একটা দেশে নীল কালারের জিন্স পড়া নিষিদ্ধ! এমনকি সেখানে চকলেট খাওয়াও নিষিদ্ধ। ভাবা যায়? সেই দেশটির নাম উত্তর কোরিয়া। এরকম ক্ষ্যাপাটে দেশ পৃথিবীতে আর একটিও নেই। কারণ, তাদের নেতা কিম জং উন কোনো নিয়মই মানেন না। সেখানে কিম জং উনের মুডের উপরই সব কিছু নির্ভর করে। এই পাগলা লোকটার ক্ষমতা ও স্বেচ্ছাচারিতার হাতে বন্দী পুরো উত্তর কোরিয়া ও সেখানকার মানুষের লাইফস্টাইল! চলুন জেনে নেওয়া যাক কিম জং উন ও তার দেশ উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে অদ্ভুতুড়ে ১০ টি তথ্য।
নাম্বার টেন - ১০টি
কাটিং এর বাইরে চুল কাটা নিষিদ্ধ
উত্তর কোরিয়ায় সরকার অনুমোদিত ১০ টি কাটিংয়ের বাইরে অন্য
কোনো স্টাইলে চুল কাটা যাবে না। নারীদের জন্য অবশ্য আরেকটু ছাড় দেওয়া হয়। তারা চুল
কাটতে পারেন ১৮টি স্টাইলে। নিজের মতো চুল পর্যন্ত সেখানে কাটা যায় না। ভিন্নরকম
কাটিং যদি কেউ দিতে চায়, তাকে সরাসরি পাঠানো হয় প্রিজন
ক্যাম্পে!
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
নাম্বার নাইন - নীল
রঙা জিনস ও চকলেট অবৈধ
কিম জং উন কোনো কিছু জনপ্রিয় হয়ে যাওয়া পছন্দ করেন না। যা
কিছু জনপ্রিয় হয়, সব কিছুকেই তিনি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে
দেন। ২০১৪ সালের দিকে চকো পাই চকলেট উত্তর কোরিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এতে কিম
জং উনের মন খারাপ হয়। তাই তিনি এই চকলেট নিষিদ্ধ করে দেন। নীল রঙা জিনসও সেদেশে
নিষিদ্ধ!
নাম্বার এইট - ২০১৪
সালের ফুটবল বিশ্বকাপ জিতেছিল উত্তর কোরিয়া!
ঠিকই পড়েছেন। এই প্রোপাগান্ডাই চালায় উত্তর কোরিয়ার
মিডিয়া। ২০১৪ সালে তাদের সব সংবাদে দেখানো হয় উত্তর কোরিয়া ব্রাজিলকে ফাইনালে ৮-১
গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়! মজার ব্যাপার হচ্ছে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে তারা খেলার
সুযোগই পায়নি। আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে তাদের মিডিয়া প্রচার করে তারা ২০১০
বিশ্বকাপে পর্তুগালকে ৭-০ গোলে হারিয়েছে! অথচ বাস্তবে ঘটেছিলো উলটো। পর্তুগাল
তাদের হারিয়েছিল ৭-০ গোলে!
নাম্বার সেভেন -
বিশ্বকাপ থেকে ফুটবলারের পালানো
গুজব আছে, ফুটবল কিংবা অলিম্পিকের মতো আসরগুলোতে উত্তর কোরিয়ার কোন খেলোয়াড় জিতে ফিরতে না পারলে তাদের ধরে সোজা পাঠিয়ে দেওয়া হত প্রিজন ক্যাম্পে! ২০১০ বিশ্বকাপে সবাইকে অবাক করে দিয়ে কোয়ালিফাই করেছিল উত্তর কোরিয়ার ফুটবল দল। সেই আসরেই ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচের আগে ৪ জন ফুটবলার নিখোঁজ হয়ে যায়। ধারণা করা হয় পালানোর এত ভালো সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় নি তারা!
নাম্বার সিক্স –
সার্কাজম নিষিদ্ধ
উত্তর কোরিয়ায় যে কোনো ব্যাপারে সার্কাজম করা নিষিদ্ধ।
স্পেশালি কিম জং উনকে নিয়ে তো কোনভাবেই করা যাবে না। সার্কাজম করলেই তিন প্রজন্মকে
কাটাতে হবে প্রিজন ক্যাম্পে।
নাম্বার ফাইভ – উত্তর
কোরিয়ার প্রধান একজন মৃত ব্যক্তি
উত্তর কোরিয়াই বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে চলে নেক্রোক্রেসি। এর কারণ হলো, কিম ইল-সাংকে মরণোত্তর প্রধান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর মানে হল, উত্তর কোরিয়ার বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা, কিম জং-উন, তিনি সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডার এবং ওয়ার্কার্স পার্টির চেয়ারম্যান ঠিকই, কিন্তু তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট না। তবে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, তার বাবার মতোই তিনিও মারা যাওয়ার পরে প্রেসিডেন্ট হবেন।
নাম্বার ফোর – ক্যালেন্ডার
শুরু হয় কিম ইল-সুং এর জন্ম তারিখ থেকে
আমরা হয়তো ২০২৩ সালে আছি। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার লোকেদের
জন্য এটি এখনও ১১১ তম জুচে বছর। উত্তর কোরিয়ার জুচে ক্যালেন্ডার শুরু হয় ১৫
এপ্রিল,
১৯১২ সাল থেকে। মূলত, কিম ইল-সুং এর
বার্থ ডে থেকেই শুরু হয়েছে এই ক্যালেন্ডারটি।
নাম্বার থ্রি – অলিম্পিকে
মেডেল না জিতলে যেতে হবে লেবার ক্যাম্পে
অলিম্পিককে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আইকনিক স্পোর্টস ইভেন্ট।
যেখানে প্রচার করা হয় সমতা ও শান্তি। কিন্তু উত্তর কোরিয়া থেকে যারা খেলতে আসে, এই
কথা তাদের জন্য অ্যাপ্রোপ্রিয়েট নয়। কারণ তাদের জন্য অলিম্পিক গেমস হচ্ছে “হয় জিতো,
নাহয় মরো”। তাদের হাতে দুটি অপশন-ই খোলা থাকে।
১. খেলো, স্বর্ণপদক জিতো এবং উত্তর কোরিয়ার
লেজেন্ড হও।
২. হারো এবং লেবার ক্যাম্পে বন্দী হও।
এই ধরণের ঘটনা প্রায়ই ঘটে উত্তর কোরিয়ায়। যখন তারা ২০১০ এর
ফুটবল বিশ্বকাপে পর্তুগালের কাছে ৭-০ গোলে হারে, তখন ওই দলের
সব খেলোয়াড় এবং কোচদেরও বন্দী করে লেবার ক্যাম্পে পাঠানো হয়।
নাম্বার টু – প্রিজন
ক্যাম্পে নির্যাতন
উত্তর কোরিয়াতে প্রিজন ক্যাম্প আছে ১৬টি। যেখানে দুই লক্ষ
বন্দী করুণ জীবনযাপন করছে, যা সবথেকে বাজে দুঃস্বপ্নের চেয়েও বেশি
নির্মম। প্রিজন ক্যাম্পের বন্দীরা ঠিকঠাক খাবার পায় না, করতে
হয় অসহনীয় পরিশ্রম। তাদের অনেকেই অবসাদ ও বিষন্নতায় ভুগে মারা যায়। এসব ক্যাম্পে
বন্দী হয়ে তারাই আসে, যারা সরকারের দেওয়া অদ্ভুত কোন নিয়ম
ভাঙ্গে। এমনকি চকলেট খাওয়া কিংবা নীল রঙ্গের জিনস পড়ার মতো কাজ করেও!
নাম্বার ওয়ান - দাদার
শাস্তি ভোগ করে নাতি
কিম জং উন প্রিজন ক্যাম্পের বন্দীদের দিয়ে বিভিন্ন ধরণের
কাজ করান ফ্রি-তে। এই ফ্রি-তে কাজ করার মতো বন্দী লোকের যেন কখনো অভাব না হয়, তাই তিনি “তিন পুরুষের শাস্তি” নিয়ম চালু করেন। অর্থাৎ যদি কেউ সরকারের
ঠিক করে দেওয়া কাটের বাইরে অন্য স্টাইলে চুল কাটে, তাহলে
তার সম্পূর্ণ পরিবারকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকি সেই লোকের শাস্তি ভোগ করতে হয় তার
নাতিকে পর্যন্ত!