অদ্ভুত সব ভয়ের নাম। এমন কেউ কি আছে, যে কোন কিছুকেই ভয় পায় না? Most Weird Phobia

Author
0

 


“ফোবিয়া” যার অর্থ “অমূলক ভীতি”

পৃথিবীতে এমন অসংখ্য মানুষ আছেন যাঁরা খুব অদ্ভুত কিছু বিষয়কে ভয় পান এবং সারাক্ষণ তা নিয়ে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে থাকেন। চিকিত্সা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে “ফোবিয়া। ফোবিয়া একধরণের মানসিক ব্যাধি। যা অজান্তেই আমাদের মনে বাসা বাঁধে, বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে। ফোবিয়া শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ “ফোবোস” থেকে। ফোবোস অর্থ ভয়। খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ সালের কাছাকাছি সময়ে বাইজান্টাইন সম্রাট “হেরাক্লিয়াস” এর একটি অযৌক্তিক ভয় ছিল যে, তিনি সম্ভবত পানিতে ডুবে যেতে পারেন।


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



গবেষণা বলছে, বিশ্বজুড়ে ৮ থেকে ১৮ শতাংশের মতো মানুষ কোনো না কোনো ফোবিয়ায় আক্রান্ত। নারীদের মধ্যে একে সবচেয়ে কমন মানসিক সমস্যা হিসেবে ধরা হয়। ১ থেকে ৩ শতাংশ শিশু সোশ্যাল ফোবিয়ায় আক্রান্ত। ফোবিয়া অনেক ধরনের হয়ে থাকে। সাধারনত রোগী নিজেও জানেন না যে তিনি কোনো এক ফোবিয়াতে আক্রান্ত।

এ্যারাকনোফোবিয়া যার অর্থ মাকড়শাভীতি। নীরিহ এই প্রানীকে ভয়ের কিছু নেই যেনেও অনেকেই একে দেখে আৎকে ওঠে। এছাড়াও উচ্চতা ভীতি, রক্তভীতি, পানিভীতি এমন নানা রকম ফোবিয়া আছে। হয়তো এতক্ষণে অনেকেই রিলেট করতে পেরেছেন। তবে এসব ছাড়াও অদ্ভুদ বিচিত্র কিছু ফোবিয়া আছে পৃথিবীতে।

আপনি কাউকে প্রচন্ড ভালোবাসেন। কিন্তু কোনো এক কারণে তার সাথে আপনার বিচ্ছেদ হলো। আপনি ভেঙে পড়লেন। ভেবে নিলেন প্রচন্ড ভালোবাসলে হারাতে হয়। এই ভয়টাই আপনার মনে এক ভয়ের সৃষ্টি করলো। আপনি হয়তো জানেন না, এটাও একটা ফোবিয়া। যার নাম, “ফিলোফোবিয়া”

পৃথিবীজুড়ে একটা জরিপ করা হয়েছিল- মানুষ কোন কোন জিনিসকে সবচেয়ে ভয় পায়? এক নাম্বারে ছিল মৃত্যু। আর দুই নাম্বারে? পাবলিক স্পিকিং! দুর্ঘটনা, ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড ইত্যাদি ভয়াবহ জিনিসকে পেছনে ফেলে মৃত্যুর পর সবচেয়ে ভয়ের তালিকায় উঠে এসেছে- মানুষের সামনে মঞ্চে কথা বলা! গ্রিক ভাষায় “গ্লস” শব্দের অর্থ ‘জিহ্বা’। সেখান থেকেই সবার সামনে কথা বলতে ভয় পাওয়াকে বলা হয় “গ্লসোফোবিয়া”। অপরিচিত মানুষের সামনে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করাও গ্লসোফোবিয়ার লক্ষণ। এই ভয়টা কমবেশি আমাদের সবারই থাকে।

বিয়ে করতে অনেকেই ভয় পায়। কেউ বলে, বিয়ে করলেই নিজের স্বাধীনতা শেষ। কেউবা বিয়ে করতে ভয় পায়, অপরজন কেমন হবে না, হবে এই ভেবে। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই বিয়ে করতে ভয় পাওয়াটাও এক ধরনের ফোবিয়া! গ্রীক শব্দ “গামোস” থেকে এই ফোবিয়ার নামকরণ করা হয়, “গ্যামোফোবিয়া”।

আচ্ছা, এমন কি কখনো হয়েছে! অপরিচিত কেউ একজন আপনাকে কল করলো, আপনি কল ধরছেন না। ধরছেন না এই ভেবে, কে কল করলো? কি বলবে? কাকে চাইছে? আপনার সাথে এরকম না হলেও, অনেকেই আছে যে ফোনে কথা বলতে কমফোর্ট ফীল করে না। অনেকে আবার ম্যসেঞ্জার, হোয়াটসএপে অনেক বড় বড় মেসেজ লিখে কিন্তু ফোনে কথা বলতে ভয় পায়। নতুন একটা ড্রেস কিনেছেন। কিন্তু পড়ার সময় ভাবলেন, এটা পড়লে লোকে কি বলবে? এটাতে কি আমায় ভালো লাগবে? অথবা কোনো একটা ভালো কাজ করতে গিয়েও ভাবলেন, লোকে কি বলবে? এই যে সমালোচনার ভীতি, এটাকে বলা হয় “এলোডোক্সাফোবিয়া”। গ্রীক শব্দ, “এলোস” আর “ডক্সা” থেকে এই শব্দ এসেছে। যার অর্থ, অন্যের মতামত। আমাদের প্রায় সবার মাঝেই একটা ভয় কম বেশী কাজ করে। ব্যর্থতার ভয়। কোনো একটা কিছু শুরুর আগেই ভাবি, এটাকি আমি করতে পারবো? এই যে এই ভয়টা, এটাকে বলা হয় “এটিকিফোবিয়া” যার অর্থ ব্যর্থতাভীতি।

 


অনেকগুলো ফোবিয়ার সাথে পরিচিত হলাম। এর বাইরেও আরো অনেক ধরনের ফোবিয়া আছে। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, ফোবিয়া কেনো হয়? কিভাবে হয়? আমাদের মস্তিষ্কের মিডিয়াল টেমপোরাল লোবের গভীরে বাদামের মতো একটা জায়গা আছে। এর নাম অ্যামিগডালা। ভীতি, উদ্বেগ ইত্যাদি অনুভূতির জন্ম হয় এখান থেকেই। অ্যামিগডালা উদ্দীপ্ত হলে একধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়, যা আমাদের মনে ভীতির সঞ্চার প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই এই রেসপন্স সক্রিয়, সত্যি বলতে কি, কোনো বিপদে এই রেসপন্সই আমাদের সতর্ক করে দেয় সব সময়। কিন্তু ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের এই রেসপন্স শুধু অতিরিক্তই নয়, মাঝেমধ্যে অবান্তর ও অযৌক্তিকও।

এবার খুজে দেখুন, আপনার মাঝে এ ধরনের কোনো ফোবিয়া আছে কিনা? যা হয়তো নিজের অজান্তেই এতদিন ধরে বয়ে বেরাচ্ছেন।

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!