জ্যাকি চ্যানের অ্যাকশন সিনেমা, টম ক্রুসের মিশন ইম্পসিবল কিংবা ভিন ডিজেলের ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস, এসব সিনেমাতে মাঝে মধ্যেই দেখা যায় আকাশছোঁয়া বিল্ডিং থেকে লাফিয়ে পড়তে। অথবা বিল্ডিং এর বাইরে ঝুলে মারামারি করতে। যে সিনগুলো অ্যাকশন সিনেমা লাভারদের গুজবাম্প দিতে বাধ্য। কিন্তু কখনো কি সেই আকাশচুম্বী বিল্ডিং গুলোর প্রতি ইন্টারেস্ট জেগেছে আপনার? চলুন বর্তমানে পৃথিবীর সবথেকে উঁচু দশটি বিল্ডিং সম্পর্কে জেনে আসা যাক।
নাম্বার টেন – চায়না জান (চীন)
১০ নাম্বারে আছে চীনের বেইজিং
শহরের ‘সি আই টি আই সি টাওয়ার’। তবে চায়না জান নামেই এটি বেশি পরিচিত। ২০১৮ সালের আগষ্টে
এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। বিল্ডিংটিতে ১০৯ তালা আছে মাটির উপরে ও আন্ডারগ্রাউন্ডে
আছে আরো ৮ তালা। ভবনটির উচ্চতা মোট ১৭৩১ ফুট। ভবনটি নির্মাণে কাজ করেছে ৩টি
কোম্পানি - টিএফপি ফ্যারেলস, কেপিএফ ও বিআইএডি।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
নাম্বার নাইন – তিয়ানজিন সিটিএফ ফাইন্যান্স টাওয়ার (চীন)
এটি চীনের তিয়ানজিন শহরে
অবস্থিত। যা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনের তালিকায় ৮ নম্বরে আছে। এই ভবনটির উচ্চতা
১৭৩৯ ফুট। যার মধ্যে ৯৭ তালা আছে মাটির উপরে ও ৪ তালা আছে আন্ডারগ্রাউন্ডে। ২০১৯
সালে এই ভবনটির নির্মান কাজ শেষ হয়েছে। এই বিল্ডিংটিও ৩টি কোম্পানি মিলে বানিয়েছে –
স্কিডমোর, ওউয়িংস ও মেরিল এলএলপি।
নাম্বার এইট – গুয়াংঝো সিটিএফ ফাইনান্স সেন্টার (চীন)
চীনের ‘গুয়াংঝো সিটিএফ
ফাইনান্স সেন্টার’ বিল্ডিংটি আছে এই তালিকার আট নম্বরে। এটি চীনের গুয়াংঝো শহরে
অবস্থিত। এই ভবনটিরও উচ্চতা তিয়ানজিনের ফাইন্যান্স টাওয়ারের সমান ১৭৩৯ ফুট। মূল
ভবনটি ১১১ তালা ও আন্ডারগ্রাউন্ডে আছে আরো ৫ তালা। ২০১৬ সালের অক্টোবরে এই ভবনটির
নির্মাণ কাজ শেষ হয়। বিল্ডিংটির আর্কিটেকচারের কাজ করেছে কন পিডারসেন ফক্স।
নাম্বার সেভেন –
ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার (অ্যামেরিকা)
ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ডের সবচেয়ে
উঁচু বিল্ডিং বলা হয় ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারকে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ
ইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলায় ধ্বংস হয়ে
যাওয়া অরিজিনাল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার টুইন টাওয়ারের সাথে মিলিয়ে এর নামকরণ করা
হয়। ভবনটির উচ্চতা ১৭৭৬ ফুট। আন্ডারগ্রাউন্ড মিলিয়ে এতে মোট ৯৯ টি ফ্লোর আছে। ২০১৪
সালে এই ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। বিল্ডিংটির আর্কিটেকচারের কাজ করেছেন
ড্যানিয়েল লিবস্কিন্ড ও ডেভিড চাইল্ডস।
নাম্বার সিক্স – লোটে ওয়ার্ল্ড টাওয়ার (দক্ষিণ কোরিয়া)
‘লোটে ওয়ার্ল্ড টাওয়ার’ দক্ষিণ
কোরিয়ার সিউল শহরে অবস্থিত। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং। ২০১৭ সালের ৩
এপ্রিল টাওয়ারটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এর উচ্চতা ১৮১৯ ফুট। মূল
বিল্ডিংটি ১২৩ তালা। এছাড়াও আন্ডারগ্রাউন্ডে আছে আরো ৬ তালা। বিল্ডিংটি তৈরি করার
আগে প্রস্তুতি নিতেই সময় লেগেছিলো প্রায় ১৩ বছর। ১৬৩৩ ফুট উঁচুতে রয়েছে একটি
অবজারভেশন ডেক। যেখান থেকে সম্পূর্ণ সিউল শহরের অসাধারণ দৃশ্য দেখা যায়। বিশ্বের
সবচেয়ে দ্রুততম এলিভেটর ব্যবহার করা হয়েছে এই বিল্ডিংটিতে। রিখটার স্কেলে ৯
মাত্রার ভূমিকম্পেও এর কিছু হবে না বলে জানিয়েছেন এর নির্মাতারা। বিল্ডিংটির
আর্কিটেকচারের কাজ করেছেন জেমস ফন ক্লেম্পেরার।
নাম্বার ফাইভ – পিং ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স সেন্টার (চীন)
‘পিং অ্যান ইন্টারন্যাশনাল
ফাইনান্স সেন্টার’ চীনের সেনজেন শহরের একটি বিল্ডিং। এটি ‘পিং অ্যান আইএফসি’ নামেও
পরিচিত। আমেরিকান আর্কিটেকচার ফার্ম ‘কেপিএফ’ এর ডিজাইন তৈরি করেছে। এর উচ্চতা
১৯৬৫ ফুট। ১১৫ তালা এই ভবনটির আন্ডারগ্রাউন্ডেও আছে আরো ৫ তালা। ২০১৭ সালে ভবনটির
নির্মাণ কাজ শেষ হয়। বিল্ডিংটিতে হোটেলের পাশাপাশি আছে কনফারেন্স সেন্টার ও শপিং
মল। ১৮০৪ ফুট উঁচুতে একটি অবজারভেশন ডেক আছে। যেখানে প্রতিদিন প্রায় ৯ হাজার মানুষ
ভীর জমায়। যাতায়াতের জন্য বিল্ডিংটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৩৩টি ডাবল ডেকার এলিভেটর।
নাম্বার ফোর – আবরাজ আল-বাইত টাওয়ার (সৌদি আরব)
‘আবরাজ আল-বাইত টাওয়ার’ হল
সৌদি আরবের মক্কা সরকারের মালিকানাধীন একটি কমপ্লেক্স ভবন। এটি ‘মক্কা রয়েল হোটেল
ক্লক টাওয়ার’ এবং ‘বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ঘড়ির টাওয়ার’ নামেও পরিচিত। এর উচ্চতা
১৯৭২ ফুট। ১২০ তালা এই বিল্ডিংটির আন্ডারগ্রাউন্ডে আছে আরো ৩ তালা। ২০১২ সালে
ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ভবনটিতে হোটেল ছাড়াও আছে কনফারেন্স সেন্টার, চাঁদ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র,
ইসলামি জাদুঘর। এছাড়াও আছে একটি
মসজিদ। যেখানে একসাথে ১০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। বিল্ডিংটির
আর্কিটেকচারের কাজ করেছেন এসএল র্যাশ জিএমবিএইচ ও দার আল-হান্দাসাহ।
নাম্বার থ্রি – সাংহাই টাওয়ার (চীন)
‘সাংহাই টাওয়ার’ চীনের সাংহাই
শহরে অবস্থিত। এই স্কাইস্ক্র্যাপার বিল্ডিংটির সৌন্দ্যর্যই শুধু আপনাকে মুগ্ধ করবে
না। পাশাপাশি এর ডিজাইনও আপনাকে অবাক করে দেবে। মাটি থেকে চূড়া পর্যন্ত ১২০ ডিগ্রি
অ্যাঙ্গেলে আঁকাবাঁকা ভবনটি মুড়ে দেয়া হয়েছে কাঁচ দিয়ে। ২০০৬ সালে শুরু হয়ে
বিল্ডিংটির নির্মাণ শেষ হয় ২০১৪ সালে। বিল্ডিংটির উচ্চতা ২০৭৩ ফুট। ১২৮ তালা এই
ভবনটির আন্ডারগ্রাউন্ড ফ্লোর আছে আরো ৫ টি। সাংহাই টাওয়ার মূলত ব্যবহার করা হয়
অফিস ও হোটেল হিসেবেই। বাকি স্কাইস্ক্র্যাপারের মতো এরও আছে আকর্ষণীয় অবজারভেশন
ডেক। গ্রিন আর্কিটেকচার প্রযুক্তিতে তৈরি এই বিল্ডিংয়ে বিদ্যুতের জন্য ওয়াইন্ড
টারবাইন এবং বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা আছে। ২০১৫ সালে থেকে এটি জনসাধারণের
জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। বিল্ডিংটির আর্কিটেকচারের কাজ করেছেন মার্শাল স্ট্রাবালা, অ্যান্ডি
কোহেন, জুন জিয়া এবং আর্থার গেনসলার।
নাম্বার টু – মার্দেকা ১১৮ (মালয়েশিয়া)
এই তালিকার দুই নাম্বারে আছে
ওয়ারিসন মার্দেকা টাওয়ার। যা মার্দেকা ১১৮ নামেও পরিচিত। এর উচ্চতা ২২২৭ ফুট। এই
টাওয়ারটি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে
অবস্থিত। মার্দেকা মালয় ভাষার শব্দ। এর অর্থ স্বাধীনতা কিংবা মুক্তি। এটি
সাউথ-ইস্ট এশিয়ার সবথেকে বড় বিল্ডিং। এই বছরই এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। নামের
মতোই এই বিল্ডিংটিতে ফ্লোর আছে মোট ১১৮ টি। এছাড়াও আন্ডারগ্রাউন্ডে আছে আরো ৫ টি
ফ্লোর। এখানে অফিসের পাশাপাশি আছে হোটেল, অবজারভেশন ডেক ও পার্ক। বিল্ডিংটির
আর্কিটেকচারের কাজ করেছেন ফেন্ডার কাটসালিডিস।
নাম্বার ওয়ান – বুর্জ খলিফা (দুবাই)
নাম্বার ওয়ানে যে বিল্ডিংটি আছে
সেটি আপনারা সকলেই চেনেন - বুর্জ খলিফা। এটি আরব আমিরাতের দুবাই শহরে অবস্থিত। ৪
জানুযারি, ২০১০ সালে উদ্বোধন করা এই ভবনটির উচ্চতা ২৭১৭ ফুট। মোট ১৬৩ তালার আকাশচুম্বী
এই বিল্ডিংটির আন্ডারগ্রাউন্ডে আছে আরো দুই তালা। এটি ‘দুবাই টাওয়ার’ নামেও
পরিচিত। নির্মাণকালে এর বহুল প্রচারিত নাম ‘বুর্জ দুবাই’ থাকলেও উদ্বোধনকালে নাম
পরিবর্তন করে ‘বুর্জ খলিফা’ রাখা হয়। এক সাথে ৩০ হাজার মানুষের আবাসন, ৯টি
হোটেল ও শপিং মল আছে বুর্জ খলিফাতে। এছাড়াও বিল্ডিংয়ের সামনে তৈরি করা হয়েছে বিশাল
এক কৃত্রিম লেক। বিল্ডিংটির আর্কিটেকচারের কাজ করেছেন এড্রিয়ান স্মিথ, মার্শাল স্ট্রাবালা
ও জর্জ জে এফস্টাথিও।