সমুদ্রের মাঝে এক শহর, নাম তার আটলান্টিস। জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-বাণিজ্যে সমৃদ্ধশালী সে শহর। সেখানে আধুনিক জীবনধারা ও উন্নত সমাজ ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিলো আজ থেকে প্রায় ১২ হাজার বছর আগেই। পুরো আটলান্টিস শহর ঘিরে ছিলো সুনিপুণ কারুকার্য মন্ডিত অট্টালিকার সারি। তাদের রাজপ্রাসাদটি ছিলো একটি সুউচ্চ টিলার উপরে। আটলান্টিয়ানদের ছিলো অসংখ্য দক্ষ সৈনিক। ধারণা করা হয়, চমৎকার উন্নত এই শহরটি হুট করেই সমুদ্রের গহ্বরে হারিয়ে যায়। খ্রীষ্টপূর্ব ১৫০০ সালে এক বড়সড় ভূমিকম্পের ফলে আটলান্টিসের করুণ সমাপ্তি ঘটে।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
সোনায় মোড়ানো শহর আটলান্টিস। আটলান্টিস সম্পর্কে আজকের দিনে যতটুকুই জানা যায় তা পুরোটাই বেসিক্যালি প্লেটোর রচনা থেকে নেওয়া। প্লেটো ছাড়া আর কোন ঐতিহাসিক আজ পর্যন্ত আটলান্টিসের কোন লিখিত বর্ননা দিতে পারেন নি। কিন্তু দুখের ব্যাপার হলো আটলান্টিস সম্পর্কে সম্পূর্ন তথ্য এখন আর পাওয়া যায় না। কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে আটলান্টিসের বেশিরভাগ তথ্য।
আটলান্টিস শহর একসময় সত্য হলেও এখন তা রুপকথার মতো কেবলই গল্প। আমরা এমন অনেক শহরের কথা শুনেছি কিংবা দেখেছি যা ভাটার সময় পানির নীচ থেকে উঠে আসে আবার জোয়ারের সময় তলিয়ে যায়। কিন্তু আটলান্টিস এমন এক শহর যেখানে ধারনা কথা হয় শহরটি সবসময় পানির নীচেই ছিলো। আটলান্টিসের মানুষজন জলে ও ডাঙ্গায় দুজায়গাতেই থাকতে পারতো। তারা টেকনোলজির দিক থেকে ডাঙ্গার মানুষের চাইতে এগিয়ে ছিলো বহুদূর। আর সেই পুরো আটলান্টিস সভ্যতা ছিলো সোনায় মোড়ানো। প্রতিটা বাড়িঘরের কারুকার্যে থাকতো সোনায় খোদাই করা বাহারি ডিজাইন।
অনেকের মতে আটলান্টিস শহর পানির নীচে আছে বটে কিন্তু এই শহর সবসময় পানির নিচেই ছিলো না। শহরটি ছিলো সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায়। কিন্তু কোন ভূমিকম্প কিংবা জলোচ্ছ্বাসের কারনে তা পানির নীচে ডুবে যায়। কিন্তু আটলান্টিসের মানুষযে পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের মানুষের তুলনায় জ্ঞান বিজ্ঞান কিংবা ধন সম্পত্তির দিক থেকে এগিয়ে ছিলো সেই ব্যপারে কারোই কোন সন্দেহ নেই।
প্রায় এগারো হাজার বছর আগে আটলান্টিক মহাসাগরের কোন এক দ্বীপ নগরী ছিল আটলান্টিস। আটলান্টিসের কথা প্রথম জানা যায় প্লেটোর ডায়লগ টিমিয়াস এন্ড ক্রিটিয়াস এ। এখানে তিনি বলেন আটআন্টিস প্রায় নয় হাজার বছর পূর্বে কোন ভূমিকম্প বা সুনামিতে ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি বলেন আটলান্টিসের আবস্থান ছিল পিলার অফ হারকিউলিসের আশে পাশে।
আটলান্টিসের খোঁজে অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণা আর অনুসন্ধান চলেছে। হারানো আটলান্টিসের হাজারো অবস্থান চিহ্নিত করেছেন অনেক প্রত্নত্তবিদরা। কিন্তু কেউই জোর কোন প্রমাণ দেখাতে পারে নাই। ১৯৬৮ সালে এগার ক্যাচি তার বই অন আটলান্টিস এ দাবি করেন তিনি মিশরের নীল নদ এবং স্ফিংস এর মূর্তির মাঝে হল অব রেকর্ডস অবিষ্কার করেন যা তিনি দাবি করেন আটলান্টিসের ধ্বংসাবশেষ।
আসলেই কি আটলান্টিসের কোন অস্তিত্ব ছিল? ম্যাক্রাইন এসার গুরূর্ত্বপূর্ণ কিছু সংবাদ সংষ্থাকে জানান তার অনুসন্ধান দলের স্কুবা ডাইভাররা সমুদ্রের তলদেশ থেকে আটলান্টিসের নিদর্শন উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। এই নিদর্শন ঘুলোর মধ্যে ছিল স্তম্ভ আর প্লেটোর বর্ণণা করা সপর্লি রাস্তা
এছাড়াও বিভিন্ন প্রাচীন ম্যাপে আটলান্টিস ভুখন্ডের উল্লেখ আছে। এমনকি কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কারের সময় যেই ম্যাপ ব্যবহার করেছেন সেই ম্যাপেও পাওয়া যায় আটলান্টিসের নাম। মায়া, মিশর, আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন দ্বীপ এর প্রাচীন বই পত্র আর পুঁথি পুরানে সমুদ্রের মাঝে আটলান্টিস ভুখন্ডের উল্লেখ এবং এই ভূখন্ডের মানুষের সাথে বানিজ্যিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ আছে।
এক সময় এইসব বিষয়কে হাসি তামাসা করে উড়িয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু আটলান্টিসের মানূষের বর্ননা মতো আটফুট উঁচু মানুষের কঙ্কাল আবিষ্কার হয় স্পেইনে। এর পর পরই সবার টনক নড়ে যায়।
এর ঠিক পরপরই বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী প্রাচীন ম্যাপে উল্লেখিত আটলান্টিসের আশপাশেই পানির নীচে ছোট ছোট পিরামিড এবং ডোম আকৃতির কিছু নিদর্শন খুঁজে পান। এর সাথে আরো কিছু আয়তাকার ভবনেরও খোঁজ পান।অপরিচিত কিছু শাতব যন্তপাতি তাদের রীতিমতো চমকে দেয়। কারন এই যন্ত্রপাতিগুলোর মধ্যে একটি এমন যন্ত্র আছে যা একটি ক্রিস্টাল দন্ডেস সাথে সংযুক্ত। ধারনা করা হয় ক্রিস্টাল দন্ডবাহী যন্ত্রটি এর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত শক্তিকে দ্বিগুন তিনগুন করতে সক্ষম। বিজ্ঞানিদের মনেও প্রশ্ন জাগে আটলান্টিসের মানুষ কি তাহলে এতটাই টেকনোলজিক্যালি এডভান্স ছিলো? নাকি এলিয়েন এসে আটলান্টিসে বসত গড়েছিলো!
অনেক ঐতিহাসিকদের মতে আটলান্টিয়ানরা পঞ্চাশ হাজার বছর আগে অন্য কোন গ্রহ থেকে পৃথিবিতে এসেছিলো। তাদের শারীরিক গঠন মানুষের মতোই ছিলো কিন্তু দেহের দৈর্ঘ্য ছিলো আট থেকে বারো ফুট যা স্বাভাবিক মানূষের দ্বিগুন। বুক অব জেনেসিস থেকে জানা যায় এদের আয়ুকাল ছিলো আটশ থেকে একহাজার বছর। প্রায় সব প্রাচীন সভ্যতায় দৈত্যাকৃতি মানুষ জাতির কথা বলা আছে। এসব ৮ থেকে ১২ ফুট লম্বা মানুষের উপকথা গুলোকে মিথ ভাবা হতো। কিন্তু ১২ ফুট লম্বা মানুষের কিছু কঙ্কাল আবিষ্কৃত হওয়ায় প্রত্নতাত্ত্বিকরা বিস্মিত হন এবং বিজ্ঞানীরাও নড়েচড়ে বসেন। এছাড়াও স্প্যানিশ অভিযাত্রীদের লিপিবদ্ধ ইনকা অভিযানের ঘটনায় ৮-১২ ফুট লম্বা সোনালী চুল এবং নীল চোখের মানুষের বর্ণনা পাওয়া যায়।
ধারনা করা হয় আটলান্টিয়ানরা প্রযুক্তি জ্ঞান বিজ্ঞানে অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতা থেকে একে বারেই অন্য উচ্চতায় ছিল। তাদের প্রযুক্তির মধ্যে অন্যতম হলো প্রকৃতি নিয়ন্ত্রন করতে পারা। যার মাধ্যমে তারা প্রচুর খাদ্য শস্য উৎপাদন করতে পারতো। কথিত আছে তারা এই প্রযুক্তি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি ব্যবহার করার যলে প্রকৃতির ওপর তাদের নিয়ন্ত্রন এক সময় হ্রাস পায়। মূলত তার ফলেই অগ্নুৎপাত, ঝড় ও জ্বলোচ্ছাসের কবলে পরে সভ্যতাটি পানির নীচে ডুবে যায়।