পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্বমতে, আমাদের এ বিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আমাদের মহাবিশ্বের মতোই সমান্তরাল কিছু মহাবিশ্ব রয়েছে, যেখানে সময় আমাদের উল্টোদিকে প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ, বিশ্বজগতের কোথাও ঠিক এমন একটি মহাবিশ্ব আছে, যেখানে হয়তো আমাদের মতোই মিল্কিওয়ে ছায়াপথ আছে, আছে নানা নীহারিকা। সেখানেও সৌরজগতের মাঝে পৃথিবী নামে নীলাভ একটি গ্রহ আছে, যে গ্রহে হয়তো এই মুহুর্তে আপনার মতো দেখতে কেউ একজন অসীম আগ্রহ নিয়ে এই ভিডিওটি দেখছে। অর্থাৎ, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোথাও না কোথাও একইরকমের কিছু সমান্তরাল মহাবিশ্ব রয়েছে, যারা একে অপরের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানে না। একেই সাধারণভাবে প্যারালাল ইউনিভার্স বলা হয়ে থাকে।
পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন
টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে আমরা অনেকেই শুনেছি। বিজ্ঞানীদের মতে, কেউ যদি টাইম ট্রাভেল করে অতীতে যেতে চায়, তবে সে ওয়ার্মহোলের মধ্যে প্রবেশ করার পরে একই রকমের দেখতে অন্য একটি মহাবিশ্বে প্রবেশ করবে, সেখানে গিয়ে সে যদি কাউকে হত্যাও করে, তবে তা বিশেষ কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ ওয়ার্মহোলের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করা সেই সমান্তরাল মহাবিশ্বে হত্যাকারীর কখনোই কোনো অস্তিত্ব ছিলো না! তাছাড়াও, যেহেতু সময় সবসময় সামনের দিকে এগোয়, কখনোই পেছনের দিকে যায় না, সুতরাং অতীতে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে এমন এক মহাবিশ্বে প্রবেশ করা যেখানে সময় উল্টোদিকে প্রবাহমান। আর এই বৈজ্ঞানিক সম্ভাবনা এমন কোনো মহাবিশ্বে সম্ভব যেখানে সময় উল্টোদিকে প্রবাহিত হয়ে থাকে। মূলত এভাবেই টাইম ট্রাভেল সংক্রান্ত জটিলতার উত্তর খুঁজতে গিয়ে প্যারালাল ইউনিভার্সের সম্ভাবনাটি সামনে আসে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানে, “বিগ ব্যাং”কে মহাবিশ্বের টাইমলাইনের বা শুরুর বিন্দু হিসাবে বিবেচনা করা হয় যেখানে সমস্ত কিছুর শুরু হয়েছিল। বিগ ব্যাং তত্ত্ব অনুসারে, আমাদের মহাবিশ্ব একটি একক বিন্দু থেকে প্রসারণের মাধ্যমে শুরু হয়েছে এবং এটি এখনও প্রসারিত হচ্ছে। যখন আমরা আমাদের মহাবিশ্বের কথা চিন্তা করি, তখন আমরা সাধারণত অনুমান করি যে এর সূচনা বিন্দু হল বিগ ব্যাং – যা প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে ঘটেছিল।
যাইহোক, ধরুণ, বিগ ব্যাং আসলে ঘটেইনি! স্থান এবং সময়ের কোন শুরু নেই! তাহলে আমাদের মহাবিশ্বের শুরু কিভাবে হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই মাল্টিভার্স তত্ত্ব এর ধারণাটি এসেছে। মাল্টিভার্স থিওরি অনুযায়ী আমাদের মহাবিশ্ব, যা কোটি কোটি গ্রহ, তারা এবং ছায়াপথ নিয়ে গঠিত এবং কোটি কোটি আলোকবর্ষ বিস্তৃত, এটিই একমাত্র মহাবিশ্বের নাও হতে পারে। আমাদের মহাবিশ্বের মতো এমন অসীম সংখ্যক মহাবিশ্ব থাকতে পারে যেগুলো নিজস্ব প্রাকৃতিক নিয়মের সাথে চলে এবং একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। মাল্টিভার্স তত্ত্ব বিজ্ঞান মহলে সবচেয়ে বিতর্কিত ধারণাগুলোর মধ্যে একটি।
বিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের মহাবিশ্বের বাইরেও আরো কিছু বিগ ব্যাং হয়েছে বা হয়ে চলেছে, যার ফলে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে একাধিক মহাবিশ্ব। অর্থাৎ একটি বড় বাবলের মধ্যে যদি আমরা অনেকগুলো ছোট ছোট বাবলের কথা চিন্তা করি তাহলে আমরা বুঝতে পারবো মাল্টিভার্স কীভাবে সৃষ্টি হচ্ছে বা টিকে আছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও চমকপ্রদ একটা প্রশ্ন হচ্ছে; প্যারালাল ইউনিভার্সে সত্যিই ভ্রমণ করা সম্ভব কি না?
উত্তর হচ্ছে, থিওরিক্যালি সম্ভব! তবে তার জন্যে দুটি জিনিসের প্রয়োজন। এক, আলোর গতিতে চলার ক্ষমতা থাকতে হবে। দুই, ওয়ার্মহোলের মধ্যে দিয়ে অতীত ভ্রমণের মাধ্যমে প্যারালাল ইউনিভার্সে যেতে হবে। তবে পদার্থবিজ্ঞান যেহেতু আজ অব্দি আমাদের এই দুটির কোনোটিরই কোনোরুপ বাস্তব সম্ভাবনা দেখাতে সক্ষম হয়নি, তাই ধরে নিচ্ছি, আপাতত আমাদের আর প্যারালাল ইউনিভার্স বা মাল্টিভার্সে ভ্রমণ করা সম্ভব হচ্ছে না।