নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক প্রার্থীই নিজেদের প্রতীক হিসেবে বেছে নিয়েছেন ঈগলকে। আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন না পাওয়া হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই ঈগল প্রতীকের দিকে ঝুঁকেছেন। এর কারণ আসলে কি? এটি কি প্রতীক নিয়ে কাড়াকাড়ি নাকি পুরোটাই কাকতালীয়?
আওয়ামি লিগ থেকে নমিনেশন না পেয়ে অনেকেই ইন্ডিপেন্ডেন্টলি
নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। যেমনঃ রাজশাহী-১ আসনের মাহিয়া মাহি কিংবা হবিগঞ্জ আসনের
ব্যারিস্টার সুমন। মাহিয়া মাহির প্রতিক অবশ্য ট্রাক। তবে ব্যারিস্টার সুমন ঠিকই
ঈগলে গা ভাসিয়েছেন।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট প্রার্থী রয়েছেন ১৮৯৫ জন। এর মধ্যে
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ৩৮২ জন। তাদের মধ্যে ১৫২ জন প্রার্থীই ঈগল প্রতীক
বেছে নিয়েছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ঠিক করে দেওয়া প্রতীকের মধ্যে
ঈগল ছাড়াও ছিল ট্রাক, কলার ছড়ি, ফুলকপি, থালা, কাঁচি, কেটলি, তবলা, রকেট, ঢেকি,
ফ্রিজ, খাট, তরমুজ, চার্জার লাইট, বেলুন, দোলনাসহ আরো বেশ কয়েকটি প্রতিক।
এবার কথা হচ্ছে, এসব প্রতীক আসলে কিভাবে বরাদ্দ করা হয়েছে?
নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, বাংলাদেশে মোট ৪৪টি রেজিস্টার্ড
রাজনৈতিক দল আছে এবং এদের সবার আলাদা প্রতীকও ঠিক করা আছে। এসব প্রতীকে শুধুমাত্র দলীয় মনোনীত প্রার্থী ও তাদের
জোটপ্রার্থীরাই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। স্বতন্ত্র কোন প্রার্থী এসব প্রতীক
বেছে নিতে পারেন না। এ কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য আলাদাভাবে প্রতীক বরাদ্দ
করা হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ২৫টি প্রতীক নির্বাচন কমিশন থেকে ঠিক করে
দেওয়া আছে। এর মধ্য থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের ইচ্ছামতো প্রতীকের জন্য আবেদন
করতে পারেন।
এখন কথা হচ্ছে, প্রতীক হিসেবে ঈগল কেন এতটা জনপ্রিয়? ঈগল প্রতীক পেয়েছেন এমন প্রার্থীরা অবশ্য বলছেন যে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য যেসব প্রতীক রাখা হয়েছে তার মধ্য থেকে ঈগলই সবথেকে মানসম্মত লেগেছে তাদের কাছে। তবে যদি কোন আসনে একই প্রতীকের জন্য একাধিক প্রার্থী আবেদন করে তাহলে সেক্ষেত্রে লটারির মাধ্যমে রিটার্নিং অফিসার প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে থাকেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাধারণত জেলা প্রশাসকরাই রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। একাধিক প্রার্থী একই প্রতীক পছন্দ করলে তাদেরকে সমঝোতা আলোচনার মাধ্যমে যেকোন একজনকে সেটি ছেড়ে দিতে বলা হয়।
যেমন গত ১৮ই ডিসেম্বর চট্টগ্রামের একই আসনে দুজন প্রার্থী ঈগল প্রতিক চেয়ে আবেদন করেছিল। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে তারা আলোচনা করে একজন ঈগল প্রতীক ছেড়ে দেন। কিন্তু অন্য আরেকটি আসনে আলোচনা সমঝোতার পরেও কেউ ঈগল ছাড়তে রাজি হন নি। তখন আর কোনো উপায় না থাকায় লটারি করা হয় এবং তাদের মধ্যে একজনকে ঈগল প্রতীক এবং অন্যজনকে অন্য আরেকটি প্রতীক দেওয়া হয়। তবে মানসম্মত ছাড়াও ঈগল প্রতীককে কিছু প্রার্থী শক্তি, সামর্থ্য ও ক্ষমতার প্রতীক হিসেবেও জাস্টিফাই করেছেন। এছাড়াও তারা মনে করছেন সাধারণ মানুষের কাছে এই ঈগল প্রতীক বেশি বোধগম্য ও আকর্ষণীয় মনে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রার্থী বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য যেসব মার্কা বা প্রতীক রাখা হয়েছে তার
মধ্যে ট্রাক ও ঈগল-এই দুটো প্রতীক দেখেই সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবে।
“এছাড়া রকেটটা কী? চায়ের কেটলি, মোড়া, দোলনা, ফ্রিজ,
আলমারি-এগুলো পাবলিকলি খাওয়ানো যায় না”- এ কারণেই এসব প্রতীকের
প্রতি প্রার্থীরা তেমন আগ্রহী হচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি।
আবার অনেকে মনে করছেন তরুণ প্রজন্মের ভোটাররা ঈগল টাইপ
মার্কাই বেশি পছন্দ করে।
কুমিল্লা-৫ আসনের প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেনের মতে, “ট্রাকটা
হলো বেসিকেলি শ্রমিক-টমিক মেহনতি মানুষের। কেটলি চায়ের দোকানে কাজে লাগে। কাঁচি
দিয়ে মানুষের কাপড় কাটে। এখনকার তরুণ
প্রজন্মের পোলাপাইন তো আর এখন এইগুলা পছন্দ করে না। এরা ঈগল পছন্দ করে, ফুলকপি পছন্দ করে ইত্যাদি, ইত্যাদি।
আধুনিকায়নের যুগ তো এই কারণেই।”
তবে সবথেকে ইন্টারেস্টিং ব্যাখ্যা দিয়েছেন ব্যারিস্টার
সুমন। তার নাকি ব্যক্তিগতভাবেই ঈগল পছন্দ।
তার মতে, “ঈগল পাখি হচ্ছে একমাত্র পাখি যেটি ঝড়-তুফানের
উপরে উঠে যায়। অন্যান্য পাখি ঝড়-তুফানের সময় বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেয়, সে তখন উপরে উঠে যায়। সুতরাং ঝড়-তুফান তার কিছু করতে পারে না। আরেকটা
জিনিস হচ্ছে ঈগল পাখি পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকেও তার নিশানা দেখতে পায়। এবং খুব
নির্ভুল জিপিআরএস এর মতো সে তার নিশানা বা টার্গেট ধরে সেটাকে ধরতে পারে। তো এই
প্রতীকের মধ্যে একটি ভাল মেসেজ আছে বলে আমার মনে হয়।”