শাবনুরকে অনেক সময়
অনেক ভাবেই উপমা দেওয়া হয়। তবে আমি বলি, শাবনুর একটা নিখুঁত তরল। তাকে বাটিতে রাখা
হবে, সেই বাটিতেই সুন্দর করে মানিয়ে নিবে। আর এজন্যই বাংলা সিনেমার বেশীরভাগ নায়কদের
সাথেই তার জুটি গড়ে উঠেছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় জুটি বেধেঁছিলো শাবনুর-রিয়াজও। একসময়
পর্দায় সালমান-শাবনুর আলোড়ন তুললেও, সালমান শাহর মৃত্যুর পরে সেই জুটি দখল করে রিয়াজ।
রিয়াজ আর শাবনুরের প্রেমের মিশেল দর্শক হৃদয়কে রাঙিয়ে দেয়। কিন্তু সেই জুটিতেও বাঁধ
সাধে। শুধু জুটি নয়, সেই জুটির সাথে ভাঙে দর্শক মনও।
শাবনুর আর রিয়াজের একসাথে প্রথম অভিনীত সিনেমা ছিলো “মন মানে না”। প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাত। দর্শক হৃদয় আঁকড়ে ধরে এই জুটি। ৯০ দশকের কমার্শিয়াল সিনেমার মধ্যে অন্যতম জুটি হয়ে ওঠে এই শবনুর-রিয়াজ। একসাথে অভিনয় করেন ৪৩ টি সিনেমায়। বেশিরভাগ সিনেমাই ব্যবসা সফল। কিন্তু একটা সময় ভেঙে যায় এই জুটি। অবশ্য রিয়াজ এজন্য দায়ি করে থাকেন “ফিল্ম পলিটিক্স”-কে।
রিয়াজের মতে চলচ্চিত্র জগতে এক ধরনের এজেন্ট থাকে। সিনেমার বাইরেও তাদের সাথে অভিনয়শিল্পীদের যোগাযোগ রাখতে হয়। হিট ছবিকে ফ্লপ করা, ফ্লপ ছবিকে হিট করা। এসবই এই বুকিং এজেন্টদের কাজ। আর রিয়াজ সেসবে মনযোগ না দিয়ে সিনেমাতেই ব্যস্ত ছিলেন। রিয়াজ-শাবনুর জুটি ভাঙার পেছনে রিয়াজ কিছু অংশে শাবনুরকেও দায়ী করে থাকে। শাবনুর পরিচালকদের কথা মতো নতুন জুটিতে আবদ্ধ হয়েছিলো। আর একারণেই তাদের জুটি ভাঙে।
তবে শাবনুরের কথা পুরোটাই ভিন্ন। তার মতে এখানে কোনো ফিল্ম পলিটিক্স নেই। দর্শককে ভিন্ন স্বাদ দেওয়ার জন্যই জুটি বদল। আপাত দৃষ্টিতে দেখতে গেলে শাবনুরের কথা ঠিক আছে। কারণ দর্শক বিনোদন খোঁজে। এখন এক নাগাড়ে একই জুটিকে বারবার পর্দায় দেখতে থাকলে সেটা অনেক সময় বোরিং হবার ভয় থাকে। তাছাড়া দর্শককে ভিন্ন স্বাদ দিতে হবে, নয়তো জনপ্রিয়তা ধরে রাখা কষ্টসাধ্য।
রিয়াজের সাথে শাবনুর
মোট ৪৩ টি সিনেমায় অভিনয় করেছে। এই জুটির একসাথে শেষ সিনেমা ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত
“শিরি ফরহাদ”। সিনেমাটি ব্যবসায়িক ভাবে সফল হয়নি। প্রথম ও শেষ সিনেমা ব্যবসায়িক সফলতা
না পেলেও তাদের বেশ কিছু সিনেমা ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়েছে এবং বেশ জনপ্রিয়তাও পেয়েছে।
এরমাঝে “মোল্লা বাড়ির বউ” সিনেমাটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিলো।
দর্শক মহলে একটা কন্ট্রোভার্সি আছে যে, শাবনুরের জন্যই রিয়াজ এতো ফেম পেয়েছে। তবে রিয়াজ যখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, তখন সে ঝুঁকে পড়ে পূর্নিমার দিকে। যদিও শাবনুর নিজেও এটা স্বীকার করে যে রিয়াজ তার নিজ যোগ্যতাতেই জনপ্রিয় হয়েছে।
শাবনুরের এই নিরহংকার
মনোভাব এবং দর্শকদের বরাবরের মতোই ভিন্নতা দেওয়ার কারণেই শাবনুর অনন্য। তার ব্যতিক্রমধর্মী
অভিনয় পছন্দ করেন সকলেই। শাবনুর খুব সহজেই যেকোনো চরিত্রকে নিজের ভেতরে ফুটিয়ে তুলতে
পারতো। যেকারো সাথেই জমাতে পারতো প্রেমের রসায়ন। একে একে জুটি বেধেছিলেন ফেরদৌস, শাকিব
খান, মান্না, শাকিল খান, অমিত হাসান এদের সাথে।
শাবনুরের অপরূপ
চেহারা, কাজল কালো চোখ, স্নিগ্ধ হাসি সকলের হৃদয় ভরিয়ে দিয়েছিলো।