ইন্ডিয়ান বিজনেস টাইকুন মুকেশ আম্বানির ছেলে আনান্ত
আম্বানির প্রি-ওয়েডিং এ গুজরাটের জামনগরে বসেছিল তারকাদের মিলনমেলা। অনুষ্ঠানে
বিশেষ অতিথিদের যাতায়াতের জন্য রাখা হয়েছিল চার্টারড জেট। সেই প্রোগ্রামে দেখা
গিয়েছে পপ তারকা রিহানা, শাহরুখ খান, সালমান খান, আমির খান থেকে শুরু করে বিল গেটস, মহেন্দ্র সিং ধোনি, শচীন টেন্ডুলকার, মার্ক জাকারবার্গ, ইভাঙ্কা ট্রাম্প, সুন্দর পিচাই, গৌতম আদানির মতো নামিদামি লোকজনকেও।
জামনগর এয়ারপোর্টে নরমালি ডেইলি বেসিসে খুবই কম সংখ্যায়
প্লেন ওঠা-নামা করে। কিন্তু এই প্রোগ্রাম উপলক্ষে লাস্ট কয়েকদিনে ডেইলি প্রায় ৫০
টি করে ফ্লাইট ওঠা-নামা করেছে! এছাড়াও শোনা যাচ্ছে, পারফর্ম করার জন্য রিহানা একাই
নিয়েছেন ১০ মিলিয়ন ডলার। বলিউড তারকারাও বিশাল অঙ্কের পারিশ্রমিক নিয়েছেন। এমনকি তিন
খানকে একসাথে নাচতে দেখার মতো বিরল এক মুহুর্ত-ও তৈরি করে দেখিয়েছেন আম্বানি।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
১২শর বেশি অতিথিদের খাওয়ানোর জন্য পরিবেশন করা হয় আড়াই
হাজার পদের খাবার। নজর রাখা হয় সেইম ডিশ যেন সেকেন্ড টাইম রিপিট করা না হয়। থাই, মেক্সিকান, জাপানিজ, ফরাসি
ও এশিয়ান খাবার রেডি করার জন্য মোট ৬৫ জন শেফকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।
তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এটা আসলে মেইন বিয়ের প্রোগ্রাম
ছিল না। এটা ছিল জাস্ট প্রি-ওয়েডিং প্রোগ্রাম। আনান্ত আম্বানির সাথে রাধিকা
মার্চেন্টের মূল বিয়েটা হবে ১২ জুলাই। জাস্ট প্রি-ওয়েডিং প্রোগ্রাম দিয়েই বিশ্বের
সর্বকালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিয়ের রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে আম্বানি ফ্যামিলি। তবে এর
আগের রেকর্ডটিও তাদেরই ছিল। ২০১৮ সালে মেয়ে ঈশা আম্বানির বিয়েতে মুকেশ খরচ করেছিলেন
৭০০ কোটি রুপি। সেই প্রোগ্রামে ৯০ কোটি রুপি মুল্যের লেহেঙ্গা পড়ে ওয়ার্ল্ড রেকর্ড
গড়েছিলেন ঈশা আম্বানি।
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের ৪২ পারসেন্ট শেয়ারের মালিক মুকেশ
আম্বানি বর্তমানে বিশ্বের ১১তম ধনী ব্যক্তি। এশিয়ার মধ্যে তার থেকে বড়লোক নেই আর
কেউ। এত এত টাকার রহস্য কি? এই যাত্রার শুরুটাই বা হয়েছিল কোথায়। চলুন দেখে আসা
যাক।
মুকেশ আম্বানির বাবার নাম ধীরুভাই আম্বানি। যার হাত ধরেই
শুরু হয়েছিল রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের। ধীরুভাই ছিলেন তার বাবা-মায়ের পাঁচ
সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। তার বাবা ছিলেন গ্রামের স্কুল টিচার। ১৭ বছর বয়সে তিনি
তার ভাইয়ের সাথে কাজের উদ্দেশ্যে ইয়েমেনে চলে যান। সেখানে তিনি A. Besse &
Co. তে সামান্য ক্লার্ক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। সেখানেই
থাকতেই তিনি ট্রেডিং, অ্যাকাউন্টিংসহ বিজনেস রিলেটেড অন্যান্য
স্কিল ডেভেলপ করেন। ১৯৫৮ সালে ধীরুভাই ভারতে ফিরে আসেন এবং বোম্বেতে স্থায়ী হন।
এরপর ৫০-এর দশকের শেষ দিকে মশলার ব্যবসা দিয়ে ব্যবসায় হাতেখড়ি করেন। কোম্পানির নাম
দেন রিলায়েন্স কমার্শিয়াল কর্পোরেশন। এরপর ধীরে ধীরে অন্যান্য ব্যবসার দিকেও
ঝুকতে শুরু করেন। সিন্থেটিক টেক্সটাইল থেকে শুরু করে পেট্রোকেমিকেল, প্লাস্টিক,
ইলেকট্রিসিটির ব্যবসাও শুরু করেন। হাই ক্লাস প্রোডাক্ট বাজারের থেকে কম মুনাফায়
সাপ্লাই দেওয়ার কারণে রাতারাতি তার কোম্পানি ইন্ডাস্ট্রি কাপাতে শুরু করে। ৮০-এর
দশকের মাঝামাঝি সময়ে এসে সে দুই ছেলে মুকেশ ও অনিল আম্বানির হাতে ব্যবসা পরিচালনার
দায়িত্ব ছেড়ে দেন।
মুকেশ আম্বানি দায়িত্বে এসে প্রথমেই ইনফর্মেশন ও
কমিউনিকেশন টেকনোলজির দিকে বিজনেস এক্সপেন্ড করেন। ২০০৮ সালে শুরু হওয়া আইপিএলের
অন্যতম সফল ক্লাব মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সেরও মালিক তিনি। এছাড়াও ইন্ডিয়ান সুপার লিগেরও
ফাউন্ডার তিনি। ২০১২ সালে ফোর্বস তাকে ওয়ার্ল্ডের ওয়ান অফ দ্য রিচেস্ট স্পোর্টস
ওউনার্স হিসেবেও ঘোষনা দেয়। তিনি তার পরিবার নিয়ে মুম্বাইয়ে ‘অ্যান্টিলিয়া’ নামক
রাজপ্রাসাদসম যে ২৭ তলা বাড়িটিতে থাকেন, তার দাম ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার!