“তোমাকে চাই শুধু তোমাকেই চাই, আর কিছু জীবনে পাইবা না পাই”
হ্যা সিনেপ্রেমীরা এখনো তাকে চায়। ৯০ দশকে যার মন কাড়া হাসি আর টানা চোখের মায়ায় আটকে গেছে লাখো দর্শকের হৃদয়। বলা হয় তাকে ঢালিউডের রাণী। সেই শাবনুরের কথাই বলছিলাম। তখন শাবনুর আর সালমান শাহ মানেই ছিলো হিট সিনেমা, হিট গান। ক্যারিয়ারে দেড় শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। তার প্রায় বেশিরভাগ সিনেমাই হয়েছে ব্যবসা সফল। সেসময় পরিচালকদের চাহিদার খাতায় শাবনুরের নামই ছিলো আগে। এতো ডিমান্ডেবল একজন নায়িকা অনেকের সাথেই কাজ করেছেন। তার ছিলো না কোনো অহংকার। অভিনয়, হাসি, রূপ আর সুন্দর আচরণে জয় করেছেন সকলের মন।
একটা ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট শেয়ার করি। শাবনুরের আসল নাম ‘কাজী শারমিন নাহিদ নুপূর’। বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা পরিচালক এহতেশামের হাত ধরেই শাবনুরের চলচ্চিত্র অঙ্গনে আসা। আর এহতেশামই শারমিন নূপুর’কে ‘শাবনূর’ বানিয়ে দেয়। এহতেশামের হাতে যতগুলো নায়িকা তৈরি হয়েছে সবার নামই ‘শাব’ দিয়ে শুরু। যেমন; শাবানা, শাবনাজ, শাবনূর। শাবনূর নামের অর্থ রাতের আলো। বাস্তবে সেই আলো পুরো সিনেমা জগতকেই আলোকিত করে রেখেছে। মূল আলোচনায় আসা যাক।
৯০ দশকের আরেক জনপ্রিয় নায়িকা “মৌসুমি”। খাইরুন সুন্দরী খ্যাত এই নায়িকার শুরুটা ছিলো সালমান শাহ’র সাথে অভিনয়ের মাধ্যমেই। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায় অভিনয় করেই মৌসুমি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। সিনেমায় মৌসুমির হাসি, চাহুনি, মিষ্টি চেহারা সবই দর্শকের মন কেড়েছিলো। সিনেমায় “ও আমার বন্ধু গো” গানটা প্রচুর জনপ্রিয়।
সিনেমায় মৌসুমিকে এতোটা সুন্দর লেগেছিলো যে, এখনো যদি সিনেমার গান বা কোনো দৃশ্য দেখি। পার্সোনালি আমি নিজেই তার ওপর ফিদা হয়ে যাই।
সালমান শাহ’র সাথেও বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন মৌসুমি। শাবনুরের সাথে “মোল্লা বাড়ির বউ” সিনেমায় অভিনয় করেও দারুন খ্যাতি অর্জন করেছেন এই নায়িকা। সেই সাথে মেইন এবং সাইড ক্যারেক্টারে অভিনয় করে ক্যারিয়ারে জমিয়েছেন দেড়শটি সিনেমা। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে পেয়েছেন ৩ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার এবং আরো বেশ কিছু পুরষ্কার এবং সম্মাননা।
বাংলা সিনেমায় কমার্শিয়াল সিনেমার অন্যতম নায়িকা মৌসুমি। মৌসুমির জনপ্রিয় সিনেমার মাঝে “মেঘলা আকাশ”, “দেবদাস” ও “তারকাঁটা” অন্যতম।
অভিনয়ের পাশাপাশি মৌসুমি কয়েকটি গানেও কন্ঠ দিয়েছেন। বর্তমানে এই নায়িকা সিনেমা জগত ছেড়ে নিজের ব্যবসায়িক কর্মে ব্যস্ত আছেন। তবে একসময়ে জনপ্রিয় নায়িকাদের তালিকায় মৌসুমির নামটি রয়েই গেছে।
সমসাময়িক আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী “পূর্নিমা”। খুব অল্প বয়সেই চলচ্চিত্র জগতে তার পদচারণা। রিয়াজের সাথে “এ জীবন তোমার আমার” সিনেমার মাধ্যমে পর্দায় মুখ দেখানো শুরু এই নায়িকার। শাবনূরের সাথে “স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ” সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। এরপর
“মনের মাঝে তুমি” সিনেমায় রিয়াজের সাথে অভিনয় করে বেশ ভালো সাড়া ফেলে দেন তিনি। এই সিনেমার টাইটেল সং-টি এখনো বেশ জনপ্রিয়। রিয়াজের সাথে জুটি বেঁধে বেশ কিছু সিনেমাতেই দেখা গেছে পূর্নিমাকে।
১ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারসহ মোট ৪ টি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর পুরষ্কার আছে পূর্নিমার।
শাবনুর আর মৌসুমি পর্দায় অনুপস্থিত থাকলেও, পূর্নিমাকে ঠিকই দেখা যাচ্ছে। সিনেমা না হলেও মঞ্চে তার সরব উপস্থিতি। রূপ দিয়ে কেড়েছেন লাখো পুরুষের হৃদয়। বলা হয়, পূর্নিমার বয়সের ঘড়ি উল্টো দিকে ঘোরে। তিন পুরুষের ক্রাশ এই চির যৌবনা নায়িকার, পর্দায় তার আকাঙ্খা কিন্তু এখনো কমেনি।
এরপরে যার নাম বলবো তাকে বর্তমান সময়ে হয়তো অনেকেই চেনেন না। কিন্তু একটা সময় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় নায়িকাদের মাঝে তার নামও ছিলো। “সাদিকা পারভিন পপি” যাকে পপি নামেই সবাই চেনে। ওমর সানীর সাথে “কুলি” সিনেমায় অভিনয় করেই পপির পথচলা শুরু। “আকাশেতে লক্ষ তারা, চাঁদ কিন্তু একটারে” জনপ্রিয় এই গানটি কিন্তু এই সিনেমারই।
পপির নাম শুনলেই “কি জাদু করিলা” গানটার কথা মনে পড়ে আমার। আর এই সিনেমায় অভিনয় করে পপি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর পুরষ্কারও পেয়েছিলেন। পপি তার ক্যারিয়ারে ৩৩ টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। যার মধ্যে বেশিরভাগই প্রয়াত নায়ক মান্নার সাথে অভিনীত।