৩১ আগস্ট, ১৯৩৯। রাত বাজে দুইটা। হিটলারের বেডের পাশে ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে আছে ডেভিড বার্কোউইৎজ। ‘সন অফ স্যাম’ নামক এই ইহুদি সিরিয়াল কিলার টাইম ট্রাভেল করে ভবিষ্যত থেকে এসেছে হিটলারকে খুন করতে। বেশি চিন্তা-ভাবনা না করে হিটলারের বুকে গুণে গুণে ছয়বার ছুরি চালালো সে।
একবার ভেবে দেখেন, এই অল্টারনেটিভ হিস্টোরিটা যদি আসলেই রিয়েল হতো, তাহলে বর্তমানে দুনিয়াটা কেমন হতো? টাইম ট্রাভেল কন্সেপ্টটা অনেক ফ্যাসিনেটিং হলেও, এর রয়েছে কিছু ঝামেলাও। টাইম ট্রাভেল প্যারাডক্স ব্যাপারটা আসলে কি? গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স, বুটস্ট্র্যাপ প্যারাডক্স, প্রিডেস্টিনেশন প্যারাডক্স, বাটারফ্লাই ইফেক্ট, হিটলার’স মার্ডার প্যারাডক্স-ই বা কি জিনিস?
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
নাম্বার ওয়ান - গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স
ধরুন আপনি টাইম ট্রাভেল করে কয়েক দশক পেছনে চলে গেলেন।
গিয়ে গুলি করে মেরে ফেললেন আপনার তরুন দাদাকে। তখনো
কিন্তু আপনার বাবার জন্ম হয় নি। এবার একটা জিনিস খেয়াল করেন। এর মানে কিন্তু আপনার
নিজেরো জন্ম হয়নি। তাহলে আপনি কীভাবে অতীতে গেলেন,
কীভাবেই বা গুলি করলেন? এটিই হচ্ছে
গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স। টাইম ট্রাভেল
রিলেটেড প্যারাডক্স গুলোর মধ্যে এটিই সবথেকে ফেমাস প্যারাডক্স।
নাম্বার টু - বুটস্ট্র্যাপ প্যারাডক্স
বুটস্ট্র্যাপ প্যারাডক্স তৈরি হয় তখন, যখন কয়েকটি ঘটনা
চক্রাকারে ঘটতে থাকে কিন্তু ঘটনার শুরু কোথা থেকে সেটা বোঝা যায় না। যেমন ধরুন,
ঘটনা ‘ক’ এর কারণে ‘খ’ ঘটলো, ‘খ’ এর কারণে ‘গ’ ঘটলো, ‘গ’ এর কারণে আবার ‘ক’ ঘটলো। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ চক্রটি কোন ঘটনার মাধ্যমে
শুরু হয়েছে তা বের করা সম্ভব না। এই প্যারাডক্সটিকে তাই ‘কজাল লুপ’ ও বলা হয়।
নেটফ্লিক্সের খুবই পপুলার সিরিজ ডার্কে হয়তো আপনারা
দেখেছেন, ফিউচার থেকে একজন লোক এসে সায়েন্টিস্ট ট্যানহাউসকে একটি বই দিয়ে যায়। পরে
তিনি সেই বইটিকে ফলো করে একটি বই লেখে। সেই বইটাই পাবলিশ হওয়ার পরে অতীতে গিয়ে
আবার ট্যানহাউসকে দেওয়া হয়। এভাবে একটি কজাল লুপ চলতে থাকে। বইটির রাইটার আসলে কে?
এই প্রশ্নটাই একটা প্যারাডক্স তৈরি করে। একদিকে বইটি কখনোই
ট্যানহাউসের অরিজিনাল কোন লেখা ছিল না। আবার অন্য কাউকেও বইটি লেখার ক্রেডিট দেওয়া
যায় না।
নাম্বার থ্রি - প্রিডেস্টিনেশন প্যারাডক্স
এটি অ্যাকচুয়ালি কজাল লুপেরই একটি রুপ। ধরা যাক, এক ব্যক্তি অতীতের কোনো ঘটনা পরিবর্তন করার জন্য টাইম ট্র্যাভেল করে সেখানে গেল। পরে দেখা গেল, তিনি নিজেই আসলে ঐ ঘটনার জন্যে দায়ী। তার অতীতে যাওয়ার কারণেই ঘটনাটি ঘটেছে। অর্থাৎ, প্রথম ঘটনাটি ঘটার ফলে ব্যক্তিটি টাইম ট্র্যাভেল করে অতীতে গেল এবং শেষে নিজেই সেই ঘটনাটির কারণ হয়ে দাঁড়াল। এভাবে একটি লুপ তৈরি হয়ে গেল, যা ভাঙার উপায় নেই। যেন তা ভাগ্যেই লেখা আছে। বিখ্যাত অভিনেতা ইথান হকের ‘প্রিডেস্টিনেশন’ নামক একটি জনপ্রিয় সায়েন্স-ফিকশন থ্রিলার সিনেমাও আছে। যেখানে এই প্যারাডক্সটিকে বেইজ করে মাথা নষ্ট করা একটি স্টোরি দেখানো হইছে। যারা দেখেন নাই, আজকেই দেখে ফেলেন।
নাম্বার ফোর - বাটারফ্লাই ইফেক্ট
ধরেন একজন মানুষ সময় ভ্রমণ করে ডাইনোসরদের যুগে গেল। গিয়ে সে একটি তেলাপোকা পারা দিয়ে মেরে ফেললো। খেয়াল করেন, ঘটনাটা কিন্তু ইগনোরেবল। আমরা হরহামেশাই তেলাপোকা মারি। কিন্তু সেই লোকের এই ঘটনার কারণে সার্কেলের মতো একের পর ঘটনা ঘটতে থাকলো। যা পাল্টে দিল পৃথিবীর লক্ষ বছরের ইতিহাস। এরপর সেই লোক বর্তমান সময়ে ফিরে এলো। এসে দেখলো সেই আগের পৃথিবী আর নেই। ছোট্ট একটি পরিবর্তন যদি ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে, তাহলে টাইম ট্রাভেল কি আসলেই সম্ভব? এই ইফেক্টের চমত্কার ব্যবহার দেখা যায়, রে ব্র্যাডবেরির বাটারফ্লাই ইফেক্ট নামক একটি গল্পে। এছাড়া অভিনেতা অ্যাস্টন কুচারের ‘দ্য বাটারফ্লাই ইফেক্ট’ নামক একটি বিখ্যাত সিনেমাও আছে।
নাম্বার ফাইভ - ‘হিটলার’স মার্ডার প্যারাডক্স’
এবার শুরুর ঘটনায় ফিরে যাওয়া যাক। সন অফ স্যাম যদি অতীতে গিয়ে হিটলারকে মেরে ফেলে, তাহলে কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুই হবেনা। যদি এমনটাই হয়, তাহলে ভবিষ্যতে সন অফ স্যামের হিটলারকে খুন করার দরকারই বা পড়ছে কেন? অর্থাৎ, ব্যাপারটা গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্সের মতোই একটা লুপ ক্রিয়েট করছে। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, হিটলার যদি খুন হয় তাহলে পুরো পৃথিবীর ইতিহাসই একদম অন্যরকম হবে। অনেকগুলো হিস্টোরিকাল ঘটনা ঘটবে না। অথবা সেগুলো একদমই অন্যরকম ভাবে ঘটবে। সেই পৃথিবী কি এখনকার তুলনায় ভালো হবে না-কি খারাপ তা আমরা জানি না। যাই হোক, এই রকম টাইম ট্রাভেল করে অতীতের যেকোনো হিস্টোরিকাল ঘটনা পরিবর্তন করতে চাওয়া ‘হিটলার’স মার্ডার প্যারাডক্স’ এর মধ্যে পড়ে।
নাম্বার সিক্স – ফার্মি প্যারাডক্স
একটা ব্যাপার চিন্তা করে দেখেন। যদি টাইম ট্রাভেল আসলেই সম্ভব হতো, তাহলে টাইম ট্রাভেলাররা সব কোথায়? ফিউচার থেকে নিশ্চয়ই তাদের বর্তমান দুনিয়ায় আসার কথা? এই প্রশ্নের অনেকগুলো উত্তর থাকতে পারে। হয়তো টাইম ট্রাভেলাররা গোপনে তাদের কাজ করছে। হয়তো আমরা ফিউচারের কোন ইনফর্মেশন জেনে গেলে কোনো ধরণের ব্যালেন্স নষ্ট হতে পারে। তাই তারা সতর্কতা মেইনটেইন করছে। আবার এমনও হতে পারে, তারা সময়ের নির্দিষ্ট কোন একটা অংশে যেতে পারে না। ওভারঅল এই ব্যাপারটিকে ফার্মি প্যারাডক্স বলে।