ক্রিকেট তো অনেক দিন হলো দেখতেছেন। কখনো কি শুনছেন, বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্লাডলাইট ছাড়া অন্ধকারে ব্যাটিং করছে এক দল? অথবা সেমিফাইনালের কোন এক দলের ফ্রাস্ট্রেটেড সাপোর্টারদের হাঙ্গামার কারণে খেলা শেষ হওয়ার আগেই রেজাল্ট ঘোষণা করা হইছে? অথবা বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার আগেই কোন দল সড়িয়ে ফেলেছে বিশ্বকাপের ট্রফি!
নাম্বার ফোর – বৃষ্টি আইনে সেমিফাইনালে সাউথ আফ্রিকার হার্টব্রেক
১৯৯২ বিশ্বকাপ। প্রথমবারের মতো অনেক কিছু হতে দেখা গেছে সেই বিশ্বকাপে। রঙিন জার্সিতে ওয়ানডে খেলা শুরু হওয়ার পাশাপাশি বৃষ্টি আইনও প্রথমবারের মতো দেখা গিয়েছিলো সেবার। এই নিয়ম শুরু হওয়ার আগে বৃষ্টির কারণে খেলার যত ওভার বাদ যেত, সেইটা দিয়ে অপনেন্টের রান রেটকে গুণ করে যত আসতো, সেটা বাদ দেওয়া হতো টোটাল স্কোর থেকে। কিন্তু এই নিয়মে চেইজ করতে নামা দলের জন্য অবিচার হয়ে যেত। তাই নিয়ে আসা হয় বৃষ্টি আইন।
কিন্তু প্রথমবারেই তুমুল বিতর্কের
জন্ম দেয় এই নিয়ম। সেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলতে নেমেছিল সাউথ আফ্রিকা ও
ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ড শুরুতে ব্যাটিং করে ৪৫ ওভারে ৬ উইকেটে তোলে ২৫২ রান। স্লো
ওভার রেটের কারণে প্রথম ইনিংসের খেলা ৪৫ ওভারেই থামিয়ে দেওয়া হয়। চেইজ করতে নেমে
প্রোটিয়াদের শুরুটাও হয়েছিল দারুণ। শেষ দিকে গিয়ে তাদের ফাইনালে ওঠার জন্য দরকার
ছিল ১৩ বলে ২২ রান। ঠিক সেই সময়েই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি থামার পরে
ব্যাটিং এ নেমে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের চোখ উঠে যায় কপালে। বৃষ্টি আইনে সমীকরণ
এসে দাঁড়িয়েছে ১ বলে ২২ রানে! অর্থাৎ বল কমেছে ১২ টি, কিন্তু রান কমে নাই একটিও!
এই ঘটনা নিয়ে পরে পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক বিতর্ক হয়। অনেকের মতে আম্পায়াররা চাইলেই
সেই ২ ওভারে খেলাতে পারতেন। এমনকি খেলা শেষ হওয়ার পরে তখনও নির্ধারিত সময়ের ২
মিনিট হাতে ছিল।
নাম্বার থ্রি – অন্ধকার মাঠে ফাইনাল
২০০৭ বিশ্বকাপ। ফাইনালে মুখোমুখি
অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কা। ম্যাচের শুরুতেই একদফা ঝামেলা বাঁধায় বৃষ্টি। যেকারণে
ম্যাচ শুরু হতে হয়ে যায় দেরি। কিন্তু অবাক করা কাণ্ড, সেই ম্যাচে ছিল না কোন
ফ্লাডলাইটের ব্যবস্থা! ২০০৭ সালের মতো আধুনিক সময়ে, বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো বড়
মঞ্চে ছিল না কোন ফ্লাডলাইট কিংবা রিজার্ভ ডের ব্যবস্থা! যে কোনো ক্রিকেট সমর্থকের
কাছেই ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য মনে হবে। কিন্তু
এমনটাই ঘটেছিল সেদিন।
বৃষ্টি আইনে সেই খেলা নেমে এসেছিল ৩৮ ওভারে। অ্যাডাম গিলক্রিস্টের তাণ্ডবে ২৮১ রানের বিশাল স্কোর দাড় করায় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু শ্রীলঙ্কা নামতে নামতে আকাশ সম্পূর্ণ অন্ধকার হয়ে যায়। এদিকে ফ্লাডলাইটেরও ব্যবস্থা নেই, আবার রিজার্ভ ডেও নেই। তাই কি আর করার, ঐভাবেই খেলা চালিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। দুই ক্যাপ্টেন পন্টিং ও জয়াবর্ধনে মিলে ঠিক করলো বাকি সময়ের পুরোটা শুধু স্পিনার দিয়ে বল করানো হবে। কি এক কাণ্ড! কিন্তু স্পিনারদের বলও ঠিকঠাক দেখতে পাচ্ছিলো না লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। অন্ধকারে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা ৩ ওভারে করে মাত্র ৯ রান। এরপরে থামিয়েই দেওয়া হয় খেলা। ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে অস্ট্রেলিয়াকে ৫৩ রানে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
এই পুরো ঘটনার জন্য আইসিসিকে
ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। ইভেন সেই ম্যাচের তিন আম্পায়ার, স্টিভ বাকনার,
আলিম দার ও বিলি বাউডেনকে পরের বছরের টি-২০ বিশ্বকাপ থেকেও বাদ দেওয়া হয়।
নাম্বার টু - সমর্থকদের গ্যাঞ্জামে নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ সেমিফাইনাল
ইডেন গার্ডেন, কলকাতা। চলছে ১৯৯৬
বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। লড়ছে সাব কন্টিনেটের দুই দল ইন্ডিয়া ও শ্রীলঙ্কা। প্রথমে
ব্যাটিং এ নেমে শ্রীলঙ্কা করে ২৫১ রান। চেইজ করতে নেমে তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে যায় ইন্ডিয়ার ব্যাটিং
লাইনআপ। ১২০ রান তুলতেই চলে যায় ৮ উইকেট। ভক্ত-সমর্থকরা তো মহা খ্যাপা। তারা
গ্যালারি থেকে মাঠের দিকে বোতল ছুড়তে শুরু করে। স্ট্যান্ডিং এ লাগিয়ে দেয় আগুন।
পুরো স্টেডিয়ামে শুরু হয়ে যায় গ্যাঞ্জাম। প্রথমে ১৫ মিনিট খেলা বন্ধ রাখা হয়।
কিন্তু কিছুতেই খ্যাপাটে দর্শকদের কন্ট্রোলে আনতে পারছিল না সিকিউরিটিরা। তাই খেলা
বাদ দিয়ে শ্রীলঙ্কাকেই জিতিয়ে দেওয়া হয়। ফাইনালে গিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ
ট্রফি জিতে নেয় লঙ্কানরা।
নাম্বার ওয়ান – ইন্ডিয়ার বিশ্বকাপ ট্রফি চুরি
২০১১ এর ফাইনালে ধোনির সেই হেলিকপ্টার শট কার না মনে আছে? সেই শটেই ২৮ বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে নেয় ইন্ডিয়া। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, অনেকেই ধারণা করে ফাইনালে টিম ইন্ডিয়ার হাতে তুলে দেওয়া সেই ট্রফিটি আসল না! বিশ্বকাপ ট্রফির নিচে নেমপ্লেটে সাধারণত আগের সব বিজয়ীদের নাম লেখা থাকে। কিন্তু ফাইনালের ট্রফিটিতে সেই জায়গা ছিল খালি! ইন্ডিয়া টুডে একটি রিপোর্টে জানায়, আসল ট্রফিটি নাকি সরকারের গোডাউনে রাখা আছে।
সেমিফাইনালের পরে ২৯ শে মার্চ কলম্বো থেকে মুম্বাইতে আসে বিশ্বকাপ ট্রফি। তখনই নাকি সেটি রেখে দেওয়া হয় মুম্বাই কাস্টমসে। সেখান থেকেই সেটি চলে যায় সরকারী গোডাউনে। অর্থাৎ এই রিউমার ঠিক হলে, বিশ্বকাপ জেতার আগেই আসল ট্রফি নিজেদের কাছে রেখে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল ইন্ডিয়া। বাই চান্স ফাইনালে হারলে যেন হাতছাড়া না হয়ে যায়। শয়তানী বুদ্ধি কাকে বলে!
যদিও আইসিসি প্রেসিডেন্ট হারুন
লরগাত এই দাবী অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান কাস্টমসে রাখা ট্রফিটিই ছিল রেপ্লিকা
ভার্সন। কিন্তু রেপ্লিকা ট্রফিটাই বা আনানোর কি দরকার ছিল সেটাও এক রহস্য।