ঢাকার বিখ্যাত এলাকাগুলোর নাম এলো কোথা থেকে? || Dhaka City's Area Naming History

Author
0


আচ্ছা আপনারা কি একটা জিনিস কখনো খেয়াল করেছেন? ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার নামগুলো কেমন মজাদার না? গেণ্ডারিয়া, স্বামীবাগ, হাতিরঝিল, ভূতের গলি, ইস্কাটন, নাবিস্কো নামগুলোতেই যেন অদ্ভুত এক মজা লুকিয়ে আছে কখনো কি ভেবে দেখেছেন, এই নামগুলো রাখার কারণ কি? চলুন তবে সেই রহস্য ঘেটে দেখা যাক।


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



গেন্ডারিয়া

ঢাকা শহরের এক সময়কার বিখ্যাত এলাকা ছিল গ্র্যান্ড এরিয়া। সেই সময় জমিদার ও প্রভাবশালীরা এখানে থাকতো বলে ইংরেজরা এই নাম দিয়েছিলসেই নামটিই বিকৃত হতে হতে হয়েছে গেণ্ডারিয়া। তবে অনেকে এই থিওরিটি মানে না তাদের কাছে রয়েছে অন্য আরেকটি থিওরি। একসময়ে ঢাকা শহরে প্রচুর পরিমাণে আখ হত। ঢাকার স্থানীয়রা আখকে বলত গেন্ডারি। মূলত একটু মোটা প্রজাতির আখকে বলা হত গেণ্ডারিগেণ্ডারিয়াতে সেই সময় প্রচুর পরিমাণে গেণ্ডারির চাষ হত। ১৮৮৫ সালে সর্বপ্রথম সেখানে লোকজন থাকতে শুরু করে৷ আর এভাবেই ধীরে ধীরে এলাকাটির নাম হয়ে যায় গেন্ডারিয়া।

নারিন্দা

নারিন্দা এলাকার আগের নাম ছিল নারায়ণদিয়াদ্বীপের অপভ্রংশ হচ্ছে ‘দিয়া’। নারায়ণদিয়া অর্থ হচ্ছে নারায়ণের দ্বীপ। নারিন্দার চারপাশে নিচু অঞ্চল থাকায় সেই সময় বর্ষায় একে দ্বীপের মতো দেখাত। সেখান থেকেই নারিন্দা নামের প্রচলন

মালিবাগ

ঢাকা একসময় ছিল বাগানের শহর। বাগানের মালিদের ছিল ব্যাপক কদর। একারণেই ঢাকার বিভিন্ন জায়গার নামের শেষে ‘বাগ’ শব্দটি রয়েছে সে সময় মালিরা তাদের পরিবার নিয়ে যে এলাকায় থাকতেন সেটাই আজকের মালিবাগ।

ধানমণ্ডি

‘মণ্ডি’ মূলত ফারসি শব্দ, যার অর্থ হাটবাজার। ব্রিটিশ শাসনামলে ঢাকায় সবচেয়ে বড় ধানের হাট বসত আজকের ধানমণ্ডিতেসেকারণেই এর নাম হয়ে যায় ধানমণ্ডি অথচ আজ ধানমণ্ডি পুরোপুরি চেঞ্জ হয়ে গেছে। ঢাকার অন্যতম আধুনিক এলাকায় পরিণত হয়েছে এখন ধানমণ্ডি।

পিলখানা

পিলখানা নামটিও এসেছে ফারসি ভাষা থেকে। ফারসি ভাষায় ‘পিল’ অর্থ হাতি আর ‘খানা’ অর্থ জায়গা। তাহলে বুঝতেই পারছেন, পিলখানা মানে হাতি রাখার জায়গা। মুঘল শাসকদের খুব পছন্দের একটি খেলা ছিল হাতির লড়াই। তাই বিভিন্ন জায়গা থেকে হাতি এনে রাখা হতো ধানমণ্ডির এক এলাকায়, যেটি লোকমুখে পরিচিতি পেয়ে যায় পিলখানা হিসেবে।


হাতিরঝিল

পিলখানায় যেসব হাতি এনে রাখা হত, তাদের গোসল করানো হত যেই ঝিলে সেটিই আজ হাতিরঝিল নামে পরিচিত

ভূতের গলি

এলিফ্যান্ট রোড ধরে হাতিরপুল আসার পথে একটু বামে গেলে পাওয়া যাবে একটি বিখ্যাত এলাকা। এলাকাটি বিখ্যাত তার অদ্ভুত নামের কারণেনামটি হচ্ছে ভূতের গলি! যদিও গলিটিতে ভূত কিংবা ভূতুড়ে কোন বাড়িও নেই। আসল ব্যাপারটি হলো, ইংরেজ আমলে সেখানে থাকতেন এক ইংরেজ সাহেব। যার নাম ছিল মিস্টার বুথ। ওই এলাকায় তিনিই ছিলেন প্রথম কোনো ইংরেজ সাহেব। তাই তার নামানুসারে জায়গাটির নাম হয়েছিল বুথের গলি। কিন্তু বাঙ্গালি যে নাম বিকৃত করতে খুব ভালোবাসে। তাই বুথের গলি হয়ে গেল ভূতের গতি। কি একটা অবস্থা!

মগবাজার

মগবাজার নামের রহস্য সমাধান করতে হলে আমাদের যেতে হবে ১৬২০ সালে। সেই সময়ে মগ অর্থাৎ মায়ানমারের সম্রাট ঢাকায় আক্রমণ করে বসে। এই ঘটনায় মুঘলরা যান ক্ষেপে। এরপর মুঘল সুবাদার ইসলাম খান মগদের তখনকার ঘাঁটি চট্টগ্রাম এলাকা জয় করেন। সেখানকার মগ শাসক মুকুট রায় ও তার অনুসারীরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে, ইসলাম খান তাদের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেন। তাদেরকে ঢাকার একটি বিশেষ এলাকায় থাকার অনুমতিও দেন তিনি সেই এলাকাটিই আজ পরিচিত মগবাজার নামে।



মিরপুর

ঢাকায় পুরের শেষ নেইকল্যাণপুর, শাহজাহানপুর, সূত্রাপুর, মোহাম্মদপুর, নবাবপুর, কমলাপুরসহ আরো কত যে পুর আছেকিন্তু সবচেয়ে জনপ্রিয় এলাকার নাম মিরপুর। ঢাকার রীতিমত ৫ ভাগের এক ভাগ জায়গা মিরপুরের দখলে। যাই হোক, এককালে এই এলাকায় থাকতো মীর সাহেব।

মিরপুর সম্পর্কে আরেকটি ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট হচ্ছে পাকিস্তান আমলে এই এলাকায় মূলত অবাঙালিদের বসবাস ছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা শত্রুমুক্ত হলেও, মিরপুর ছিল ব্যতিক্রম। সবার শেষে, ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি স্বাধীন হয় মিরপুর। তাই তো একে মুক্তিযুদ্ধের শেষ রণাঙ্গন বলা হয়।

স্বামীবাগ

নাম দেখে অতি উৎসাহী অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন এই এলাকাটি এক কালে জামাইদের তীর্থস্থান ছিল। অথবা বিয়ের জন্য জামাইদের বাজার বসতো এই এলাকায়! এরকম অদ্ভুত কিছুই না আসলে। "ত্রিপুরালিংগ স্বামী" নামক এক ধনী রাজনীতিবিদ এই এলাকায় থাকতেন। তিনি সবার কাছে স্বামীজি নামে পরিচিত ছিলেন। তার নামেই এলাকার নাম হয় স্বামীবাগ।

গুলিস্তান

এককালে ঢাকার সবথেকে জনপ্রিয় সিনেমা হলের নাম ছিল গুলিস্তান সিনেমা হল। ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত সেই হলের নামেই সেই এলাকার নাম হয়ে যায় গুলিস্তান। সেই গুলিস্তান এলাকাটি সবাই এখন এক নামে চেনেঅথচ ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিংয়ের তালিকায় গুলিস্তান নামে কোনো জায়গায় নাম নেই। বরং বইপত্রে এই এলাকার নাম বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। গুলিস্তান শব্দটির অর্থ “ফুলের বাগান”। আজকের গুলিস্তানে ফুলের বাগান কিংবা সেই সিনেমা হল, কোনটিই নেই। কিন্তু মানুষের মুখে মুখে নামটি রয়ে গিয়েছে এত বছর পরেও।

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!