“মোলিনের বে আন্ডারওয়াটার স্কাল্পচার পার্ক” হল ক্যারিবিয়ান সাগরে অবস্থিত। পরিবেশগত আন্ডারওয়াটার সমসাময়িক শিল্পের একটি সংগ্রহ এবং এটি ব্রিটিশ ভাস্কর জেসন ডিকেয়ারস টেলর দ্বারা নির্মিত। 2006 সালের মে মাসে বিশ্বের প্রথম আন্ডার ওয়াটার স্কাল্পচার পার্কটি জনসাধারণের দেখার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। টেলরের লক্ষ্য ছিল স্থানীয় জনগণকে পানির নিচের পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত করা যা তাদের চারপাশে তার কাজগুলি ব্যবহার করে যা স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবন কাস্ট থেকে উদ্ভূত। তিনি সমুদ্রের তলদেশে কংক্রিট মূর্তি স্থাপন করেছিলেন, যার বেশিরভাগই মানবিক আকারের একটি পরিসীমা নিয়ে গঠিত, একাকী ব্যক্তি থেকে শুরু করে সমুদ্রের স্রোতের মুখোমুখি হওয়া শিশুদের হাত ধরে থাকা একটি আংটি পর্যন্ত।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্যারিবীয় অঞ্চলের একটি ছোট স্বাধীন দেশ ‘গ্রেনাডা”। ক্যারিবিয়ান সাগরের তলদেশে অবস্থিত একটি পার্ক, “মোলিনের আন্ডারওয়াটার স্কাল্পচার পার্ক”। ৬৫টিরও বেশি জীবিত মানুষের মতো দেখতে ভাস্কর্য আছে এখানে। ব্রিটিশ ভাস্কর ‘জেসন ডিকেয়ারস টেল’ এটিকে তৈরি করে। ২০০৬ সালে সকলের দেখার জন্য এই আন্ডারওয়াটার পার্কটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ভাস্কর্যগুলিকে এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেগুলোকে দেখলে মনে হবে পানির নিচের জন-জীবন। পানির নিচে কংক্রিটের তৈরি আলাদা আলাদা এই ভাস্কর্যগুলো ৮০০ বর্গ মিটারের বেশি এলাকা জুড়ে রয়েছে। এই ভাষ্কর্য গুলো এমন ভাবে তৈরী করা হয়ছে, যাতে করে এটি পরবর্তীতে এটি সামুদ্রিক প্রাণীদের আবাসস্থল হয়।
সময়ের সাথে সাথে সামুদ্রিক প্রবাল ভাষ্কর্য গুলোর সাথে লেগে লেগে সেগুলোর চেহারা পরিবর্তন করবে এবং এতে করে সমুদ্র পৃষ্ঠ যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনি সামুদ্রিক জীবদের জন্য এটি হবে অভয়ারন্য।
সিম্পোজিয়াম ম্যাগাজিনের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে: “আন্ডারওয়াটার স্কাল্পচার পার্ক এমন একটি প্রকল্প যার লক্ষ্য একটি অনন্য স্থান তৈরি করা যা পরিবেশগত প্রক্রিয়াগুলিকে হাইলাইট করে এবং শিল্প ও পরিবেশের মধ্যে জটিল সম্পর্কগুলিকে খুজে বের করে৷ এই অনন্য প্রকল্পটি তা সেটি খোজার জন্য একটি অতুলনীয় সুযোগ প্রদান করবে”। এই স্কাল্পচারগুলো প্রথমবার যখন পানির নিচে স্থাপ্ন করা হয়, তখন সেটি ঘুর্নিঝড় হারিকেনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পরবর্তিতে ১৬ টি কংক্রিটের মূর্তি স্থাপন সম্পন্ন হয়।
২০০৬ সালে ২২ ফুট গভীরতায় “দ্য লস্ট করেসপন্ডেন্ট”
মুর্তিটি স্থাপন করা হয়েছিল। সেখানে দেখা যায় টাইপরাইটারের সামনে একজন ডেস্কে বসে আছে।
২০০৬ সালে ২৫ ফুট গভীরতায় স্থাপিত “দ্য আনস্টিল লাইফ”। সেখানে দেখা যায় একটি টেবিল, ফুলদানি এবং ফলের বাটির মতো কিছু জিনিস। সময়ের সাথে সাথে যা এখন ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়েছে। এই পুরো স্কাল্পচার তৈরি করতে ছয় মাস সময় লেগেছিল। শক্তিশালী স্রোত এবং জোয়ারের চাপ সহ্য করার ক্ষমতা দিয়ে নির্মিত ভাষ্কর্য গুলো। একে অপরের হাত ধরে তৈরি বলয়াকৃতি জীবনের চলমান চক্রের ধারণাকে প্রতীকী করে তোলে।
২০০৭ সালে ২১ ফুট গভীরে স্থাপিত হয় আরেকটি ভাষ্কর্য “দ্য ফল ফ্রম গ্রেস”। এখানে একটি সাইকেল চালানো পুরুষের অবয়ব দেখা যায়। অনেকের মতে, পশ্চিম আফ্রিকা থেকে আমেরিকা মহাদেশে যাত্রার সময় মাঝপথে জাহাজ থেকে নিক্ষিপ্ত আফ্রিকান ক্রীতদাসদের উৎসর্গ করে বানানো হয়েছে এই পার্কটি। তবে ভাষ্করের দাবী, এটি তেমন কোনো উদ্দেশ্যে বানানো হয়নি। ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায় একে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে উদ্ভাবন করবে, এটাই তার আশা। ইতিহাসকে প্রশ্নবিদ্ধ বা বিতর্কিত করে, এমন কিছু তিনি চাননি। আসলে ভাষ্কর্য গুলো দেখলে বোঝা যায় এখানে কিছু মানুষ বৃত্তাকার ভাবে একজন আরেকজনের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সমুদ্রের স্রোতের মাঝেও সকলের এভাবে দাড়িয়ে থাকা একতা বা ধারাবাহিকতার ধারনা দেয়।