একটা সিনেমা জনপ্রিয় হতে হলে, সেই সিনেমায় কি কি থাকতে হয়?
অবশ্যই কাহিনী ভালো হতে হবে। সেই সাথে পরিচালনা, সিনেমাটোগ্রাফি এবং প্রতিটা অভিনয় শিল্পীর অভিনয় দক্ষতা ভালো হতে হবে। সিনেমার কাহিনী যখন দর্শকের মনে ধরবে, সিনেমার প্রতিটা গান যখন দর্শকের মাথায় ঘুরতে থাকবে। তখনই তো সেই সিনেমাটা জনপ্রিয়।
বাংলা সিনেমার স্মরনীয় নায়ক “সালমান শাহ”। তার সাথে বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন জনপ্রিয় নায়িকা “শাবনুর”। ঢালিপাড়ায় তাদের জুটি আজও মনে রেখেছে সকলে। তাদের দুজনের বেশ কিছু সিনেমাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিন্তু এর মাঝে ১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা “আনন্দ অশ্রু” দর্শকের মাঝে ব্যপক সাড়া ফেলে। জানার বিষয় হলো, কেনো এই সিনেমাটা এতোটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো?
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
সিনেমার নামটা শুনে হয়তো মনেই হবে ‘আনন্দ’ আর ‘অশ্রু’র এক অনন্য মিশ্রন। কিন্তু সিনেমার শুরুটা আনন্দে হলেও অশ্রু দিয়েই যেন শেষ হয় সিনেমাটা। এই সিনেমায় শাবনুর খুবই ভালো করে তার কারেক্টারটা বিল্ড করতে পেরেছে। একটা ইমম্যাচিউরড মেয়ে কিভাবে পরিস্থিতির সাথে সাথে ম্যাচিউরড হয়ে ওঠে। চঞ্চল শাবনুর সালমান শাহ’র ভালোবাসা পেয়ে হুট করেই যেন বদলে যায়।
কিন্তু হঠাতই ঝড় নামে সেই ভালোবাসায়। শাবনুরের কাছ থেকে আলাদা করা হয় সালমান শাহকে।
হুমায়ুন ফরিদীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সালমান শাহ হয়ে যায় মানসিক বিকারগ্রস্থ। নিয়তির টানে শাবনুরও চলে আসে সালমান শাহ’র কাছে। পুরো সিনেমাউ হুমায়ুন ফরিদীর চাল পুরো মাস্টারক্লাস।
এই সিনেমায় আরো একজন নায়িকা থাকে, যার নাম “কাঞ্চি”। যদিও সে ততটা পরিচিত না। তবে এই সিনেমায় তিনি বেশ ভালো ভূমিকা রেখেছে।
এই সিনেমার আরেকটা গুরুত্বপূর্ন দিক হচ্ছে “দেওয়ানগঞ্জ”। সালমান শাহ’র জীবনে ভালোবাসার দোলা দেয় এই দেওয়ানগঞ্জে। আবার সেই ভালোবাসাকে হারিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারানো সালমানকে ফিরে আসতে হয় এই দেওয়ানগঞ্জেই। পাগল সালমান শাহ’র চরিত্রটা এমনভাবে অভিনয় করেছে, যেটা মনে গেথে থাকার মতোই। এতোটা আবেগ, এতোটা স্পর্শকাতরভাবে চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলা সালমান শাহ’র পক্ষেই সম্ভব।
এই সিনেমায় সবাই বেশ ভালো অভিনয় করেছে। অভিনয়গুলো যেন একেবারে জীবন্ত। সেই সাথে সিনেমায় থাকা মোট ৭ টা গানই ব্যাপক গুরুত্ব বহন করেছে। প্রতিটা গানই ফুটে উঠেছে চরিত্রের এবং দৃশ্যের পরিস্থিতি অনুযায়ী। সিনেমার পরিচালক “শিবলি সাদিক” এই সিনেমায় প্রতিটা চিত্র খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সিনেমার শেষে শাবনুরকে বলা কাঞ্চির সেই কথাটা যেন কানে লাগে, “কেনো আমাকে বলিসনি হতভাগী! তুই’ই খসরুর দোলা?”
ত্রিকোণ প্রেমের একটি গল্প নানান দিকে মোড় নিয়ে হাসাতে থাকে, কাঁদাতে থাকে। কিন্তু শেষে সেই গল্প অপ্রাপ্তির খাতাতেই থেকে যায়। এই সময়ে এসেও এই সিনেমাটা দেখে যে কারো মনে অবসাদের মেঘ জমবে, আমি নিশ্চিত। আর তার চাইতেও কষ্টের ব্যপার হলো, এতো ভালো একটা সিনেমায় অভিনয় করে সালমান শাহ নিজেই সিনেমাটা দেখতে পারেননি। সালমান শাহ’র মৃত্যুর বছর খানেক পরে মুক্তি পায় এই সিনেমাটি।