পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান মানুষ || Frano Selak || Luckiest unlucky man to ever live

Author
0



ক্রোয়েশিয়ার রাজধানীজাগরেবশহরে বাস করতেনফ্রানে সেলাকনামে এক ব্যাক্তি ছোটবেলা থেকেই পড়ে থাকতেন পিয়ানো আর বেহালা নিয়ে সেজন্য এই দুটো জিনিস বেশ ভালোই রপ্ত করেছিলেন তিনি।

তেত্রিশ বছরের ফ্রানে সেলাক, ১৯৬২ সালেসারাজেভোথেকেডুব্রোভনিকযাচ্ছিলেন ট্রেনে করে সেখানে একটি কনসার্টে বেহালা বাজানোর কথা ছিল তার রাতের ট্রেন, তার ওপর প্রবল ঠান্ডা, তাই ট্রেনে লোক ছিল খুবই কম তাকে নিয়ে মাত্র ঠারো জন যাত্রী ছিলেন কামরাটিতেসারাজেভোথেকেডুব্রোভনিকপৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় সাড়ে ঘন্টা তাই সঙ্গে আনা খাবার খেয়ে, জ্যাকেটের হুডটা নাক পর্যন্ত টেনে, সেলাক ঘুমিয়ে পড়েছিলেন


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন


ভোর রাতে হঠাৎ সেলাকের ঘুম ভাঙে যদিও সহযাত্রীরা সবাই ঘুমিয়ে ট্রেনটি প্রচণ্ড কাঁপতে কাঁপতে একটা ব্রিজের ওপর দিয়ে যাচ্ছিল ভয় পেয়ে ট্রেনের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় সেলাক দরজার হাতলে হাত দিয়ে দরজাটা খুলে ফেলার মুহুর্তে, বিকট শব্দ করে সেলাকদের কামরাটা ব্রীজ থেকে নিচে পড়ে যায় কোনোমতে আন্দাজ করে কামড়ার দরজা দিয়ে বেড়িয়ে যায় সেলাক। চারিদিকে কান্না আর আর্ত চিৎকার নদীর বুকে ভাসা একখন্ড বরফকে আঁকড়ে ধরেছিলেন সেলাক তার চোখের সামনে ডুবে গিয়েছিল কামরাটি উদ্ধারকারীদলের নৌকা তাঁকে উদ্ধার করেছিল আরও আধঘন্টা পর দুর্ঘটনায় সহযাত্রীরা সবাই মারা গেলেও, অকল্পনীয়ভাবে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন সেলাক


পরের বছরেই, অর্থাৎ ১৯৬৩ সালে সেলাক খবর পায় তার মা অসুস্থ্য, ‘রিজেকাশহরে ভাইয়ের কাছে আছে ট্রেনে করেরিজেকাযেতে প্রচুর সময় লাগবে, তাই সেলাক বিমানে যাওয়ার চিন্তা করে কিন্তু জানা যায় বিমানের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে তবুও সেলাকের অনুরোধে পরিস্থিতি বুঝে বিমান সংস্থা সেলাককে নিতে রাজি হয় তবে তারা সেলাককে বলেছিল, বিমানে কোনও সিট দিতে পারবে না সেলাককে বিমানের পিছনে ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টের পাশে বসে বিমানসফর করতে হবে তাতেই রাজি হয় সেলাক তবে সেটাই ছিল সেলাকের জীবনের প্রথম শেষ বিমানসফর। দরজার পাশে বসে, ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টের দেওয়া কফি খেতে খেতে তাঁর সঙ্গে গল্প করছিলেন সেলাক মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে নীল আকাশে মেঘের ভেলা দেখছিলেন সিট না পেয়েও প্রথম বিমানসফর বেশ উপভোগও করছিলেন সেলাক পুরো যাত্রাপথ নির্ঝঞ্ঝাট থাকলেও, বিমান অবতরণের পাঁচ মিনিট আগে, আকাশে থাকা অবস্থায় আচমকা খুলে যায় বিমানের দরজা কিছু বুঝে ওঠার আগেই, হাওয়ার টানে সেলাক ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ছিটকে বেরিয়ে যায় বিমান থেকে

মিনিট চারেক ওড়ার পর বিমানটি এক কৃষিজমিতে পড়ে ধ্বংস হয়ে যায় প্রাণ হারায় বিমানের দুজন পাইলট সহ সতেরো জন প্যাসেঞ্জার এমনকি, সেলাকের সঙ্গে বিমান থেকে ছিটকে পড়া ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টও মারা যায় আশ্চর্য্যজনকভাবে প্রাণে বেঁচে যায় একমাত্র সেলাকই আকাশ থেকে উল্কাগতিতে গিয়ে পড়ে ক্ষেতের মাঝে থাকা এক খড়ের গাদায়

 

বিমান দুর্ঘটনার তিন বছর পর, ১৯৬৬ সালের বর্ষাকালে সেলাক বাসে করে যাচ্ছিলেন এক ছাত্রের বাড়ি ভেজা রাস্তা দিয়ে দ্রুতগতিতে ছুটে চলছিল বাসটি ছোট নদীর ওপরে থাকা একটি ব্রিজ পার হতে গিয়ে, বাসটি সজোরে ধাক্কা খায় ব্রিজের রেলিঙে রেলিং ভেঙে বাসটি পড়ে যায় নদীতে ডুবে যাওয়ার আগে জানলার কাঁচ ভেঙে বাসের বাইরে বেরিয়ে আসে সেলাক। ডুবতে থাকা বাসের ওপর দাঁড়িয়ে, বাসের ভেতর থেকে বের করে আনে আরও কয়েকজন সহযাত্রীকে উদ্ধার করার আগেই বাসটি পুরোপুরি ডুবে যায় সে যাত্রায় বেশিরভাগ সহযাত্রী বেঁচে গেলেও, মারা গিয়েছিলো চার বাসযাত্রী দুর্ঘটনাটিতে সেলাকের মাথা ফেটে গেলেও প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন অবিশ্বাস্যভাবে

 

১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাস উইকএন্ডে নিজের গাড়ি নিয়ে বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছিলেন সেলাক মাঝপথে হঠাৎই গাড়ির ইঞ্জিন থেকে ধোঁয়া বেরোতে শুরু করে পরক্ষণেই দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করে গাড়ি আগুন ধরে যায় সেলাকের জামাকাপড়েও গাড়ি থেকে কোনও মতে বেরিয়ে, সেলাক ঝাঁপিয়ে পড়ে একটি জলাশয়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে সেলাকের গাড়ির ফুয়েল ট্যাঙ্ক এই ঘটনার তিনবছর পর, ১৯৭৩ সালে আবার সেলাক গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল ফুয়েল ট্যাঙ্ক থেকে তেল লিক করে আগুন ধরে গিয়েছিল গাড়িতে সেলাকের মাথার সব চুল পুড়ে গিয়েছিল কিন্তু প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন সেলাক

 


এসব দূর্ঘটনার বেঁচে ফেরার পরে উল্টো অনেকেই সেলাককেঅপয়ামনে করতে শুরু করে তাদের ধারনা, সেলাক যেখানে যায়, সেখানেই কোনো না কোনো দূর্ঘটনা ঘটেই

সমাজের চোখেঅপয়াসেলাক অর্থকষ্ট নিয়ে জীবন কাটিয়েছিলেন প্রায় তিরিশ বছর ৭৩ বছর বয়সি সেলাক ২০০২ সালে নিছকই খেয়ালের বশে লোটো-২০০২এর বেশ কয়েকটি লটারির টিকিট কিনে নেন তবে সেলাক বুঝতে পারেননি, অজান্তেই তাঁর কপালের রঙ পাল্টে গিয়েছে হ্যাঁ, সেলাক জিতে গিয়েছিলেন প্রায় পাঁচ কোটি

 

কেউ যদি সেলাককে জিজ্ঞেস করতেন, “আপনিভাগ্যবাননাহতভাগ্য?” হাসিমুখে সেলাক উত্তর দিতেন, দুই দিক থেকেই আপনারা আমাকে দেখতে পারেন

২০১৬ সালে ৮৭ বছর বয়সে মারা যায় পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান ব্যাক্তিফ্রানে সেলাক

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!