কেন নিষিদ্ধ করা হলো এই বইগুলোকে? || Fact About Banned Books || Mysterious book

Author
0

 


আচ্ছা আপনাদেরকে আমি এখন কয়েকটি বইয়ের নাম বলবো। দেখুন তো এগুলো সম্পর্কে আগে কোথাও শুনেছেন কিনা? তসলিমা নাসরিনের লজ্জা, হুমায়ূন আজাদের নারী, ভ্লাদিমির নবোকফের লোলিতা, সালমান রুশদীর স্যাটানিক ভার্সেস, জান্নাতুন নাঈম প্রীতির জন্ম ও যোনীর গল্প। এই সবগুলো বই-ই নিজ নিজ দেশে হয়েছে নিষিদ্ধ। তবে সবগুলো বই-ই আল্টিমেটলি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ভেতরে ভালো কন্টেন্ট থাকুক কিংবা না থাকুক।

তবে নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট ফেলা বইগুলোই যে শুধু নিষেধাজ্ঞার মুখ দেখেছে তা নয়। ভালো বই-ও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে ব্যান হয়েছে। যেমন ড্যান ব্রাউনের দ্য ডা ভিঞ্চি কোড, কাজী নজরুলের যুগবাণী ও জর্জ অরওয়েলের অ্যানিমেল ফার্ম।


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



নাম্বার টেন - দ্য কল অব দ্য ওয়াইল্ড (জ্যাক লন্ডন)

মার্কিন লেখক জ্যাক লন্ডনের এই বইটি ১৯০৩ সালে প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পর পরই যুগোস্লাভিয়া ও ইতালিতে বইটি নিষিদ্ধ করা হয়। ‘অতি মাত্রায় উগ্রবাদী’ ট্যাগ দিয়ে বইটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। জার্মানির নাৎসিরাও ‘দ্য কল অব দ্য ওয়াইল্ড’ পছন্দ করেনি। কমিউনিজমের প্রতি লেখক জ্যাক লন্ডনের ঝোঁক থাকার কারণে বইটির অসংখ্য কপি পুড়িয়ে ফেলেছিল নাৎসিরা।


নাম্বার নাইন - লজ্জা (তসলিমা নাসরিন) 

১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হওয়ার পরে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয় লজ্জা বইটিএর কারণ ছিল বইতে ইসলাম বিদ্বেষ, অশ্লীলতা ও রাষ্ট্রবিরোধী উস্কানিমূলক বক্তব্যকে প্রোমোট করা। বাবরী মসজিদের ইনসিডেন্টের পরে বাংলাদেশে দেখা দেওয়া প্রতিক্রিয়াকে নিজের মনগড়া মতামত বইতে প্রোমোট করাটা ভালোভাবে নেয় নি অনেকেই। তবে বইটি প্রথম ছয় মাসেই পঞ্চাশ হাজার কপি বিক্রি হয়েছিল। নিষিদ্ধ হওয়ার পরে ইংরেজিসহ মোট ২৫ টি ভাষায় অনুবাদ বের হয়েছে বইটির।

সে সময়ে মৌলবাদীরা হত্যার হুমকি দেওয়ায় দেশ ছাড়েন তিনি। লজ্জা ছাড়াও তার লেখা ‘আমার মেয়েবেলা’, ‘উতল হাওয়া’, ‘দ্বি-খণ্ডিত’, ‘সেই সব অন্ধকার’ বইগুলোও একে একে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা আর্টিকেল কিংবা ফেসবুক স্ট্যাটাসে সমকামিতা, নাস্তিকতা, ফেমিনিজম এবং অ্যান্টি-ইসলামিক এক্সট্রিম মতবাদ প্রচার করার কারণেও তিনি সমালোচিত হয়েছেন।


নাম্বার এইট - নারী (হুমায়ূন আজাদ)

প্রকাশিত হওয়ার তিন বছরের মাথায় ১৯৯৫ সালে নারী বইটিকে সেই সময় সরকারীভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। বইটিতে পুরুষতন্ত্রবাদ এবং হিন্দু, ইহুদী, খ্রিস্টান এবং ইসলাম ধর্ম কিভাবে নারীদের শোষণ করে তা দেখানো হয়েছে। বইটির ১৪টি বাক্য নিয়ে অভিযোগ করে বইটিকে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দুজন বিশেষজ্ঞ।

নারী বইটিতে বিভিন্ন অধ্যায়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সিগমুন্ড ফ্রয়েড, বঙ্কিম, জ জ্যাক রুশোসহ অনেক বিখ্যাত মানুষের সমালোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও প্রেম ও বিয়ের বিরোধিতা করে যৌনতার পক্ষে কথা বলেছেন লেখক। নারী’ নিষিদ্ধ হওয়ার পরপরই লেখক রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করেছিলেন২০০০ সালে আদালত বইটির উপর থেকে ব্যান তুলে দেয়। হুমায়ূন আজাদের আরও বেশ কিছু বই নিয়ে বহু তর্ক-বিতর্ক ও সমালোচনা হয়েছে।


নাম্বার সেভেন - স্যাটানিক ভার্সেস (সালমান রুশদি)

১২ই আগস্ট, ২০২২। আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন লেখক সালমান রুশদী। হঠাৎ এক তরুণ তার উপরে হামলা করে বসে। এই হামলার কারণ তার লেখা বই স্যাটানিক ভার্সেস। বইটি লেখার পর থেকে বহু বছর ধরেই হত্যার হুমকি পেয়ে আসছেন তিনি। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত এই বইতে তিনি মহানবী (সা:) এর জীবনের বিভিন্ন ঘটনা জাদুবাস্তবতার আদলে উপস্থাপন করেন। যা অনেক মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনি তাঁকে হত্যার ফতোয়াও দিয়েছিলেন। এছাড়া এই বই বিক্রি করায় বিভিন্ন দোকানে বোমা হামলাও হয়েছে।



নাম্বার সিক্স - লোলিতা (ভ্লাদিমির নবোকফ)

ললিতা সাহিত্য ইতিহাসের সবথেকে বিতর্কিত বইগুলোর মধ্যে একটি রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে জন্ম নেয়া ভ্লাদিমির নাবোকফের লেখা বইটি ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। মাঝবয়সি সাহিত্যের প্রফেসর হামবার্টের সাথে ১২ বছর বয়সী কিশোরী ডলারেসের অসম প্রেমকে কেন্দ্র করে বইটি লেখা হয়েছে। যেখানে ডলারেস থাকে হামবার্টের সৎ মেয়ে! বইটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা দেশের মধ্যে রয়েছে ইউকে, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। বিতর্কিত উপন্যাস হওয়ার কারণে বইটি আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করে এটিকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে বিখ্যাত সিনেমাও।


নাম্বার ফাইভ - যুগবাণী (কাজী নজরুল ইসলাম)

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম প্রবন্ধের বই ছিল যুগবাণী। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রবন্ধ লেখা ও প্রচারণার অভিযোগে ১৯২২ সালে বইটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ব্রিটিশ সরকার। এই বইটিতে মোট ২১টি প্রবন্ধ লিখেছিলেন তিনিএর মধ্যে ছিল উল্লেখ করার মতো কিছু লেখাও। যেমন - নবযুগ, গেছে দেশ দুঃখ নাই, শ্যাম রাখি না কূল রাখি, জাগরণী, আবার তোরা মানুষ হ! ইত্যাদি। বইটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এর সবগুলো কপি বাজেয়াপ্ত করে নেয় ইংরেজ সরকার। সেই সময় গোয়েন্দা রিপোর্টে ‘যুগবাণী’কে ভয়ংকর বই বলা হয়তাদের মতে লেখক বইটির মাধ্যমে উগ্র জাতীয়তাবাদ প্রচার করেছিলেন। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৪৭ সালে বইটির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। সেই সময়ে নজরুলের আরো বেশ কিছু বই নিষিদ্ধ হয়েছিল। যেমন - ‘বিষের বাঁশি’, ‘প্রলয় শিখা, ‘ভাঙার গান’ ও ‘চন্দ্রবিন্দু’।


নাম্বার ফোর - অ্যানিমেল ফার্ম (জর্জ অরওয়েল)

ব্রিটিশ লেখক জর্জ অরওয়েলের বিখ্যাত উপন্যাস ‘অ্যানিমেল ফার্ম’। ১৯৪৫ সালে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। তবে এর প্লটের কারণে শুরুতে ব্রিটেনে বইটির প্রকাশে বাঁধা দেওয়া হয়েছিলজর্জ অরওয়েল নিজে কমিউনিজমে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু সেই সময়কার সোভিয়েত ইউনিয়নের রুলার জোসেফ স্ট্যালিনের সমালোচক ছিলেন তিনি। রূপকের মাধ্যমে স্ট্যালিনের ফিলোসফির বিরোধিতা করেছিলেন তিনি ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ উপন্যাসেওই সময় জার্মানিতেও বইটি ব্যান করা হয়১৯৪৬ সালে যুগোস্লাভিয়াতেও বইটি নিষিদ্ধ হয়। ১৯৯১ সালে নিষিদ্ধ হয় কেনিয়ায়। এমনকি ২০০২ সালে এসে ইউনাইটেড আরব আমিরাতেও বইটি নিষিদ্ধ হয়


নাম্বার থ্রি - অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট (এরিখ মারিয়া রেমার্ক)

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ব্যাকড্রপে লেখা হয়েছিল বিখ্যাত উপন্যাস ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’। এরিখ মারিয়া রেমার্কের এই বই ১৯২৯ সালে প্রকাশিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে যে জার্মান সেনারা প্রচণ্ড শারীরিক ও মানসিক চাপ সহ্য করে যুদ্ধে ছিল, সেই বিষয়টিকেই তুলে ধরা হয়েছিল এই উপন্যাসে মজার ব্যাপার হচ্ছে, রেমার্ক নিজেই ছিলেন একজন জার্মান। তার এই উপন্যাসটি তাই আরো বেশি অসহ্য লেগেছে নাৎসি নেতাদের কাছেতাই ওই সময় জার্মানিজুড়ে বইটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।


নাম্বার টু - ইউলিসিস (জেমস জয়েস)

১৯০৪ সালের ১৬ জুন আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে লেওপোল্ড ব্লুমের কাটানো একটি দিন নিয়ে ইউলিসিস উপন্যাসটি লিখেছেন জেমস জয়েস। বইটি প্রথম সিরিজ আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর ১৯২২ সালে বই আকারে প্রকাশিত হয়৷ বইটির বিরুদ্ধে ব্লাসফেমি ও যৌনতার অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি সিরিজ আকারে প্রকাশের সময় অশ্লীলতার মামলাও করা হয়েছিল বইটির বিরুদ্ধে



নাম্বার ওয়ান - দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই (জে ডি সালিঞ্জার)

এই বইতে দেখানো হয়েছে ১৭ বছরের হোল্ডেন কোলফিল্ডের অবাধ্যতার গল্পউপন্যাস হিসেবে ১৯৫১ সালে প্রকাশিত এই বইটি অ্যাডাল্টদের জন্য লেখা হলেও, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল বিটলস তারকা জন লেননের খুনী মার্ক চ্যাপম্যান যেদিন লেননকে হত্যা করেন সেদিনই বইটি কিনেছিলেন। এই বইটিই জন লেননকে খুন করার ক্ষেত্রে তার মোটিভ হিসেবে কাজ করেছিল। তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, ‘তুমি কেন জন লেননকে খুন করলে?’ তিনি জানান, ‘কারণ কোলফিল্ড লেননকে সামনে পেলে সেও এই কাজটাই করতো!’

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!