঠেছিলো। এর জের ধরে অনেক গণ্ডগোল হয়েছিলো এবং মারা গিয়েছিলো হাজারো মানুষ। কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানের পর এ আন্দোলন থেমে গিয়েছিলো। ওই আন্দোলনের পর থেকে আধুনিক পাঞ্জাবের রাজনীতির গতি প্রকৃতিতে চেইঞ্জ আসে। বর্তমানে দেশিদের থেকে বিদেশে অভিবাসী শিখরাই বরং আলাদা রাষ্ট্রের দাবিতে বেশি সোচ্চার। ভারত খালিস্তান আন্দোলনের বিরোধিতা করছে শক্তভাবে। এমনকি পাঞ্জাবের পলিটিকাল দলগুলিও এর বিরোধিতা করছে। তবে এই দীর্ঘ উত্তেজনার জের ধরে আধুনিক ভারতের ইতিহাসে দুটি মারাত্মক বিতর্কিত ঘটনার জন্ম হয়েছে। এর একটি হলো অমৃতসর স্বর্ণ মন্দির অভিযান এবং অন্যটি হলো ইন্দিরা গান্ধী হত্যাকাণ্ড।
১৯৮৪ সালের জুনে শিখদের পবিত্রস্থান স্বর্ণ মন্দিরে অভিযান চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং সেখানে আশ্রয় নেয়া খালিস্তানি নেতাদের বের করে দেয়। এর জের ধরে অনেক রক্তপাত ও হত্যাকাণ্ডও হয়। বড় ধরণের ক্ষতি হয় স্বর্ণ মন্দিরের। এই অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন তখনকার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ওই অভিযানের কয়েকমাস পর নিজেরই দুই শিখ বডিগার্ডের গুলিতে মারা যান ইন্দিরা গান্ধী। এ ঘটনার জের ধরে চার দিন ধরে দেশজুড়ে ব্যাপক দাঙ্গা হয় ভারতে। কয়েক হাজার মানুষ মারা যায়, যার বেশিরভাগই ছিল শিখ। সংখ্যায় যা প্রায় সতের হাজার। তবে ভারতের সব রাজনৈতিক দলই শিখ স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরুদ্ধে। যে কারণে দেশটির কোনও সরকারই খালিস্তান ইস্যুকে আমলে নেয় নি কখনো।
কানাডার নাগরিক ৪৫ বছর বয়সী হরদীপ
সিং নিজ্জরকে গত ১৯ জুন কানাডার সারেতে একটি গুরদোয়ারার পার্কিং লটে গুলি করে মারা
হয়। নিজ্জরের জন্ম হয়েছিলো পাঞ্জাবের জলন্ধরের ভারসিংপুর গ্রামে। তবে বহু বছর তিনি
ভারতে আসেননি। কয়েক বছর আগে তার জলন্ধরের সম্পত্তিও ভারত সরকার বাজেয়াপ্ত করে
নেয়। হরদীপ সিং নিজ্জর ভারত সরকারের কাছে একজন ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গি হিসেবে মার্কড
ছিলেন – তিনি ‘খালিস্তান টাইগার ফোর্স’ বা কানাডাতে ‘শিখস ফর জাস্টিস’ এর মতো
দলগুলোর প্রধান ছিলেন। এরপর থেকেই আবারও উত্তাল রূপ ধারণ করেছে খালিস্তান
মুভমেন্ট। তিনি মারা যাওয়ার পর থেকেই খালিস্তান মুভমেন্ট আরো একবার মাথাচাড়া দিয়ে
উঠছে। এখন দেখার বিষয় এবারে পানি কতদূর গড়ায়।