বিশ্বের প্রায় সকল উপকূলীয় অঞ্চলই ঘূর্ণিঝড়ে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত
হয়। আবহাওয়াবিদদের দেয়া তথ্যমতে প্রতিবছর গড়ে ৮০টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। তবে এগুলোর
বেশিরভাগই সমুদ্রে মিলিয়ে যায়। আর শেষপর্যন্ত যেগুলো স্থলভাগে আঘাত হানে সেগুলো ভয়াবহ
ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৫. হাইফোং টাইফুন
১৮৮১ সালের অক্টোবর মাসে ভিয়েতনামের হাইফোং শহরে ‘টাইফুন’ নামের
এই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। দেশটিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতি
করেছে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ভিয়েতনামে প্রায় ৩ লাখ মানুষ প্রাণ হারান। এছাড়াও অনেক বেশি
ক্ষতি হয় পুরো এলাকা জুড়ে।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
৪. ভোলা সাইক্লোন
১৯৭০ সালের অত্যন্ত তীব্র ‘ভোলা ঘূর্ণিঝড়’ ছিল একটি শক্তিশালী
ঘূর্ণিঝড় যা ১৯৭০ সালের ১৩ই নভেম্বর বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে। এ পর্যন্ত
রেকর্ডকৃত ঘূর্ণিঝড়সমূহের মধ্যে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় এবং এটি সর্বকালের সবচেয়ে
ভয়ঙ্করতম প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি। এ ঝড়ের কারণে প্রায় ৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়।
যার অধিকাংশই গাঙ্গেয় বদ্বীপের সমুদ্র সমতলের ভূমিতে জলোচ্ছ্বাসে ডুবে মারা যান। এটি
১৯৭০ সালের উত্তর ভারতীয় ঘূর্ণিঝড় মৌসমের ৬ষ্ঠ ঘূর্ণিঝড় এবং মৌসমের সবচেয়ে শক্তিশালী
ঘূর্ণিঝড় ছিল। এটি সিম্পসন স্কেলে ৩য় মাত্রার ঘূর্ণিঝড় ছিল।
৩. ৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়
১৯৮৮ সালের ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশে আঘাত হানে ইতিহাসের অন্যতম বিধ্বংসী
ঘূর্ণিঝড়। এই ঝড়ের ফলে দেশে যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে
বড় বন্যা হিসেবে পরিচিত। ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ের ফলে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী
এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ৫ হাজার ৭০৮ জন মানুষ প্রাণ হারায়। ঝড়ে
সেবার প্রায় ৭০ শতাংশ ফসল নষ্ট হয়ে যায়, যার পরিমাণ ছিল প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টন। এই
প্রলয়ংকারী বন্যাটি হওয়ার মূল কারণ ছিলো সারা দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং মাত্র তিন
দিনে দেশের তিনটি প্রধান নদীর পানি প্রবাহ একই সময় ঘটে। ফলে নদীর বহন ক্ষমতার অতিরিক্ত
পানি প্রবাহিত হয়।
২. সিডর
আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি সমুদ্রে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়ের
নাম 'সিডর'। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে এটি। এতে বাতাসের
সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৩ কিলোমিটার। এই ঝড়ে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ১৮-২০
ফুট। এই ঝড়ে প্রায় দশ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। রেডক্রসের তথ্যানুযায়ী, এই ঘূর্ণিঝড়ে
প্রায় দশ লাখ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। সুন্দরবনের বেশ ক্ষতি হয় এতে। ঝড়ে ২১০,০০ হেক্টর
জমির ফসল নষ্ট হয়। এর মধ্যে প্রায় ৬০০,০০০ টন ধান বিনষ্ট হয়। সুন্দরবনের পশুর নদীতে
বেশ কিছু হরিণের মৃতদেহ ভাসতে দেখা যায়। এ ঝড়ে প্রায় ২ লাখ ৪২ হাজার গৃহপালিত পশু
এবং হাঁস-মুরগি মারা যায়।
১. নার্গিস
সাম্প্রতিককালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর
মধ্যে একটি হলো নার্গিস। ২০০৮ সালের মে মাসে মিয়ানমারে আঘাত হানে নার্গিস। এর তাণ্ডবে
প্রাণ হারান ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। সাড়ে ৪ লাখ ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়ের
প্রভাবে প্রায় ৩৮ হাজার হেক্টর ম্যানগ্রোভ এবং অন্যান্য ফসল ক্ষতি হয়। এছাড়াও ভূপৃষ্ঠ
ও ভূগর্ভস্থ পানির সরবরাহ দূষিত হয়েছে। এ ঝড়ের কারণে নদীতে পলি জমে, লবণাক্ততা এবং
কৃষি জমির ক্ষয় হয়েছে।