নাস্তিকতা ও স্কেপ্টিসিজম কি একই জিনিস? || What is Skepticism?

Author
0


‘বড়সড় সংশয়বাদ বড়সড় বোঝাপড়ার দিকে নিয়ে যায়। একইভাবে ছোটখাটো সংশয়বাদ ছোটখাটো বোঝাপড়ার দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু কোন কিছু নিয়ে বিন্দুমাত্র সংশয় না থাকলে সেই ব্যাপারে কিছু বোঝাই সম্ভব না।’ নাম না জানা এক দার্শনিক একবার স্কেপ্টিসিজম নিয়ে এই কথাটাই বলেছিলেন। আজকের এই লেখাতে স্কেপ্টিসিজম বা সংশয়বাদকে সহজভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। 


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখতে পারেন



যে কোনো কিছু নিয়েই প্রশ্ন করার মেন্টালিটিকে স্কেপ্টিসিজম বলে। সংশয়বাদীরা কোন কিছুই যুক্তি-তর্ক ছাড়া মেনে নেয় না। গ্রিক দার্শনিক পিরোন অফ এলিসকে বলা হয় ফাদার অফ স্কেপ্টিসিজম। ট্র্যাডিশনালি স্কেপ্টিসিজমের শুরু হয় প্রাচীন দর্শনের হেলেনিস্টিক পিরিয়ডে। স্কেপ্টিসিজমের জেগে ওঠা প্রাচীন ভারত ও গ্রিসে। প্রাচীন ভারতের অজনানা স্কুল অফ ফিলোসফিতে স্কেপ্টিসিজম নিয়ে গভীর আলোচনা হয়েছে বলে জানা যায়। অজনানা দার্শনিক সঞ্জয় বেলাথিপুত্তর ছাত্র ছিলেন গৌতম বুদ্ধর সবথেকে প্রিয় দুই শিষ্য সারিপুত্তা ও মোজ্ঞাল্লানা। এছাড়াও বৌদ্ধ ধর্মের শুরুর দিকে সংশয়বাদের শক্তিশালী এলিমেন্ট পাওয়া গেছে। স্পেশালি অথকাভাগ্য সূত্রে।

ধারণা করা হয় নাগার্জুন, জয়রাশি ভট্ট ও শ্রীহর্ষের মতো পরিচিত স্কেপ্টিকাল থিংকাররা অজনানিদের মাধ্যমেই প্রভাবিত হয়েছিলেন।

সংশয়বাদের অবস্থান সব ক্ষেত্রেই হতে পারে। নিউজপেপার কিংবা টিভি চ্যানেলগুলোতে ভিউজের ধান্দায় এখন বেশিরভাগ নিউজই দেওয়া হয় ক্লিকবেইট টাইপ। শিক্ষিত শ্রেণীর মানুষজনও এখন অনেকটাই সচেতন হয়ে গেছে। তারা এখন আর এগুলো দেখলেই বিশ্বাস করে ফেলে না। নিজেরা আগে যাচাই করার চেষ্টা করে। এই ব্যাপারটিও কিন্তু স্কেপ্টিসিজম।

আবার ধরা যাক, আপনি কোনো এক দাতব্য প্রতিষ্ঠানে মানুষের সেবা করার উদ্দেশ্যে টাকা দিলেন। কিন্তু সেই টাকা ঠিক জায়গায় যাচ্ছে কিনা তা নিয়ে আপনার ডাউট তৈরি হলো। আপনি তাদের কাছে ডিটেইল প্রসেস জানতে চাইলেন। এটাও কিন্তু এক ধরণের স্কেপ্টিসিজম।




ইতিহাসজুড়ে অনেক বিখ্যাত মানুষজনই স্কেপ্টিক ছিলেন। যেমন – গ্রিক ফিলোসফার এপিকুরাস, জেনোফেনস, ডেমোক্রিটাস, ফ্রেঞ্চ ফিলসফার র‍্যনে দেকার্ত, বৃটিশ ফিলোসফার বার্ট্রান্ড রাসেল, স্কটিশ ফিলোসফার ডেভিড হিউম, অ্যামেরিকান অ্যাস্ট্রোনমার কার্ল স্যাগান, অস্ট্রেলিয়ান অভিনেতা ও মিউজিশিয়ান টিম মিনচিন। এছাড়াও অনেক ইতিহাসবিদ ও এক্সপার্টদের মতে প্লেটোও ছিলেন একজন সংশয়বাদি। এছাড়াও একটি গোটা ধর্মই আছে যা সংশয়বাদের ধারেকাছে ঘেষেই গড়ে উঠেছে। তা হচ্ছে বাহাই ধর্ম।

যাই হোক, এবার আসি মূল পয়েন্টে। স্কেপ্টিসিজম ও নাস্তিকতা কি এক জিনিস? এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, না। সংশয়বাদ ও নাস্তিকতা এক জিনিস না। তবে কাছাকাছি জিনিস। সংশয়বাদীদের সবকিছুতেই খুতখুতে মন বাগড়া দেয়। তারা প্রশ্ন করে, কিন্তু আগে থেকেই সেই ধারণাকে রিজেক্ট করে বসে থাকে না। কিন্তু নাস্তিকরা যুক্তি-তর্ক দিয়ে ধর্মকে ডিরেক্ট রিজেক্টই করে দেয়। তারা ইশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে মানতেই রাজি না। ধর্মীয় দিক থেকে বরং স্কেপ্টিসিস্টদের সাথে অ্যাগনস্টিকদের মিল বেশি। তারা প্রচলিত কোন ইশ্বরে যেমন বিশ্বাস করে না, তেমনি অজানা কোন ইশ্বরের অস্তিত্বকে একেবারে অস্বীকারও করে না। মোট কথা, সংশয়বাদ ব্যাপারটা নাস্তিকতার মতো একপেশে না।


মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!