বিনোদন জগতের সকল ইন্ডাস্ট্রি কিংবা মাধ্যমেই বেশ কিছু সময় পর পর ট্রাঞ্জিশন ঘটে। বাংলা নাটকেও ছয়-সাত বছর আগে এরকম একটি ট্রাঞ্জিশন পিরিয়ড গেছে। সেই সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ও মোশাররফ করিম ধীরে ধীরে সিনেমা ও সিরিজের দিকে শিফট হয়ে যাওয়ার কারণে একক নাটক ও টেলিফিল্মে তাদের জায়গা মূলত নিশো ও অপূর্ব নিয়ে নেয়। গত ছয়-সাত বছরে বাংলা নাটকে দাপটের সাথে কাজ করেছেন এই দুজন। তাদের আলাদা আলাদা ফ্যানবেজও তৈরি হয়েছে। তাদের মধ্যে কে বেটার তা নিয়ে নিয়মিতই তর্ক-বিতর্ক চলে।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে ওঠা আহম্মেদ
ফজলে রাব্বী, যাকে আমরা আফরান নিশো নামে চিনি, ২০০৩ সালে মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার
শুরু করেন। ক্যারিয়ারের শুরুতেই তিনি পেয়েছিলেন অমিতাভ রেজা চৌধুরীর মতো গুণী
নির্মাতার সঙ্গ। এরপরে আরেক গুণী নির্মাতা গাজী রাকায়েতের হাত ধরে নাট্যজগতে পা
রাখেন তিনি। এরপর নিয়মিত একের পর এক নাটকে অভিনয় করে যেতে থাকেন। ২০১৩ সালে ট্রাম্প
কার্ড নাটক দিয়ে আলাদা করে নজর কাড়েন। তার অভিনিত টম অ্যান্ড জেরি, লাইফ অ্যান্ড
ফিওনা, অপেক্ষার ফটোগ্রাফি, আমি দেবদাস হতে চাই, রেডরোজ, বুকের বা পাশে, পুনর্জন্ম
সিরিজসহ আরো বেশ কিছু নাটক ও টেলিফিল্ম দর্শকদের মধ্যে সাড়া ফেলে।
আফরান নিশো অনেক নায়িকার সাথেই জুটি বেঁধে কাজ
করেছেন। তবে তার এবং মেহজাবিনের জুটি সবথেকে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এছাড়াও তানজিন
তিশা, শখ ও শারলিন ফারজানার সাথে তার জুটিও দর্শকরা পছন্দ করেছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে নাটক ও টেলিফিল্মে কাজ কমিয়ে
দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে তাকে ওয়েব সিরিজ ও ওয়েব ফিল্মে দাপটের সাথে কাজ করতে দেখা
যাচ্ছে। জিফাইভ এর মাইনকার চিপায়, চরকির মরীচিকা, রেডরাম, সিন্ডিকেট এবং হইচইয়ের
কাইজার সিরিজের তার চরিত্র ও অভিনয় দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এছাড়াও
শীঘ্রই তিনি সিনেমা জগতেও অভিষেক করতে যাচ্ছেন। রায়হান রাফি পরিচালিত ‘সুরঙ্গ’ সিনেমাটি
বড় পর্দায় আসবে আগামী ঈদ উল আজহায়।
আফরান নিশোকে দর্শকরা পছন্দ করেন মূলত তার অভিনিত চরিত্রের ভ্যারাইটি এবং তার হাই রেঞ্জ অ্যাক্টিং স্কিলের কারণে। কমেডি, ড্রামা, রোমান্স কিংবা থ্রিলার যেকোনো ধরণের জনরায় বিভিন্ন রকমের চরিত্রে সাবলীল অভিনয় করার ক্ষমতা রাখেন তিনি।
এবার আসা যাক জিয়াউল হক অপূর্বর দিকে। বাল্যকাল থেকেই অপূর্বর শোবিজে আগ্রহ ছিল। তিনি ২০০২ সালে "ইউ গট দ্য লুকস" অনুষ্ঠানে "মিঃ বাংলাদেশ" হয়ে খ্যাতি লাভ করেন। অপূর্বর কর্মজীবন শুরু হয় অমিতাভ রেজা চৌধুরী নির্দেশিত নেসক্যাফের বিজ্ঞাপনে মডেলিংয়ের মাধ্যমে। তার ল্যাব এইডের বিজ্ঞাপনও জনপ্রিয়তা লাভ করে। ২০০৬ সালে গাজী রাকায়েত পরিচালিত ‘বৈবাহিক’ নাটক দিয়ে অভিনয়ে যাত্রা শুরু করেন। এরপরে একের পর এক কাজ করে গেছেন তিনি। কফিহাউজ, এক্স ফ্যাক্টর, ভালোবাসার চতুষ্কোণ, যে জলে আগুন জ্বলে, ব্ল্যাক কফি, লাইফ ইন মেট্রো, প্রেম তুমি, সেই ছেলেটা, ব্যাচ ২৭, পাশের বাসার ছেলেটাসহ বেশ কিছু নাটক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তবে তার অভিনীত সবথেকে জনপ্রিয় নাটক ২০১৭ সালে মেহজাবিনের সাথে করা ‘বড় ছেলে’। এই নাটকটি সেই সময়ে ব্যাপাক সাড়া জাগায়। অপূর্বর "এএসআই ক্রিয়েশন লিমিটেড" নামে নিজের প্রযোজনা সংস্থাও আছে। এছাড়াও অপূর্ব বড় পর্দায়ও কাজ করেছেন। ২০১৫ সালে আশিকুর রহমান পরিচালিত ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’ নামক সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। যদিও সিনেমাটি ফ্লপ হয়। এছাড়াও এই বছরেই তিনি হইচই প্ল্যাটফর্মের হাত ধরে ‘বুকের ভেতর আগুন’ নামক ওয়েব সিরিজের মাধ্যমে ওয়েবেও অভিষেক করেছেন। দর্শকরা অপূর্বকে পছন্দ করেন মূলত তার রোমান্টিক চরিত্রগুলো ও তার চরিত্রগুলোর স্মার্ট, সৌম্য-শান্ত প্রেজেন্টেশনের জন্য।
তবে এই মূহুর্তে দাঁড়িয়ে যদি নিশো এবং অপূর্বর
মধ্যে থেকে যে কোন একজনকে বেছে নিতে হয়, তাহলে বেশিরভাগ মানুষ নিশোকেই বেছে নেবে
বলেই আমার বিশ্বাস। কাজ বাছাই, কাজ ও চরিত্রের ভ্যারাইটি থেকে শুরু করে ফিটনেস,
লুক এবং অভিনয়ের রেঞ্জ সবদিক দিয়েই এগিয়ে থাকবেন নিশো। তার নতুন সিনেমা কিংবা ওয়েব
সিরিজগুলো নিয়েও দর্শকদের আগ্রহ এখন তুঙ্গে।