কখনো কি ভেবেছেন আপনার প্রিয়
ক্লাবটির ডাকনাম আসলো কোত্থেকে? ‘রেড ডেভিল’ বাংলা করলে হয় লাল শয়তান। তবে ফুটবলের
পাড় ভক্তদের কাছে রেড ডেভিল মানে স্যার আলেক্স ফার্গুসনের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
১৯৬০ সালে স্যার ম্যাট বাসবি তার দলের প্লেয়িং স্টাইলের সাথে ম্যাচ খাওয়ার কারণে
এই নামটি রাখেন। তেমনি গানার্স বলতে সবাই চেনে আর্সেনালকে। এই ক্লাবে শুরুর দিকে
আর্মিরা খেলার কারণে এর ডাকনাম হয়ে যায় গানার্স।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
ফুটবলে আপনি কোন দলের সাপোর্টার? ধরে নিলাম আপনি রিয়াল মাদ্রিদ কিংবা বার্সেলোনা সমর্থন করেন। কখনো কি ভেবে দেখেছেন ক্লাব দুটির ডাকনাম কেন দ্য হোয়াইট ও কিউলস?
১. ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড – রেড ডেভিল
ফুটবল বোদ্ধাদের কাছে ‘রেড ডেভিল’ নামে খ্যাত স্বনামধন্য ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। বেশিরভাগের মতে, এই ডাকনামের উৎপত্তি ঘটেছে ফার্গির আমলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ডেভিল মনোভাবের জন্যই। আদতে এই নামের ইতিহাস ঘাটতে হলে আমাদের যেতে হবে আরও পেছনে।
অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, রেড ডেভিল নামের ইতিহাসটি সম্পূর্ণ ভিন্ন এক খেলার সাথে জড়িত। সালফোর্ড রাগবি টিম নামে এক রাগবি দল সর্বপ্রথম এই উপাধি অর্জন করে। ১৯৩৪ সালে ফ্রান্সে খেলতে যাওয়া এই দলের বিধ্বংসী মনোভাব দেখে এক ফরাসি সাংবাদিক তাদের রেড ডেভিল বলে আখ্যায়িত করেন। সেই সময় ইউনাইটেডের নিকনেম ছিলো ‘দ্য হিডেনস’। ১৯৬০ সালে স্যার ম্যাট বাসবির ‘রেড ডেভিল’ নামটি পছন্দ হয়ে যায় এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে নামটি বেশ ভালোভাবেই খাপ খায় বলে তিনি নিজেই ‘রেড ডেভিল’ নামটি ঠিক করেন। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে এই ইংলিশ ক্লাব আনুষ্ঠানিকভাবেই ‘রেড ডেভিল’কে নিজেদের ডাকনাম হিসেবে ঘোষণা করে।
ম্যানচেস্টার
ইউনাইটেড ছাড়াও বেলজিয়াম, বেলারুশ
ও কঙ্গো জাতীয় ফুটবল দলও এই নামে পরিচিত।
২. জুভেন্টাস – তুরিনের ওল্ড লেডি
ঐতিহাসিক সাদা-কালো জার্সির জন্য জুভেন্টাসকে বিয়ানকোনেরি নামে ডাকা হয়। তাছাড়াও ইতালিয়ান জায়ান্টদের বলা হয় তুরিনের ওল্ড লেডি। কিন্তু কেন?
ডাকনাম ওল্ড হলেও ইতালিয়ান ভাষায় জুভেন্টাস শব্দের অর্থ তরুণ। তবে ক্লাবটির এমন ডাকনামের ইতিহাস রচিত হয়েছিল ১৯৩০ সালে। তৎকালীন সময়ে তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের দলে না ভিড়িয়ে বয়স্ক ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের বেশি দলে টানত জুভেন্টাস। এরপর থেকেই তাদের নামের সাথে ওল্ড শব্দটি যুক্ত হয়।
অন্যদিকে
রুপক অর্থে লেডি শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। মূলত সমর্থকদের ক্লাবের প্রতি ভালবাসা
বোঝানোর জন্য এর ব্যবহার।
৩. আর্সেনাল – দ্য গানার্স
১৮৮৬ সালে টেমসের দক্ষিণে অবস্থিত উলউইচের কিছু কারখানার কর্মীদের নিয়ে তৈরি হয়েছিল পেশাদার ফুটবল ক্লাব আর্সেনাল। সেই সময় দলে কিছু সৈন্যও ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ক্লাবটির নাম দেওয়া হয় দ্য গানার্স।
গানার্স
শব্দের আভিধানিক অর্থ গোলন্দাজ। আর্সেনালের লোগোতে একটি কামানের ছবি দেখতে পাওয়া
যায়। যা প্রমান করে, ক্লাবটির সঙ্গে সামরিক কিছু বিষয় জড়িত রয়েছে।
৪. বার্সেলোনা – কিউলস
কাতালুনিয়ার অন্তর্গত এই ক্লাবটিকে কিউলস নামে অনেকে চিনে থাকে। তবে এই উপাধি পাওয়ার পেছনে বেশ হাস্যকর কাহিনী রয়েছে। কিউলসের আভিধানিক অর্থ যারা পশ্চাৎদেশ দেখায়। এই অদ্ভুত নামের পেছনে দায়ী তৎকালীন সময়ে বার্সেলোনার ছোট আকারের স্টেডিয়াম। সেই সময় বার্সেলোনার স্টেডিয়ামটি এতই ছোট ছিলো যে দর্শকদের জায়গা সংকুলান হতো না। বিশেষ করে যারা শেষ সারিতে বসতো তাদের পশ্চাৎদেশ স্টেডিয়ামের বাইরের লোকজন দেখতে পেতো। সেই থেকে মানুষজন কিউলস বলে ডাকা শুরু করে এই কাতালান ক্লাবটিকে।
কিউলস
ছাড়াও আজুলগ্রানা নামে আরেকটি কম জনপ্রিয় নামও রয়েছে বার্সেলোনার। বার্সেলোনার
নীল–লাল জার্সিকে বোঝাতে এই নামটি ব্যবহার করা হয়।
৫. রিয়াল মাদ্রিদ - দ্য হোয়াইট/মেরেঙ্গুয়েজ
রিয়াল
মাদ্রিদের দুটি ডাকনামই তাদের ঐতিহাসিক সাদা জার্সিকে প্রতিনিধিত্ব করে। ‘দ্য
হোয়াইট’ নামে ডাকার পাশাপাশি ‘মেরেঙ্গুয়েজ’ নামেও ডাকা হয় স্প্যানিশ এই ক্লাবটিকে।
মেরেঙ্গুয়েজ স্প্যানিশ এক জনপ্রিয় মিষ্টান্ন। ডিম ও চিনি দিয়ে তৈরি এই
মিষ্টান্নটিও দেখতে সাদা।
৬. লেস্টার সিটি – দ্য ফক্সেস
২০১৪
সালে যখন লেস্টার সিটি অনেকদিন পর আবার প্রিমিয়ার লীগে উত্তীর্ণ হলো তখন অনেকেরই
জিজ্ঞাসা ছিলো তাদের কেন ‘দ্যা ফক্সেস’ নামে ডাকা হয়। ২০১৫-তে প্রিমিয়ার লিগ জয়ী
এই দলের ডাকনামটি মূলত ক্লাবের উৎপত্তিস্থল থেকেই নেওয়া। লেস্টার সিটি নামের
ক্লাবটি গঠিত হয় ইংল্যান্ডের লেস্টারশায়ার নামের এক শহরে। ১৭৫৩ সাল থেকেই ইংল্যান্ডের
এই শহরটি শিয়াল শিকারের জন্য জগদ্বিখ্যাত ছিলো। সেই থেকে ১৯২০ সালে ’দ্য ফক্সেস’
নামটি উত্তরাধিকার সূত্রে ব্যবহার শুরু করে লেস্টার সিটি। এমনকি ক্লাবের লোগোতেও
রয়েছে একটি শিয়ালের মুখ।
৭. সেল্টিক – দ্য ভয়েজ
১৮৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সেল্টিক ক্লাব সেই সময়েই বোল্ড বয়েজ নামে
পরিচিত ছিলো। কিন্তু বোল্ড বয়েজ উচ্চারণে তা অনেকটা ইংলিশদের মতো হয়ে যায় বিধায়
এতে পরিবর্তন আনার পক্ষপাতী ছিলেন সেই সময়ের ক্লাব সভাপতি পিজে কিলিয়ান। পরবর্তীতে
বোল্ড কথাটি তুলে দিয়ে বয়েজ কথাটিতে আইরিশ টান আনার জন্য বি এর পর একটি এইচ অক্ষর
সংযুক্ত করা হয়। আর তাতেই এর উচ্চারণ দাঁড়ায় ভয়েজ। এই ঘটনার পর থেকে সেল্টিক ‘দ্য
ভয়েজ’ নামেই বিশ্বে সমাদৃত হয়।