ছোটবেলায় অনেকেই হয়তো অ্যানাকোন্ডা সিনেমা দেখেছেন।
অ্যামাজনের গহীনে দৈত্যাকার সেই সাপের বিরুদ্ধে নায়ক-নায়িকাদের ফাইট করতে দেখতে
নিশ্চয়ই থ্রিলিং লাগতো? মজার ব্যাপার হচ্ছে, অ্যানাকোন্ডা কিন্তু সবথেকে ভয়ংকর সাপ
না। এরথেকেও ভয়ানক বেশ কিছু সাপ আছে পৃথিবীতে। আজকের ভিডিওটিও সেই ভয়ংকর সাপগুলোকে
নিয়েই। চলুন জানা যাক পৃথিবীর সবথেকে ভয়ানক সাপ কোনগুলো?
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
নাম্বার টেন – পাইথন
সাপদের জগতের দৈত্য বলা হয়
পাইথনকে। এরা আস্ত মানুষ অনায়াসে খেয়ে ফেলতে পারে। এরপর প্রায় একদিন পরে
শিকারের দেহটাকে শরীর থেকে বের করে দেয়। পাইথন সাধারণত ২০ ফুটের মতো লম্বা হয়।
দুপুরের গরম এড়াতে এরা বার্সেলোনা ফ্যানদের মতো গর্তে লুকিয়ে থাকে। একটু ঠাণ্ডা
পেলেই পানির উপরে এসে শিকারের জন্য অপেক্ষা করে। তবে প্রথমেই এরা শিকারকে গিলে
ফেলে না। প্রথমে চেষ্টা করে পেঁচিয়ে ধরে শিকারকে কাবু করার। পাইথনের শরীর এতটাই
শক্ত যে, এরা কাউকে পেঁচিয়ে ধরলে তার হার্ট ও রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা
পর্যন্ত তৈরি হতে পারে। মানুষকে গিলে ফেলার সময় এরা মুখ ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত খুলতে
পারে। তবে সবথেকে ভয়ঙ্কর ব্যাপারটি হচ্ছে,
এরা নিজের শরীরের থেকেও বড়
শিকারকে অবলীলায় গিলে ফেলতে পারে। তবে সবথেকে ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট হচ্ছে, এদের
কোনো বিষ নেই। বিষ না থাকার পরেও বিশাল আকার ও শিকারকে আস্ত গিলে ফেলতে পারার
কারণে পাইথনকে রাখা হচ্ছে এই তালিকার ১০ নম্বরে।
নাম্বার নাইন - গ্রিন অ্যানাকোন্ডা
বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাপ এটি।
আমাজন নদীতেই এদের দেখা মেলে। এদের দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট পর্যন্ত হয়। ওজন হয় ২৫০ কেজিরও
বেশি। গড়ে বাঁচে প্রায় ১০ বছর। তবে এরা বিষধর নয়। এদের শিকার করার স্টাইল অনেকটা
পাইথনের মতোই। দেহ দিয়ে শিকারকে প্যাঁচিয়ে ধরে। শিকারের শ্বাস বন্ধ না হওয়া
পর্যন্ত চেপে ধরে রাখে। এক সময় শিকার দম বন্ধ হয়ে মরে গেলে এরা খাওয়া শুরু করে। অ্যানাকোন্ডা
চিবিয়ে খায় না, বরং শিকারকে গিলে ফেলে। এদের মুখ এতটাই বড় যে, জাগুয়ার,
ছোট হরিণ এমনকি মানুষও গিলে ফেলতে পারে। তাই এরা থাকছে এই তালিকার ৯ নম্বরে।
নাম্বার এইট – র্যাটল স্নেক
র্যাটল স্নেকদের সাধারনত মরুভূমিতে
দেখা যায়। মেইনলি আমেরিকান ডেজার্ট এরিয়া গুলোতেই এদের দাপট বেশি। এই সাপের লেজ এর
দিকে ঝুনঝুন শব্দ করার জন্য একটা বিশেষ অর্গান আছে। এদের প্রধান খাদ্য হলো ইঁদুর, পাখি ও
অন্যান্য ছোট ছোট প্রানী। র্যাটল স্নেকের সবথেকে ইন্টারেস্টিং বৈশিষ্ট্য হচ্ছে
এরা লাফিয়ে লাফিয়ে শিকার করে। এরা খুবই রাগি ন্যাচারের হয়ে থাকে। অ্যাটাক করতে
পারে চোখের পলকে। বাচ্চা র্যাটল স্নেক বড় সাপের তুলনায় বেশি বিপদজনক। কারন প্রতি
বাইটে বাচ্চাদের বিষের পরিমাণ বেশি থাকে। দ্রুত চিকিৎসা করতে না পারলে সেই বিষে
মানুষ মারাও যেতে পারে। আমেরিকায় প্রতি বছর প্রায় ৭০০০-৮০০০ মানুষ র্যাটল স্নেকের
কামড়ে মারা যায়।
নাম্বার সেভেন –
ব্যান্ডেড ক্রেইট
ব্যান্ডেড ক্রেইট নরমালি এশিয়ায়
দেখা যায়। এরা ৯০ সেন্টিমিটার থেকে ১.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এরা যেকোনো সাধারণ
কোবরা থেকে প্রায় ১৫গুন বেশি বিষাক্ত। দিনের বেলায় নিষ্ক্রিয় থাকলেও এরা রাতের বেলায়
বের হয়। মানুষের স্লিপিং ব্যাগ, বুট বা তাবুর নিচের লুকানো এই সাপের একটি বাজে অভ্যাস।
শিকারকে কামড়ায়ও রাতের বেলা। এদের কামড় খেলে সেই জায়গার পেশী অবশ হয়ে যায়। শরীরের
ডায়াফ্রাম কাজ করা বন্ধ করে দেয়। যার কারণে ফুসফুসে বাতাস যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
এতে করে মানুষ শ্বাসকষ্টে মারা যায়।
নাম্বার সিক্স – ফের ডি ল্যান্স
ফের ডি ল্যান্স সাপের বিষ
মানুষের শরীরে ঢোকার সাথে সাথেই শরীরকে নিস্তেজ করতে শুরু করে। ফের ডি ল্যান্স পিট
ভাইপার প্রজাতির একটি সাপ।
এদের মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় প্রচুর
পরিমাণে দেখা যায়। এরা নরমালি ৪ থেকে ৮ ফুট লম্বা হয়। ওজন হয় সর্বোচ্চ ৬ কেজি। সাপের কামড়ে আমেরিকায় মারা যাওয়া
ভিক্টিমদের অর্ধেকের মৃত্যুর জন্যই দায়ী এই ফের ডি ল্যান্স। এদের বিষে আছে অ্যান্টিকোইউল্যান্ট, যার
কারণে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। তাই এদের কামড়ের ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণ
হয়। সবথেকে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে মহিলা ফের ডি ল্যান্স সাপ একইসাথে ৯০টি বিপজ্জনক সাপ জন্ম দিতে পারে।
নাম্বার ফাইভ – রাসেল’স ভাইপার
ইদানিং বাংলাদেশেও নিয়মিত
রাসেল’স ভাইপার দেখা যাচ্ছে। এরা খুবই রাগী হয়। অন্য যেকোনো বিষাক্ত সাপের চেয়ে এরাই
মানুষের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে। এরা কুন্ডলী পাকিয়ে থাকে এবং প্রবল বেগে
শিকারকে ছোবল মারে যাতে করে পালিয়ে যাওয়ার আর কোন উপায় না থাকে। এদের বিভিন্ন
রকমের প্রজাতি আছে। যারা খামার বাড়ি থেকে শুরু করে গভীর জঙ্গল পর্যন্ত বিভিন্ন
জায়গায় বসবাস করে। এরা সাধারনত ১ মিটার থেকে ১.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।
সাপেদের জগতের ‘বিগ ফোর’ এর
অন্যতম সদস্য এরা। ভারতে প্রতি বছর প্রায় ১৬ লাখ মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়। এর মধ্যে
কিং কোবরার পরেই রাসেল’স ভাইপারের কামড়ে আক্রান্ত ভিক্টিমের সংখ্যা সবথেকে বেশি।
এই তালিকায় তাই রাসেল’স ভাইপারকে রাখা হচ্ছে পাঁচে।
নাম্বার ফোর – বুমস্ল্যাং
ভয়ংকর সুন্দর বুঝি একেই বলে।
দেখতে খুবই ইউনিক ও সুন্দর একটি সাপ এই বুমস্ল্যাং। দক্ষিণ আফ্রিকায় একে গ্রিন
ট্রি স্নেকও বলা হয়। যদি বাচ্চা বুমস্ল্যাংও কাউকে কামড়ায়, তাহলে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে তার চোখ, ফুসফুস, কিডনি, হার্ট ও
ব্রেইনে রক্তপাত শুরু হয়ে যায়। এই সাপগুলো পাওয়া যায় আফ্রিকার সোয়াজিল্যান্ড, বটসওয়ানা, নামিবিয়া, মোজাম্বিক
এবং জিম্বাবুয়েতে। এদের বিষ হেমোটক্সিক। যা শরীরের ভিতরে ও বাইরে রক্তপাত ঘটাতে
শুরু করে। এদেরকে তাই রাখা হচ্ছে এই তালিকার চার নম্বরে।
নাম্বার থ্রি – কিং কোবরা
বিশ্বের সবথেকে জনপ্রিয়
সাপগুলোর মধ্যে একটি এই কিং কোবরা। সাপের জগতের রাজা বলা হয় এদের। এরা সাধারনত ৩.৫
মিটার থেকে ৫.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এই সাপ বিষধর হলেও মানুষকে কামড়ায়
কম, এরা সহজে মানুষের সংস্পর্শে আসে না। সাধারণত গভীর জঙ্গলে দেখা যায় এদেরকে।
তবে ক্ষুদার্ত কিং কোবরা খুবই ভয়ংকর। খবার না পেলে এরা স্বাজাতি সাপদেরকেও হজম করে
বসে থাকে। আরেকটি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, এদের প্রধান খাবারই হল অন্যান্য
বিষহীন সাপ। ভারতে প্রতি বছর সাপের কামড়ে মারা যাওয়া ভিক্টিমদের মৃত্যুর জন্য কিং
কোবরাই সবথেকে বেশি দায়ী। সাপেদের জগতের ‘বিগ ফোর’ এর মধ্যে কিং কোবরা অন্যতম।
নাম্বার টু – ব্ল্যাক মাম্বা
ডেঞ্জার ও টক্সিসিটির দিক থেকে
স্নেক ওয়ার্ল্ডের সেকেন্ড বয় ব্ল্যাক মাম্বা। এদের শরীরের উপরের দিকটা সাদা হলেও
এর মুখের ভেতরটা কালো। এই ইউনিক ফিচারের কারণেই এর নাম ব্ল্যাক মাম্বা। এদের বসবাস
আফ্রিকায়। ফ্ল্যাশের মতো স্পিড ও প্রচণ্ড রাগী এই সাপের নিউরোটক্সিন বিষের লেভেলও
খুবই রিচ। এদের ছোবল খেলে কয়েক মিনিটেই যে কেউ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে বাধ্য। এরা
এতই ভীতু যে, কাউকে দেখলেই নিজের ওপর আক্রমণের ভয়ে পাল্টা তার উপরেই
আক্রমণ করে বসে। ব্যাপারটা ট্র্যাজেডিকালি ফানি। প্রাণীবিদদের মতে, ব্ল্যাক
মাম্বাই পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম সাপ। যার গতি ঘণ্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটার। এরা
একই সারিতে পরপর ১২ বার কামড় দিতে পারে। তাহলেই বুঝেন কেন এদেরকে এই তালিকার দুই
নম্বরে রাখা হয়েছে।
নাম্বার ওয়ান – ইনল্যান্ড তাইপান
এবার পালা, দুনিয়ার সবথেকে
বিষাক্ত ও ভয়ংকর সাপের নাম ঘোষণা করার। অ্যান্ড ইট ইজ ইনল্যান্ড তাইপেন। আমজনতার
কাছে যাদের নাম একটু অপরিচিতই বটে। এদের বিষ সমগ্র পৃথিবীরই অন্যতম ডেঞ্জারাস।
এদেরকে সাধারণত অস্ট্রেলিয়ায় দেখা যায়। লম্বায় এগুলো প্রায় আট ফুটের মতো হয়ে
থাকে। এক ছোবলে এরা এত পরিমাণে বিষ ছোড়ে যা ৬০ থেকে ১০০ জন মানুষের মৃত্যুর জন্য
যথেষ্ট। যদি একটু অন্যভাবে চিন্তা করি, তাহলে এই পরিমাণ বিষে মারা যেতে পারে প্রায়
এক লাখ ইঁদুর। প্রাণীবিদদের মতে, তাইপানের এক ছোবল অন্তত ৫০টি কোবরার ছোবলের সমান। এদের
বিষের টক্সিন রক্ত জমাট বাঁধিয়ে অনেকটা ঘন স্যুপের মতো করে ফেলে। এই বিষ মানুষের
রক্তে মিশলে রক্ত শক্ত হয়ে যায়। তবে সবথেকে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, এই
সাপের মানুষ মারার কোনো রেকর্ড নেই। কারণ এগুলো অস্ট্রেলিয়ার এমন এলাকায় থাকে
যেখানে লোকজন খুব একটা থাকেই না। ভয়ঙ্কর বিষাক্ত হলেও স্বভাবে এরা খুব শান্ত।