দুনিয়ায় এমন কিছু জায়গা আছে, যা রহস্যে আবৃত হয়ে মানুষের কাছে কৌতুহল হয়েই রয়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় যাওয়া একদমই নিষিদ্ধ। চলুন জেনে আসি এসব জায়গা সম্পর্কে।
১০. ডোর টু হেল
তুর্কমেনিস্তানের ছোট শহর দারভাজের কাছাকাছি অবস্থিত একটি অগ্নিস্তূপ। ৬০ বছর আগে ভুতত্ববিদগন গ্যাস অনুসন্ধানের কাজে একটি কুপ খনন করে, এমন সময় বিষাক্ত গ্যাসীয় খুব বড় একটি ভূগর্ভস্থ গুহা আবিষ্কার করলেন। তারা কয়েক ঘন্টার মধ্যে গ্যাস পুড়িয়ে ফেলার আশায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয় যাতে এর বিষাক্ততা ছড়িয়ে না পড়ে। কিন্তু সে আগুন আজ অবধি আর নেভেনি।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
৯. ডেনসিয়া ল্যান্ডস্কেপ
ডেনসিয়া ল্যান্ডস্কেপ হলো একটি পাহাড়, যা কিনা অবস্থিত চীনের ‘গানসুতে ঝাংয়’এ ন্যাশনাল জিওপার্কে অবস্থিত। চীনের এই পাহাড়টি দেখতে বেশ রঙিন এবং নানা ধরনের স্তর বিশিষ্ট। এই পাহাড়ের পাথরগুলো ২৪ মিলিয়ন বছর ধরে জমা পড়ে আছে। বায়ুজনিত কারণ, বৃষ্টি এবং সময়ের সাথে সাথে টেকটোনিক প্লেট গুলির স্থানান্তরের ফলে এখানকার পাহাড়গুলি এমন রূপ ধারণ করেছে। এটি বিশ্বের অন্যতম বিস্ময়কর স্থান হিসেবে পরিচিত। রঙিন পাহাড় দেখার জন্য সারা বছরই স্থানে ভিড় লেগেই থাকে পর্যটনদের।
৮. জায়ান্ট’স কজওয়ে
এই স্থানটি পৃথিবীর অন্যতম বিস্ময়কর দর্শনীয় স্থান, যা কিনা নর্থ আয়ারল্যান্ডের উত্তর তীরে অবস্থিত। এটি প্রায় চল্লিশ হাজার হেক্টগোনাল পাথরের কলামে তৈরী একটি প্রাকৃতিক ও প্রাচীন গুহা। এই শিলা বা পাথরগুলো প্রাচীন আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত দ্বারা তৈরি হয়েছিল। এই শিলাগুলোর আশ্চর্যকর ব্যাপার হল এগুলি বেশিরভাগ ষড়ভূজীয়। এই স্থানটিতে প্রাকৃতিকভাবে বিস্ময়কর ইউনাইটেড কিংডমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং সৌন্দর্যের দিক থেকে এটি বিশ্বের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ভ্রমণের স্থান।
৭. ডেড সি
‘মৃত সাগর’ নামটি শুনলেই হয়তো বুকটা যেন কেমন কেঁপে ওঠে। ইসরাইলে অবস্থিত এই সাগরটির এমন নাম হওয়ার পেছনে কারণ হল এটি আসলে একটি লবণাক্ত পানির হ্রদ। যেখানে লবণাক্তের পরিমাণ ৩৪.২ শতাংশ,
যা সাধারণ সমুদ্রের জলের চেয়ে ৮.৬ গুন বেশি। এই হ্রদের পানিতে অত্যাধিক মাত্রায় লবণ হওয়ার কারণে বিশেষ ধরনের কয়েক প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া ছাড়া আর কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব নেই। আর এই হ্রদে মাছ না থাকার কারণে কোন পাখিদের আনাগোনাও দেখতে পাওয়া যায় না। এই হ্রদের পানিতে মানুষ ডুবে যাওয়ার বদলে ভেসে থাকে।
৬. নর্থ ব্রাদার আইল্যান্ড
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের নিকটবর্তী একটি দ্বীপ, নর্থ ব্রাদার আইল্যান্ড। ১৬১৪ সালে নর্থ ব্রাদার আইল্যান্ড এক সংক্রমণ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এতে দ্বীপের প্রায় অর্ধেক বাসিন্দা মারা যায়। এরপর ১৮৮০ সালে আবার এ দ্বীপে অজানা রোগ ছড়িয়ে পড়ে প্রাণ হারায় বহু মানুষ। ১৯৪০ সালে এ অঞ্চলে ফের সংক্রমক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে। বহু মানুষ মারা যায়, আর বাকি বাসিন্দারা দ্বীপ ছেড়ে পালিয়ে যায়। রহস্যজনক ও ভৌতিক নানা ঘটনার কারণে ১৯৬৩ সালে নর্থ ব্রাদার আইল্যান্ড পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
৫. আইল্যান্ড অব দ্য ডল
মেক্সিকো সিটি থেকে ২৮ কি.মি. দূরে দক্ষিণে জোচিমিকো ক্যানালের মাঝেই এই দ্বীপটির অবস্থান। কথিত আছে, মেক্সিকোর এই দ্বীপে একটি মেয়ে পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার পর ‘ডন জুলিয়ান শান্তানা বারেরা’ নামে একজন লোক এই দ্বীপে বাস করতেন এবং তিনি জীবিত মেয়ের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য একটি গাছে পুতুল ঝুলিয়েছিলেন। কিন্তু রহস্যজনকভাবে দ্বীপটির গাছে গাছে নানা আকৃতির পুতুলের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এই দ্বীপে ঘটতে থাকে অদ্ভুত যত ঘটনা। নির্জন দুপুরে বা একটু সন্ধ্যা নেমে আসলেই এই দ্বীপের অধিবাসীরা শুনতে পান এক কিশোরীর কান্নার ধ্বনি। কখনো হাসির আওয়াজ। ইউনেস্কো ১৯৮৭ সালে এই স্থানকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করলেও ভূতুড়ে পুতুলের দরুন তা টুরিস্ট প্লেস হিসেবে জমজমাট হয়ে উঠতে পারেনি।
৪. রাজস্থানের ভানগড়
রাজস্থানের ‘আলবর’ জেলায় অবস্থিত “ভানগড় কেল্লা” এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে ভীতিকর স্থানগুলোর একটি। সন্ধ্যা ৬টার পর কেল্লার ভেতরে কাউকে অবস্থান করতে দেওয়া হয় না- এটা রীতিমতো সরকারি আদেশ। বলা হয়, গভীর রাতে এই কেল্লায় নর্তকীদের প্রেতাত্মার নাচসহ নানান অতিপ্রাকৃত ঘটনা ঘটে যা স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে সহ্য করা অসম্ভব। জানা গেছে, বার দুয়েক কিছু দুঃসাহসী সেখানে রাতের অন্ধকারে ঢোকার চেষ্টা করে। কিন্তু পরিণতি ভালো হয়নি তাদের। তেমনি দুই স্থানীয় দুঃসাহসী তরুণও সন্ধ্যা ঘনিয়ে যাওয়ার পর দুর্গের পাঁচিল টপকে ভেতরে ঢুকেছিল। কিন্তু তারা আর ফিরেনি। মারা গেছে কিনা তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। শুধু তাদের আর কোনোদিন দেখা যায়নি কোথাও।
৩. প্যারিসের ক্যাটাকম্ব
বিষ্ময়কর একটি স্থান প্যারিসের ক্যাটাকম্ব। এখানে হাজার হাজার কঙ্কালের খুলি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে প্যারিসের ক্যাটাকম্বের দেওয়াল। একসময় এখানে ছিলো এক সমাধিস্থান। গণকবর দেওয়া হত এখানে। মৃতদেহের ভারে সমাধিস্থানটি ধসে পড়লে এ ক্যাটাকম্বের খোঁজ পায় বিশ্ব। লোখমুখে প্রচলিত আছে- সপ্তদশ শতকে এ ক্যাটাকম্বের ভেতরে নিখোঁজ হয়ে যান এক ব্যক্তি। যার মৃতদেহ পাওয়া যায় ১১ বছর পর। অষ্টদশ শতকে রাজপরিবারের সদস্যদের হত্যা করে ফেলা হয়েছিল এখানে। রটনা রয়েছে, অতৃপ্ত আত্মাদের বাস ক্যাটাকম্বে। এ কারণে সেখানে প্রবেশ নিষেধ করেছে সরকার।
২. এরিয়া ফিফটি ওয়ান
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডায় অবস্থিত এই জায়গাটি নিয়ে সারা বিশ্বের মানুষের মধ্যে কৌতুহল রয়েছে। এটা আপাতদৃষ্টিতে একটি মিলিটারি বেইজ এবং পৃথিবীর সবচেয়ে সিকিউর এলাকাগুলোর একটি। বহু মানুষের ধারনা ওখানে ভিনগ্রহের প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা করা হয়। এই জায়গায় এলিয়েনদের যাতায়াত আছে বলেও ধারণা অনেকের। প্রায় ৩০ লাখ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা এই এলাকার ভেতরে কী কাজ হয়, তা আজও সকলের অজানা।
১. বারমুডা ট্রায়াঙ্গল
আটলান্টিক মহাসাগরের এই ত্রিমাত্রিক অঞ্চলে বেশ কিছু জাহাজ ও উড়োজাহাজ রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়। এখানে কোনো বিমান কিংবা জাহাজ হারিয়ে গেলে তার ধ্বংসাবশেষের কোনো চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যায় না। এমনকি এখানে কোনো মৃতদেহও ভাসতে দেখা যায় না। কোনো কিছুরই নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেকে মনে করেন, এসবের পেছনে দায়ী অতি-প্রাকৃতিক কোনো শক্তি বা ভিনগ্রহের প্রাণীর উপস্থিতি। জায়গাটির রহস্যময়তা নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে বানানো হয়েছে অসংখ্য ডকুমেন্টারিও।