অতিরিক্ত গরম পড়লে মাঝে মাঝেই
আমরা অতিষ্ট হয়ে বলি, ইশ! বাংলাদেশে যদি বরফ পড়তো তাহলে কত ভালো হত। ঠিক আমাদের
উল্টো পরিস্থিতিতে আছে এস্কিমোরা। ওরা বলে ইশ যদি একটু গরম পড়তো! বরফের রাজ্যে
বসবাস করা এই এস্কিমোদের অদ্ভুত জীবনযাত্রা নিয়েই আজকের আলোচনা।
প্রধান যানবাহন
‘কামুতিক’
সাইবেরিয়া ও আলাস্কা অঞ্চলে
বসবাসকারী এস্কিমোদের জন্য উন্নত যানবাহন রীতিমত ফ্যান্টাসি। তবে তারা নিজস্ব
পদ্ধতিতে দারুণ এক যানবাহন তৈরি করে নিয়েছে। সেটি হচ্ছে কুকুরটানা গাড়ি ‘কামুতিক’।
ছোট ক্যারিয়ার বেঁধে দেওয়া হয় জনাদশেক কুকুরের সাথে। এরপর সেই কুকুরের ঝাঁক দৌড়ে
নিয়ে চলে মনিবদের। পিচ্ছিল বরফের উপর দিয়ে দ্রুতগতিতে যাতায়াত করা যায় এই কামুতিকে
করে।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
বরফের তৈরি ঘর
‘ইগলু’
ঐসব এলাকায় সূর্যের আলোর অভাবের
কারণে গাছ হয় খুবই কম। অল্প যাও থাকে, সেগুলো এস্কিমোরা ব্যবহার করে রান্নাবান্নার
কাজে। তাই ঘর তৈরির জন্য পর্যাপ্ত গাছের যোগান থাকে না তাদের কাছে। এই সমস্যার
সমাধানে এস্কিমোরা দারুণ এক বুদ্ধি বের করেছে। নিজেদের ঘরও তারা তৈরি করে নিয়েছে
বরফ দিয়েই। ইগলু নামক এই ঘরগুলোর উচ্চতা হয় সর্বোচ্চ ৫-৬ ফুট। তবে শীত চলে যাওয়ার পরে গরমের দিন এলে ইগলু ঘরগুলো গলে
যায়। তখন এস্কিমোরা পশুর হাড়, চামড়া ও তিমি মাছের কাঁটা দিয়ে তাবু বানায়।
জনবসতির নিচেই
গোটা সমুদ্র!
এস্কিমোদের বসবাস যেই বরফরাজ্যে,
তার নিচেই বয়ে চলেছে বিশাল সমুদ্র। এস্কিমোদের এলাকাকে তাই বলা যায় সমুদ্রের চাদর।
উপরে ইগলু ঘরে শুয়ে আছে তারা, আর নিচে বিশাল সমুদ্রে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিচিত্র সব
সামুদ্রিক প্রাণী। একই সাথে অদ্ভুত ও রোমাঞ্চকর!
তাপমাত্রা
যেখানে শূন্য ডিগ্রির উপরে ওঠে না!
আর্কটিক অঞ্চলগুলোতে ঋতু মেইনলি
দুইটা। শীতকাল ও গ্রীষ্মকাল। যদিও গরমকাল থাকে খুবই অল্প সময়। বাকি পুরোটা সময়ই
শীতকাল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, গ্রীষ্মকালেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয় শূণ্য ডিগ্রি।
তাহলে শীতকালে কি হয় ভাবেন! শীতকালে এই অঞ্চলগুলোর অ্যাভারেজ তাপমাত্রা থাকে
রীতিমত মাইনাস ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস!
ক্ষুধা মেটাতে হয় শিকার করে
শীতকালে টিকে থাকাই অনেক কঠিন
ব্যাপার। তাই তারা খাবার জোগাড় করে রাখে গরমকালে। বিভিন্ন পশু ও মাছ শিকার করেই
ক্ষুধা মিটে তাদের। শিকারের জন্য তারা বর্শা বানায় বিভিন্ন প্রাণীর দাঁত ও হাড় ব্যবহার
করে। খাওয়ার জন্য টার্গেট করে হরিণ, বন্য খরগোশ, মেরু ভাল্লুক, হাঁস, পেঙ্গুইন,
সিল মাছ ও তিমি মাছ।
বছরের ছয় মাস দিন, ছয় মাস রাত!
আর্কটিক অঞ্চলে সূর্যের আলো
রীতিমত অমাবস্যার চাঁদ। তাই সেখানে টানা ছয়মাস থাকে দিন ও ছয়মাস থাকে রাত। এই
ব্যাপারটিকে বলা হয় ‘পোলার নাইট’। আর্কটিক অঞ্চলে তাই ফুল সানরাইজ ও সানসেট হয়
বছরে কেবল একবার।