“Home is the starting place of love, hope and dreams.” বিখ্যাত এই উক্তিটিই বলে দেয় বাড়ি নিয়ে মানুষ কি পরিমাণে ফ্যাসিনেটেড। তবে মাঝেমধ্যে পাগলামির পরিমাণ অন্য লেভেলেই চলে যায়। পৃথিবীতে এমন কিছু বাড়ি আছে যেগুলোর ডিজাইন দেখলে আপনার চোখ কপালে উঠতে বাধ্য!
নাম্বার টেন – শ্যু হাউজ
বিচিত্র ডিজাইনের এই বাড়িটি অবস্থিত পেনসিলভেনিয়ার হেলামে। দেখতে ইয়া মস্ত বড় এক জুতা মনে হলেও, আসলে এটা একটা বাড়ি। দর্শনার্থীরা যখন এর ভেতরে প্রবেশ করে, মনে হয় যেন জুতার ভেতরে লিলিপুট সাইজ মানুষ ঢুকছে। এই কারণেই বাড়িটি বিশ্বের সবচেয়ে অদ্ভুত বাড়িগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৪৮ সালে ‘ম্যাহলন এন হাইনেস’ তার জুতার বিজ্ঞাপনের জন্য এই বাড়ির ডিজাইন করেন। এই জুতা বাড়িতে তিনটি বেডরুম, দুটি বাথরুম, রান্নাঘর এবং ড্রয়িং রুম আছে। মাঝে কারলিন ফ্যারাবাগ এবং তার স্বামী এই বাড়িতে তাদের সামার ভ্যাকেশন কাটাতেন। তবে এখন এর ভেতরে মিউজিয়াম তৈরি করা হয়েছে।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
নাম্বার নাইন – টয়লেট হাউজ
উদ্ভট আকৃতির এই বাড়িটি দক্ষিণ কোরিয়ার সুয়োনে অবস্থিত। ‘ওয়ার্ল্ড ইনুগ্রাল জেনারেল অ্যাসেম্বলি’র চেয়ারম্যান ‘সিম জে ডাকে’র তৈরি ডিজাইনে এই অদ্ভুত আকৃতির বাড়িটি নির্মিত হয়। মূলত, বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের প্রতি জনসচেতনতা বাড়ানোর আইডিয়া থেকেই এই বাড়ি বানানোর ধারণা পেয়েছিলেন তিনি। এই বাড়ি থেকেই গ্লোবাল টয়লেট অ্যাসোসিয়েশন আন্দোলন শুরু করেন দক্ষিণ কোরিয়ার এক দল সমাজকর্মী।
নাম্বার এইট – টি পট হাউজ
কেটলি আকৃতির এই অদ্ভুত বাড়িটির অবস্থান অ্যামেরিকার ‘উইসকনসিনে’। বাড়ির বাইরের রূপ দেখতে যেমন টি-পটের মতো, ভেতরের আসবাবগুলোও তেমনই। বাড়ির ভেতরে আছে চায়ের ব্যবস্থাও। আর সেই চায়ের টানেই এই বিচিত্র আকৃতির বাড়িটি দেখতে ছুটে আসেন ট্র্যাভেলাররা। এই অদ্ভুত আকৃতির বাড়িটির নকশা করেছেন ‘জ্যাক আইনসওর্থ’। ১৯২২ সালে তৈরির পর থেকে এটিকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
নাম্বার সেভেন –
স্টোন হাউজ
পর্তুগালের উত্তরে কাজা দো পেনেদো শহরের প্রান্তে আছে ফাফ পাহাড়। সেই পাহাড়ের ঢালে পাথর কেটে বানানো হয়েছে একটি বাড়ি। চারটে গ্রানাইট পাথর আর মাথায় কংক্রিটের ছাদ। এই হলো বাড়িটির কাঠামো। তবে ছাদ আসলেই কংক্রিটের কিনা, তাই নিয়ে মতভেদ আছে। বাড়ির জানালায় আবার বুলেটপ্রুফ কাচ লাগানো। ঘরের ভিতর ‘ফায়ার প্লেস’-এর ব্যবস্থাও আছে। একটা বড় পাথর কেটে সুইমিং পুলও বানানো হয়েছে। পাহাড়ের প্রায় দুই হাজার ফুট উঁচুতে রয়েছে এই স্টোন হাউস। স্থানীয়ভাবে পাথরের এই বাড়িটি ‘সেলরিকো দো বাস্তু’ নামে পরিচিত। এখন অবশ্য সে বাড়িতে কেউ থাকে না। কিন্তু ১৯৭২ সালে এটি তৈরি হয়েছিল অবসর সময় কাটানোর জন্য। দুবছর লেগেছিল বাড়িটি তৈরি করতে। পাথরে বাড়িটির আসল মালিক কে ছিলেন, সেটি জানা যায়নি। তবে এখন লোকাল গভমেন্ট এটিকে মিউজিয়াম হিসেবে ব্যবহার করছে। সেখানে পুরনো ছবি আর স্থানীয় ইতিহাসের কিছু ম্যুরাল রাখা আছে।
নাম্বার সিক্স – এরোপ্লেন বাড়ি
বিমানপ্রেমিক ‘ব্রুস ক্যাম্পবেল’ এই বাড়িটি নির্মাণ করেন ১৯৯৯ সালে। আসলে এটি একটি বিমানই। বোয়িং ৭৪৭ বিমানের ভেতরেই তৈরি করা হয়েছে এই বাড়িটি। তৎকালীন সময়ে প্রায় ১লক্ষ ডলার খরচ করে ব্রুস একটি অকেজো বোয়িং ৭৪৭ বিমান কিনে নেন। পরে আরও প্রায় ২লক্ষ ২০ হাজার ডলার খরচ করে করেন এর ইন্টেরিয়র ডিজাইন।
নাম্বার ফাইভ – ড্যান্সিং হাউজ
চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে বানানো হয়েছে এই বাড়িটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বোমার আঘাতে প্রাগ শহরের ভোলতাভা নদীর ধারে থাকা অনেক পুরনো বাড়ির ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। বাড়ির মালিক ও আর্কিটেক্টরা সেই বাড়িগুলো ভেঙে তার জায়গায় ইউনিক স্টাইলের কিছু বানানোর প্ল্যান করেন। ১৯৯২ সালে বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ১৯৯৬ এ শেষ হয়। মোট নয় তলা বাড়ির পুরোটাই হোটেল আর রেস্তোরাঁ। আন্ডারগ্রাউন্ডেও আছে দুটি ফ্লোর। মোট ৯৯টি কংক্রিটের স্ল্যাব দিয়ে তৈরি হয়েছিল এই বাড়ি। প্রথমদিকে চেক প্রজাতন্ত্রের দুজন জনপ্রিয় ড্যান্সারের নাম অনুসারে বাড়ির নামকরণ করা হয় ‘ফ্রেড অ্যান্ড জিঞ্জার’। পরে বিশ্বের মানুষের কাছে অদ্ভুত এই বাড়িটি ‘ড্যান্সিং হাউজ’ নামেই পরিচিতি পায়। দেশটির টাকায়ও এই বাড়িটির ছবি ব্যবহার করেছে তাদের ন্যাশনাল ব্যাংক।
নাম্বার ফোর – হবিট হাউজ
জে আর আর টোলকিনের ‘লর্ড অফ দ্য রিংস’ এর হবিটদের বাড়ির মতো করে ওয়েলসের প্রেমব্রোকসারের এক পাহাড়ের উপরে বানানো হয়েছে এই হবিট হাউজ। প্রকৃতির মাঝে নির্মিত বাড়িটি এককথায় অনন্য। বাড়ির ডিজাইন এবং নির্মাণকাজের সাথে জড়িত ছিলেন স্বয়ং বাড়ির মালিক সাইমন ডেল। একটি পরিবেশবান্ধব বাড়ি নির্মাণ করার ইচ্ছা থেকেই তিনি এই বাড়িটি বানান। বাড়ির কাছেই কয়েকটি ঝর্ণা থাকায় বাড়ির চারপাশের পরিবেশকে করে তুলেছে আরও দর্শনীয়। বাড়ির ভিতরে কোনো কৃত্রিম বা বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা রাখা হয়নি। বাড়িটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে দিনের বেলায় সূর্যের আলো বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। অন্যদিকে রাতের বেলায় সোলার প্যানেলের সাহায্যে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব বাড়ি হিসেবে বিশ্বে এই বাড়িটি বেশ পরিচিতি পেয়েছে।
নাম্বার থ্রি – ওয়াটারফলস হাউজ
১৯৩৫ সালে আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ায় অদ্ভুত এক দৃষ্টিনন্দন বাড়ি তৈরি করেন বিখ্যাত মার্কিন আর্কিটেক্ট ফ্র্যাংক লয়েড রাইট। রাইটের জীবনের সেরা ডিজাইন ছিল এই ওয়াটারফলস হাউজ। কারণ পুরো বাড়িটি নির্মিত হয়েছে একটি জলপ্রপাতের ওপর। সেই সময়কার মার্কিন ধনকুবের এডগার অ্যাপ্লেশিয়ান পাহাড়ের মাঝে ‘বেয়ার রান’ জলপ্রপাতের অংশে কিছুটা জমি কিনে এই বাড়ি বানানোর উদ্যোগ নেন বলে জানা গেছে। রাইট এই প্রজেক্টের জন্য অনেকগুলো ডিজাইন করেন। কারণ এর আগে এমন বাড়ি পুরো পৃথিবীতেই আর একটিও ছিল না। পাহাড়, জঙ্গল আর জলপ্রপাতের সমন্বয়ে এমন বাড়ি নিঃসন্দেহে একটা মাইলফলক। শুরুতে জলপ্রপাতের ওপর বাড়ি তৈরির কথা ছিল না। এডগার চেয়েছিলেন বাড়ির সামনে জলপ্রপাতটি থাকবে। কিন্তু রাইট জলপ্রপাতের ওপরেই গোটা বাড়িটি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন দেখে মুগ্ধ হন এডগার। গেরুয়া আর কালচে লাল রঙের এই বাড়ি আজো আর্কিটেকচার ওয়ার্ল্ডের এক মাইলফলক হয়ে আছে।
নাম্বার টু – ক্রেজি হাউজ
ভিয়েতনামের এই বাড়িটিতে ন্যাচার আর ফেইরিটেইল মিলেমিশে যেন একাকার হয়ে গেছে। ১৯৯০ সালে ভিয়েতনামের দ্য লাত শহরে এই অদ্ভুত দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি বানানো হয়। তবে এটি কোনো বসতবাড়ি না। এটি একটি হোটেল। দাং ভিয়েত না নামের একজন প্রোফেশনাল আর্কিটেক্ট এই বাড়ির ডিজাইন করেন। যিনি মস্কো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করেছেন। দাং কাঠ আর কংক্রিটে তৈরি এই বাড়ির নাম দেন ‘ক্রেজি হাউজ’। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে, এটি যেন এক ক্ষ্যাপাটে আর্কিটেক্টের এক ক্ষ্যাপাটে বাড়ি। দূর থেকে বাড়িটির দিকে তাকালে মনে হবে একটি গাছ ডালপালা মেলেছে। হোটেলটিতে খোলা জায়গাই বেশি। এই ইস্যুতে দাংয়ের মতামত হচ্ছে, প্রকৃতিকে আগে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে, তারপর আর্কিটেকচারের কাজ। হোটেলের প্রতিটি ঘর একেকটি প্রাণীকে থিম করে বানানো হয়েছে। পিঁপড়া, বাঘ, সিংহ, হরিণ এমন সব প্রাণীর ভাবনা দেখা যায় একেকটি রুমে।
নাম্বার ওয়ান – আপসাইড ডাউন হাউজ
উত্তর পোল্যান্ডের এক ছোট্ট গ্রাম শিমবার্ক। ছোট্ট এই গ্রামটি দিনে দিনে হয়ে উঠেছে ট্র্যাভেলারদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এই গ্রামের মাউন্ট ভিয়েজিতা পাহাড়ের নিচে বানানো হয়েছে আপসাইড-ডাউন হাউজ নামের এক উল্টো বাড়ি। ছাদ মাটিতে আর মেঝে আকাশের দিকে। অনেকটা যাকে বলে পা উপরে আর মাথা নিচে। ড্যানিয়েল ফ্লাপিয়েস্কি নামের এক পোলিশ আর্কিটেক্ট এই বাড়ির ডিজাইন করেছেন। এই বাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে বেশ বিপদেই পড়তে হয়েছে ড্যানিয়েলকে। একবার বাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে দেখা গেল পুরো বাড়ির অর্ধেকের বেশি কাঁচামাল ভিত তৈরি করতেই চলে গেছে। তার উপর নির্মাণ শ্রমিকদেরকে নিয়ে প্রায় সময়েই নানান ঝামেলা লেগেই থাকতো।
বাড়ির ছাদের দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। বাড়ির ভেতরটা সাজানো হয়েছে
পঞ্চাশ বছরের পুরনো পোল্যান্ডের বাড়ি-ঘরের আদলে। ছাদ দিয়ে হেঁটে চলে বেড়াতে হয়। মাথার
ওপর মেঝে হওয়ায় সেখানে সাজানো রয়েছে টেবিল-চেয়ার, সোফা, খাট। এসব দেখতে দেখতে অনেক
দর্শনার্থীর নাকি মাথা ঘুরতে থাকে। ফলে বেশি সময় বাড়ির ভেতরে থাকতে না পেরে অনেকেই
বের হয়ে আসেন।