বিশ্বাস করার উপায় নেই কার উপাসনার জন্য বানানো হয়েছিলো রহস্যময় এই স্টোনহেঞ্জ | Mystery Of Stonehenge

Author
0

 

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রত্নতাত্ত্বিক এবং ইতিহাসবিদগণ স্টোনহেঞ্জের রহস্য খুঁজে বেড়াচ্ছেন কী করে তৈরি করা হয়েছিল এই বিশালাকৃতির পাথুরে স্তম্ভ? কেনই বা তৈরি করা হয়েছিল? এরকম আরও হাজারো প্রশ্ন স্টোনহেঞ্জকে ঘিরে তৈরি হয়েছে, যার উত্তর কেউই সঠিকভাবে দিতে পারেনি তবে অনেক যুক্তি তর্কের ভিত্তিতে যেমন রয়েছে নানান তত্ত্ব, তেমনি রয়েছে অনেক মুখরোচক রহস্যময় গল্প

ইংল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের উইল্টশায়ারে অবস্থিত স্টোনহেঞ্জ নব্যপ্রস্তরযুগে তৈরি বলেই প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা তৈরি করতেও সম্ভবত পৃথিবীর যেকোনো স্থাপনার চেয়ে অধিক সময় লেগেছে স্টোনহেঞ্জের ক্ষেত্রে প্রায় ১৫০০ বছর! ছোট-বড় প্রায় ১০০টি পাথর নিয়ে তৈরি এই স্তম্ভের বড় পাথরগুলোর ওজন সর্বোচ্চ ২৫ টন! প্রাগৈতিহাসিক যুগে যখন মানুষের কাছে ছিল না কোনো প্রযুক্তি, যখন চাকাও আবিষ্কৃত হয়নি, তখন মানুষ কী করে এসব পাথর এ স্থানে বহন করে এনেছিল এবং এই স্তম্ভটি বানিয়েছিল তা আজও রহস্য হয়ে আছে


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



ইতিহাসবিদদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী স্টোনহেঞ্জ তৈরি করা হয়েছিল তিনটি ধাপে

অধিকাংশের মতে এর প্রথমভাগের কাজ শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ৩১০০ অব্দে প্রথম ধাপে এর বাইরের দিকের ৩৬০ ফুট ব্যাসের একটি বৃত্তাকার পরিখা খননের কাজ শুরু হয় যার গভীরতা ছয় ফুট এই পরিখা এবং এর ঢালু কিনারাকে একত্রে ‘হেঞ্জ’ বলা হয় ১৭ শতকে জন অব্রে নামক এক ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক এই খাদ বা গর্ত আবিষ্কার করেন তার নামেই এগুলোর নামকরণ করা ‘অব্রে হোল’ ধারণা করা হয় এই গর্তগুলোকে ‘ব্লুস্টোন’ অথবা কাঠের তক্তা দিয়ে ভরাট করা হয়েছিল ব্লুস্টোন হচ্ছে স্টোনহেঞ্জের সবচেয়ে ছোট আকারের পাথর যেগুলো ভেজা অবস্থায় কিছুটা নীলাভ দেখায় এই পাথরগুলোর ওজন ২ থেকে ৪ টনের মধ্যে, যেগুলো প্রায় ২৫০ মাইল দূরের প্রেসেলি পাহাড় থেকে আনা হয়েছিল!

প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে আগের ধাপের কাজ শেষ হবার ১০০ থেকে ২০০ বছর পর শুরু হয় দ্বিতীয় ধাপের কাজ এ সময় থেকে স্টোনহেঞ্জকে সমাধিক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয় তখন কেন্দ্রে ছাদ সদৃশ কাঠের তৈরি গঠন বানানো হয় তাছাড়া দুটি প্রবেশপথেও অনেকগুলো কাঠের তক্তা উল্লম্বভাবে স্থাপন করা হয় বৃত্তাকার পরিখাটিতে নতুন করে আরো ৩০টি গর্ত খনন করা হয় শবদাহের জন্য

দ্বিতীয় ধাপের প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ বছর পর তৃতীয় ধাপের কাজ শুরু হয় প্রধান কাজ মূলত এই ধাপেই হয় এবং এটিই সবচেয়ে দীর্ঘ ধাপ এই সময় অব্রে হোলগুলোতে থাকা ব্লুস্টোন তুলে ফেলা হয় এবং সে স্থলে ৩০টি বিশালাকার ‘সারসেন’ বসানো হয় স্টোনহেঞ্জের সবচেয়ে বড় পাথরগুলোকে সারসেন বলা হয় এই সারসেনগুলো ২৫ মাইল দূরবর্তী মার্লবোরো নামক স্থান থেকে নেয়া হয় প্রতিটি সারসেন উচ্চতায় ১৩ ফুট এবং প্রায় ৭ ফুট চওড়া এদের ওজন প্রায় ২৫ টন! প্রতি দুটি সারসেনের উপর একটি করে চৌকাঠের মতো পাথর বসিয়ে দেয়া হয় এরূপ একজোড়া সারসেনকে বলা হয় ট্রিলিথন ব্লুস্টোনগুলোকে এদের সামনে বৃত্তাকারে বসিয়ে দেয়া হয়

 

এখন কথা হচ্ছে এই স্টোনহেঞ্জ জিনিসটা বানানোর পেছনে মূল উদ্দেশ্য কি হতে পারে? ধারণা করা হয় একে পবিত্র সমাধিক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা হত এছাড়াও অনেকের মতে জ্যোতির্বিদ্যার সাথে জড়িত মানমন্দির হিসেবেও ব্যবহৃত হত এটি আবার অনেকে বলেন আরোগ্য লাভের জন্য পবিত্র স্থান হিসেবেও ব্যবহার করা হত স্টোনহেঞ্জ। তবে সবথেকে বড় রহস্য সম্ভবত কারা তৈরি করলো এই স্তম্ভটি? দ্বাদশ শতকের লেখক জিওফ্রের তত্ত্বে যদি আপনি বিশ্বাস করতে চান, তাহলে আপনাকে জাদুবিদ্যায় বিশ্বাসী হতে হবে তার মতে কোনো এক মার্লিন নামক যাদুকরের জাদুতেই তৈরি হয় স্টোনহেঞ্জ ১৭ শতকে প্রত্নতাত্ত্বিক জন অব্রে বলেন যে, স্টোনহেঞ্জ তৈরি করেন সেল্টিক ধর্মযাজকগণ, যাদেরকে ‘ড্রুইড’ বা ‘ভবিষ্যদ্বক্তা’ বলা হতো তবে বিশ শতকে আধুনিক রেডিওকার্বন পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় স্টোনহেঞ্জ ইংল্যান্ডে সেল্টিকদের বসবাসের প্রায় ১০০০ বছর আগে নির্মিত হয়েছিল অধিকাংশ আধুনিক ইতিহাসবিদ এবং প্রত্নতত্ত্ববিদগণ বর্তমানে এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে স্টোনহেঞ্জ কোনো একটি সম্প্রদায়ের নয়, বরং একাধিক সম্প্রদায় এবং জাতির কাজের ফসল

১৯৮৬ সালে স্টোনহেঞ্জকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর একটি হচ্ছে এই স্টোনহেঞ্জ প্রতি বছর আট লক্ষাধিক দর্শনার্থী এই স্থানটিতে এসে ঘুরে যায় সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকবার স্টোনহেঞ্জের সংস্কার করা হয়েছে

ইতিহাসবিদ ও আর্কিওলজিস্টরা যে থিওরিই দিক না কেন, স্টোনহেঞ্জের রহস্য পুরোপুরি ভেদ করা আদৌ সম্ভব নয় হাজার বছরের পুরনো এই স্তম্ভটি কী উদ্দেশ্যে কারা বানিয়েছিল এসব কিছুই নিশ্চিত করে হয়তো জানা যাবে না তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, স্টোনহেঞ্জ যতদিন অক্ষত থাকবে, ততদিনই মানুষের কাছে এটি একটি রহস্যময় স্থাপনা হয়ে থাকবে

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!