একটা সময় সিনেমার পর্দায় নায়ক আলমগীর আর নায়িকা সাবানাকে অভিনয় করতে দেখা যেত স্বামী-স্ত্রী চরিত্রে। তাদের অসাধারণ অভিনয় দেখে মনে হতো যে তারা দুজনে সত্যিকারের স্বামী-স্ত্রী। হয়তো আপনিও এতদিন এটাই জেনে এসেছিলেন। কিন্তু অবাক হবেন যে বাস্তব জীবনে তারা স্বামী-স্ত্রী নন। সিনেমার পর্দায় বহুবার তাদের একসাথে দেখা গেছে সাংসারিক জীবন কাটাতে। চলুন আসল ঘটনা জেনে আসি।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
‘আফরোজা সুলতানা রত্না’ যিনি ‘শাবানা’ নামেই অধিক জনপ্রিয়। জন্ম ১৫ জুন ১৯৫২ সালে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে। একজন বাংলাদেশী জীবন্ত কিংবদন্তি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী তিনি। ১৯৬২ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে ‘নতুন সুর’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে আবির্ভাব ঘটে। পরে ১৯৬৭ সালে ‘চকোরী’ চলচ্চিত্রে চিত্রনায়ক নাদিমের বিপরীতে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেন। ৩৬ বছরের কর্মজীবনে ২৯৯টি সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। ষাট থেকে নব্বই দশকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন এই অভিনেত্রী। ২০০০ সালে রূপালী জগৎ থেকে নিজেকে আড়াল করে ফেলেন এ নায়িকা। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি অভিনয়ের জন্য ৯ বার ও প্রযোজক হিসেবে ১ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০১৭ সালে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন।
‘মহিউদ্দিন আহমেদ আলমগীর’ বাংলাদেশের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা। ১৯৫০ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ২৪ জুন ‘আমার জন্মভূমি’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন তিনি। আলমগীর আশি ও নব্বইয়ের দশকে দাপটের সঙ্গে সিনেমায় কাজ করেছেন। পারিবারিক টানাপোড়েন, সামাজিক অ্যাকশন, রোমান্টিক অ্যাকশন, ফোক ফ্যান্টাসিসহ সব ধরনের চলচ্চিত্রে তিনি ছিলেন সফল। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজক, গায়ক ও পরিচালক হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা বিভাগে ৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন।
সাবানা এবং আলমগীরের একসাথে অভিনীত প্রথম সিনেমা ছিলো ১৯৭৩ সালে সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া পরিচালিত “দস্যুরানী”। এরপরে মায়ের দোয়া, ঘরে ঘরে যুদ্ধ, ঘরের সুখ, সংসারের সুখ দুঃখ, গৃহবধূ, ঘর দূয়ার, স্বামীর আদেশ সহ বেশ কিছু সিনেমায় তাদেরকে একসাথে স্বামী-স্ত্রী’র চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে। তবে এতবার স্বামী-স্ত্রী হিসেবে তাদের পর্দায় দেখে বাস্তবে তাদের স্বামী-স্ত্রী ভাবা ভুল হবে।
শাবানা ১৯৭৩ সালে ‘ওয়াহিদ সাদিকে’র সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সাদিক ছিলেন একজন সরকারী কর্মকর্তা। অন্যদিকে আলমগীরের প্রথম স্ত্রী ছিলেন গীতিকার খোশনুর আলমগীর। তাদের বিয়ে হয় ১৯৭৩ সালে। গায়িকা আঁখি আলমগীর তাদের কন্যা। খোশনুরের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর আলমগীর ১৯৯৯ সালে গায়িকা রুনা লায়লাকে বিয়ে করেন। চলচ্চিত্রের অস্থিরতা ও বর্তমান সংকট সমাধানে বর্তমানে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৯টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত আহ্বায়ক কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আলমগীর।
অপরদিকে ১৯৯৭ সালে শাবানা হঠাৎ চলচ্চিত্র-অঙ্গন থেকে বিদায় নেওয়ার ঘোষণা দেন এবং ২০০০ সালে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। শাবানা-সাদিক দম্পতির দুই মেয়ে - সুমি ও ঊর্মি এবং এক ছেলে - নাহিন।