শাবনুরের সিনেমা
বরাবরই ব্যবসা সফল। এর কারণ তার দর্শক জনপ্রিয়তা। তবে হা, তার সব সিনেমাই যে তুমুল
ব্যবসা করেছে তা না। তবে কম ব্যবসা করা সিনেমাগুলোও দর্শক মহলে বেশ প্রশংসনীয় ছিলো।
এর কারণ শুধুই শাবনুর।
শাবনুরের এক্সপ্রেশন, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ সবই ছিলো নিখুঁত। আরেকটা ব্যপার ছিলো শাবনুরের মাঝে। তা হলো, সে যে নায়কের সাথেই সিনেমা করতো, সেটাই দর্শকের কাছে তুমুলভাবে জনপ্রিয়তা পেত। আমার মতে এটা হবার কারণ ছিলো পর্দায় সকল নায়কের সাথেই শাবনুরের অপুর্ব মেলবন্ধন। সিনেমায় নায়ক নায়িকার ক্যামিস্ট্রি যত ভালো জমবে, দর্শক ততবেশি ন্যাচারাল স্বাদ পাবে। আর এই প্রতিভাই ছিলো শাবনুরের। তার মাঝে কোনো মেকিভাব ছিলো না।
প্রথমেই শাবনুর-সালমান
শাহকে নিয়ে বলা যাক। দুজনেই ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন। শাবনুর আর সালমান শাহর একসাথে অভিনীত
প্রথম সিনেমা ছিলো “তুমি আমার”। এটা শাবনুরের
অভিনীত তৃতীয় এবং সালমান শাহর দ্বিতীয় সিনেমা। এই সিনেমায় দুজনেই এতো সুন্দর অভিনয়
করে যে সিনেমার জনপ্রিয়তার পাশাপাশি দর্শক ভাবতে শুরু করে বাস্তব জীবনেও তাদের প্রণয়
নিয়ে। কারণটা ছিলো পর্দায় দুজনের রিয়ালিষ্টিক অভিনয়। দেখে মনেই হবে না যে এদের দুজনের
প্রথম সিনেমা এটি। দর্শক তাই বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। সালমান শাহর সাথে শাবনুর মোট ১৪
টি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন।
শাবনুর-সালমান জুটি
যুগ যুগ ধরে দর্শক হৃদয়ে রয়ে যাবে।
সালমান শাহের মৃত্যুর
পরে দর্শকের মন ভাঙে। পর্দায় সেই প্রিয় জুটিকে দেখার ব্যাকুলতাকে একটু ঘোচাতে যেন উদয়
হয় রিয়াজের। রিয়াজ-শাবনুরের অভিনীত প্রথম সিনেমা “মন মানে না”। আর প্রথম এই সিনেমাই
হিট। এই সিনেমায় শাবনুর আর রিয়াজের রসায়ন ছিলো খুবই অসাধারণ। এরপর অবশ্য একটানা বেশ
কয়েকটা সিনেমায় দুজন অভিনয় করেছিলো। দর্শকও তাদের সাদরে গ্রহন করেছিলো।
এরপর কোনো এক কারণে
রিয়াজের সাথে শাবনুরের জুটি ভেঙে যায়।
কিন্তু প্রকৃতি
যে শুন্যস্থান পূরণ করে দেয় বরাবরের মতোই। মন ভাঙা দর্শক আবার আশার আলো দেখে শাবনুর-শাকিব
জুটিকে নিয়ে। “ফুল নেবো না অশ্রু নেবো” সিনেমার মাধ্যমে দুজনে দর্শকমহলে আলোচনায় আসেন।
এই সিনেমার একটি গান ‘আমার হৃদয় একটা আয়না’ ঝড় তুলে দেয় চারিদিকে। একসাথে এই জুটি প্রায়
১০ বছর টানা একসাথে কাজ করে।
দুজনের রসায়ন মুগ্ধ
করেছিলো দর্শকদের।
এই জুটির সার্থকতার
পরে আলোচনায় আসে শাবনুর-মান্না। “স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধ” সিনেমায় করে এই জুটি আলোচনায়
আসে।
তবে এই সিনেমা নিয়ে
একটা মজার বিষয় আছে। সিনেমাটি ছিলো মান্নার নিজের প্রযোজিত। কোনো এক কারণে শাবনুর কাজ
করতে চাইছিলো না। মান্না তখন সিনেমা জগতে রেকর্ড পরিমাণ পারিশ্রমিক দেয় শাবনুরকে। এরপর
তারা সেই সিনেমায় কাজ করে। যদিও সিনেমাতে দেজনের অভিনয়ই বেশ ভালো ফুটে উঠেছে। তবে শাবনুর
যে একজন ভালো অভিনেত্রী, তা মানতেই হবে। নয়তো এতো বড় একটা ইনসিডেন্ট ঘটার পর, পর্দায়
তার কোনো ইফেক্ট পড়েনি।
যাই হোক এই সিনেমায়
শাবনুর মান্নার সাথে আরো অভিনয় করেছে পুর্নিমা। সকলের অভিনয়ই ছিলো প্রাণবন্ত।
শাবনুরের ক্যারিয়ারের
সর্বশেষ জনপ্রিয় সিনেমা “এভাবেই ভালোবাসা হয়”। এই সিনেমার জন্য শাবনুর ‘শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র
অভিনেত্রী’ পুরষ্কার পান। সিনেমায় শাবনুরের সাথে অভিনয় করেন গায়ক এস ডি রুবেল। এটা
ছিলো গায়কের প্রথম সিনেমা।
বলাই যায় শাবনুরের
ন্যাচারাল অভিনয় প্রতিভাই এই সিনেমাগুলোকে এগিয়ে নিয়ে নিয়ে গেছে। একে তো নায়িকার জনপ্রিয়তা,
তার ওপর সকল নায়কদের সাথে সাবলীল অভিনয়, বাস্তব রসায়ন সব মিলে একাকার হয়ে দর্শকদেরও
মুগ্ধ করেছে।