আমাদের দেশে এই মূহুর্তে একটা জিনিস শুধু নামেই আছে, কাজ-কর্মে তাদের কোনরকম নামগন্ধই নেই। এমনকি তারা নিজেরাই নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহে আছে। বলুন তো কোন জিনিসটার কথা বলছি? নাহ, আমি কিন্তু বিএনপির কথা বলছি না। বলছিলাম বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার কথা। সে যাই হোক, অস্তিত্ব সংকট বা Existential Crisis আসলে কি? চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
সহজ কথায়, এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস হচ্ছে এমন এক ধরণের ইনার কনফ্লিক্ট, যার কারণে মানুষ জীবনের অর্থ খুঁজে পায় না। আবার অনেকক্ষেত্রে পার্সোনাল আইডেন্টিটি নিয়েও কনফিউজড হয়ে পড়ে। কী করছে, কেন করছে তার মানে খুঁজতে থাকে। এই অবস্থায় অনেক ধরণের সিম্পটম দেখা দেয়। যেমন – দুশ্চিন্তা করা, ডিপ্রেসড হয়ে পড়া, লোনলিনেস ফিল করা, এনার্জি ও মোটিভেশনের অভাব অনুভব করা, বন্ধুবান্ধব ও কাছের মানুষজন থেকে নিজেকে সড়িয়ে নেওয়া।
অস্তিত্ব সংকটের রুট মিশে আছে অস্তিত্ববাদের ফিলোসফিতেই।
১৮৪৪ সালে ডেনিশ ফিলোসফার সোরেন কির্কেগার্ড এই ব্যাপারে বলেছিলেন, “যে ব্যক্তি
সঠিক উপায়ে দুশ্চিন্তা করতে শিখে গেছে, সে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।” এই কথার
মাধ্যমে অস্তিত্ব সম্পর্কিত দুশ্চিন্তা যে সাধারণ কোন দৈনন্দিন সমস্যা না সেটাই
বোঝানোর চেষ্টা করেছেন তিনি।
বিভিন্ন কারণে অস্তিত্ব সংকট দেখা দিতে পারে। যেমন - চাকরি
চলে যাওয়া, কাছের কারো মৃত্যু, বড় ধরণের কোন অসুখ, ডিভোর্স। মাঝবয়সে এসেও অনেকে
এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিসে ভোগে। যাকে মিডলাইফ ক্রাইসিসও বলা হয়।
তবে বোর্ডারলাইন ও ওসিডি ডিজঅর্ডারের রোগীদের মধ্যে এই সমস্যা
বেশি দেখা যায়।
গল্প-সিনেমাতেও বহুবার উঠে এসেছে অস্তিত্ব সংকটের উদাহরণ। ফাইট
ক্লাবে এডওয়ার্ড নর্টনের চরিত্রটাই যেমন। ইনসোমনিয়া ও ডিপ্রেশনে ভুগতে ভুগতে সে
নিজের অস্তিত্ব নিয়েই সংকটে পড়ে যায় একসময়। ইনারিতুর বার্ডম্যানে আমরা দেখতে পাই
একজন অভিনেতার অস্তিত্ব সংকটে ভোগার গল্প। কুরোসাওয়ার ইকিরুতে দেখতে পাই মিডলএইজ
একজন ক্যান্সার পেশেন্টের অস্তিত্ব সংকটে ভোগার গল্প।
অস্তিত্ব সংকট সমাধানের নির্দিষ্ট কোন ট্রিটমেন্ট নেই। তবে
কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি এবং মেডিটেশন কিছুটা হেল্পফুল হতে পারে এই ক্ষেত্রে।
এছাড়াও কাছের মানুষদের থেকে দূরে না থেকে, কাছাকাছি থাকলে দ্রুত খারাপ অবস্থা
কাটিয়ে ওঠা যায়।
তবে অস্তিত্ব সংকট যে সবসময় খারাপ ফলাফলের দিকেই নিয়ে যায় তা নয়। এক্সট্রিম লেভেলের অস্তিত্ব সংকট হয়তো সেটা করে। কিন্তু অনেক সময় অস্তিত্ব সংকটের কারণে মানুষজন জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ডিসিশন নেন। যা আল্টিমেটলি তার জীবনে ভালো কোন রেজাল্টই নিয়ে আসে। স্টিভ জবসকে কে না চেনে? তিনি ছিলেন পৃথিবীর অন্যতম সফল একজন উদ্যোক্তা। এইটিজের দিকে তাকে যখন অ্যাপল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল, তখন তিনি অস্তিত্ব সংকটে ভুগেছিলেন। সেই সময়টাকে বলা হয় তার জীবনের মরুভূমি। সেই অস্তিত্ব সংকট থেকেই তিনি জীবনকে নতুন করে দেখতে শিখেন। অ্যাপলকে ভুলে গিয়ে ‘নেক্সট কম্পিউটার’ ও ‘দ্য গ্রাফিকস গ্রুপ’ নামে দুটো কোম্পানি গড়ে তোলেন। এই গ্রাফিকস গ্রুপই পরে হয়ে ওঠে আজকের পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিও। দুটো কোম্পানিই দারুণ সাফল্য পায়। যার কারণে একসময় তাকে আবারও অ্যাপলে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর তার হাত ধরে অ্যাপল কোম্পানি আকাশচুম্বী সাফল্য পায়। এই সময়ে আইফোন, আইম্যাক, আইপড ও আইপ্যাডের মতো গ্রাউন্ডব্রেকিং প্রোডাক্ট বাজারে আসে স্টিভ জবসের হাত ধরেই।