পৃথিবীর সবথেকে ভয়ংকর প্রাণী কোনটি? এই প্রশ্নের উত্তরে বেশিরভাগ লোকজনই হয়তো বলবে সিংহের কথা। কিন্তু সত্যিই কি তাই? আসলে সিংহ কিংবা বাঘের থেকেও ভয়ংকর কিছু প্রাণী আছে আমাদের এই পৃথিবীতে। সেরকমই ১০ টি প্রাণীকে নিয়েই কথা বলবো আজকে।
নাম্বার টেন – স্টোন
ফিশ
স্টোন ফিশ থাকে সমুদ্রের একদম নিচের দিকে। এরা
সাধারণত বিভিন্ন ধরণের পাথরের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। পাথরের রঙে লুকিয়ে ক্যামোফ্লেজ করতে
পারা তাদের এক বিশেষ গুণ। একারণেই তাদেরকে স্টোন ফিশ বলা হয়। আরেকটি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার
হচ্ছে, সবথেকে বিষাক্ত মাছের মধ্যে স্টোন ফিশ একটি। এরা এমনিতে বেশ শান্ত-শিষ্ট। তবে
এর ধারে-কাছে কেউ ঘেষতে গেলেই এরা ক্ষেপে যায়। স্টোন ফিশের কাঁটার আঘাত লাগলে মানুষের
হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। এর ফলে এমনকি মারা যাওয়ার সম্ভাবনাও আছে। তাই
ভুলেও যদি কখনো পাথর মনে করে স্টোন ফিশের উপরে পা রাখেন, আপনার মৃত্যু মোটামুটি নিশ্চিত।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
নাম্বার নাইন - হায়েনা
এই লিস্টের ৯ নম্বরে থাকছে হায়েনা। যারা মেইনলি
খুবই খ্যাপাটে এবং মাংসাশী প্রাণী হিসেবে পরিচিত। এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে এদের বসবাস।
এরা এতটাই ভয়ানক যে মাঝেমধ্যে বাঘ পর্যন্ত শিকার করে বসে থাকে।
নাম্বার এইট – ক্যাসোয়ারি
পৃথিবীর সবথেকে ভয়ানক পাখি এই ক্যাসোয়ারি। হাইট
ও ওজনের দিক দিয়ে উটপাখির পরেই এদের অবস্থান। এদেরকে সাধারণত অস্ট্রেলিয়া, পাপুয়া নিউগিনি
ও এর আশেপাশের কিছু স্যাতস্যাতে রেইনফরেস্টে দেখা যায়। গহীন জঙ্গলের একদম গভীরে। এরা
নরমালি সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার ও ৬০ কেজি ওজনের হয়ে থাকে।
ক্যাসোয়ারি এমনিতে বেশ লাজুক প্রাণী। তবে কোন
কারণে একবার ভয় পেলে এরা খুবই ডেঞ্জারাস হয়ে যায়। ঠোট ও আঙ্গুলের ধারালো নখই এদের প্রধান
অস্ত্র। মাটি থেকে ৬-৭ ফুট উঁচুতে উঠে অপনেন্টকে অ্যাটাক করতে পারে এরা।
নাম্বার সেভেন –
জাগুয়ার
বাঘ, সিংহ, চিতা ও জাগুয়ারকে নরমালি চার ভাই
বলা হয়। এদের মধ্যে সবথেকে ডেঞ্জারাস জাগুয়ার। সাউথ অ্যামেরিকা ও মেক্সিকোর জঙ্গলগুলোতে
এদের দেখা যায়। তবে জাগুয়ারের সবথেকে ইন্টারেস্টিং দিক হচ্ছে খিদে না পেলে এরা অযথা
শিকার করে না। কিন্তু একবার শিকার টার্গেট করলে এদের হাত থেকে রেহাই পাওয়া অসম্ভব।
মারাত্মক রকমের খ্যাপাটে প্রাণী এই জাগুয়ার।
নাম্বার সিক্স -
সাইফু পিঁপড়া
অনেকেই ভাবছেন পিঁপড়া আবার ডেঞ্জারাস কোন দিক
দিয়ে! সাইফু পিঁপড়া আমাদের আশেপাশে থাকা সাধারণত পিপড়ার মতো না। দেখতে ছোট হলেও এদের
ক্ষমতা অনেক। এদেরকে ড্রাইভার পিঁপড়াও বলা হয়। এরা সবসময় ঝাঁকে-ঝাঁকে চলাফেরা করে।
আর প্রতিটি ঝাঁকে থাকে প্রায় ৫ কোটি পিঁপড়া। ক্যান ইউ বিলিভ ইট? সেই ঝাঁক দেখলে যে
কারো পিলে চমকে যেতে বাধ্য। দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে এদের দেখা যায়।
তবে সবথেকে ভয়ংকর দিক হচ্ছে, এরা মারাত্মক পরিমাণে মাংসাশী। এমনকি এক ঝাঁক সাইফু পিঁপড়া
মিলে যে কোন বড় প্রাণীকেও সাবাড় করে ফেলতে পারে। ইন্ডিয়ানা জোনস অ্যান্ড দি ক্রিস্টাল
স্কাল সিনেমায় সাইফু পিপড়ার অ্যাটাক করার একটি দৃশ্য দেখা যায়।
নাম্বার ফাইভ - কেপ
বাফেলো
এরা সাক্ষাৎ যমদূত! কেপ বাফেলো নামের এই বুনো
মহিষ আফ্রিকার জঙ্গলে রাজত্ব করে বেড়ায়। এক-একটি কেপ বাফেলোর ওজন কয়েক টন পর্যন্ত হয়ে
থাকে। এদের স্ট্রেন্থই হচ্ছে শরীরের ওজন এবং বদ মেজাজ। এদের কেউ উত্যক্ত করলেই তার
আর রক্ষা নেই! মানুষের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক এক প্রাণী এরা।
নাম্বার ফোর - ব্ল্যাক
মামবা
লুক অ্যান্ড ফিলের দিক দিয়ে সাপ অন্যতম ভয়ংকর
এক প্রাণী! আর এই ব্ল্যাক মাম্বা হচ্ছে পৃথিবীর ফাস্টেস্ট ও মারাত্মক বিষধর সাপ। এরা
যতটা মারাত্মক হিংস্র, ততটাই ভীতু। এরা তখনই প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করে, যখন মারাত্মক
পরিমাণে ভয় পায়। দক্ষিণ ও পূর্ব আফ্রিকার পাহাড়ি অঞ্চলে দেখা পাওয়া যায় ব্ল্যাক মাম্বার।
এরা আফ্রিকার দীর্ঘতম সাপ, যা লম্বায় অ্যাভারেজে ৮.২ ফুটেরও বেশি হয়ে থাকে। এদের গতিবেগ
ঘন্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটার। ব্ল্যাক মাম্বার এক কামড়ে মুহূর্তেই মারা যেতে পারে একটি
আস্ত হাতি। পৃথিবীর ভয়ঙ্কর প্রাণীদের মধ্যে ব্ল্যাক মাম্বাকে তাই রাখা হচ্ছে চার নম্বরে।
নাম্বার থ্রি - মার্বেল
কোণ শামুক
সাধারণ শামুক কিন্তু বিষাক্ত নয়। কিন্তু যে শামুকগুলো
কোণাকৃতির, সেগুলো ভয়ানক বিষাক্ত হয়। এদের খোলসটা দেখলে মনে হয়, মার্বেল পাথর দিয়ে
মোজাইক করা হয়েছে। সেই কারণেই এদেরকে মার্বেল কোণ শামুক নামে ডাকা হয়। অস্ট্রেলিয়ার
সামুদ্রিক পানিতে এদের দেখা যায়। দেখতে যতটা সুন্দর, ঠিক ততটাই প্রাণঘাতি এই প্রাণী।
কিউট মনে করে হাতে তুলে নিলেই সর্বনাশ! অতিরিক্ত বিষাক্ত হওয়ার কারণে এদেরকে রাখা হচ্ছে
এই লিস্টের তিন নাম্বারে।
নাম্বার টু - বক্স
জেলিফিশ
সমুদ্রে সাঁতার কাটতে কাটতে বক্স জেলিফিশ ধরে
একটু আদর করবেন ভাবছেন? ভুলেও সেটা করতে যাবেন না। সাধারণ কোন জেলিফিশের টেন্টাকলের
কাঁটার খোঁচা লাগলে হয়তো চুলকানি শুরু হয়। কিন্তু বক্স জেলিফিশের একটি খোঁচা খেলে আপনার
মৃত্যু নিশ্চিত মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে। সামুদ্রিক এই প্রাণীটি প্রায় ১৫ ফুট পর্যন্ত
লম্বা হয়ে থাকে। এক একটি বক্স জেলিফিশে যে পরিমাণ বিষ থাকে, তাতে ৬০ জন মানুষের মৃত্যু
হতে পারে। এই বিষ হার্ট, নার্ভ ও স্কিন সেলে অ্যাটাক করে। রিসেন্ট একটি গবেষণায় দেখা
গেছে পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত ও হিংস্র প্রাণী এই বক্স জেলিফিশ! জেলিফিশের মধ্যে সবচেয়ে
সুন্দর দেখতে এই প্রজাতিকেই তাই রাখা হচ্ছে এই লিস্টের দুই নাম্বারে।
নাম্বার ওয়ান – মানুষ
কি ভাবছেন? এই লিস্টে মানুষের নাম এলো কেন? নিজেই
একবার ভেবে দেখেন, মানুষের থেকে খারাপ ও হিংস্র প্রাণী আদৌ আরেকটি আছে? মানুষের হিংস্রতা
মাঝেমধ্যেই যে কোন পশুকেও হার মানায়। মানুষের সৃষ্টি করা গোলাবারুদ, বন্দুক, মিসাইল,
অ্যাটম বোমার শিকার কোটি কোটি মানুষ ও পশুপাখি। যুদ্ধ, খুনখারাপি, ধর্ষণ, সিরিয়াল কিলিং
এর মতো জঘন্য কাজ যারা করে থাকে তাদেরকে ভয়ংকর প্রাণীর তালিকায় সবার উপরে না রাখলে
পাপ হবে পাপ।