মাঠের মধ্যেই কোচের সাথে ফুটবলারদের মারামারি! Crazy Moments: Players vs Coaches

Author
0

 


আপনারা কি কেউ ফুটবল খেলতে গিয়ে কখনো মারামারি করেছেন? আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এটি খুবই নরমাল কেইস। এলাকার ফুটবলে মাঝেই মাঝেই লেগে যায় তুমুল গ্যাঞ্জাম। প্রোফেশনাল ফুটবলেও এরকম ঘটনা আছে অহরহ। কিন্তু কখনো কি দেখেছেন কোচের সাথে ফুটবলারের ঝামেলা হতে? খুবই রেয়ার সিনারিও হলেও, ইতিহাসে জুড়ে রয়েছে কোচ ও ফুটবলারদের মধ্যে ঘটা বিতর্কিত কিছু গ্যাঞ্জামের গল্প। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু আলোচিত ঘটনা।


১. ডেভিড বেকহ্যাম vs স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন

ইংলিশ লেজেন্ড ফুটবলার বেকহ্যামের সাথে স্যার আলেক্স ফার্গুসনের ঝামেলা অন্য সব ঘটনার মতো কথা কাটাকাটি কিংবা দল ত্যাগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। এফএ কাপে আর্সেনালের বিপক্ষে ম্যাচটির প্রথমার্ধে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তেমন একটা ভালো করতে পারেনি। বিরতির সময়ে ড্রেসিংরুমে কোচ ফার্গুসন ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন খেলোয়াড়দের প্রতি এবং বেশিরভাগই ছিল বেকহ্যামকে লক্ষ্য করে। বেকহ্যামের মতে, আর্সেনালের দ্বিতীয় গোলটির জন্য কোচ তাকেই দায়ী করছিলেন, যদিও সেই গোলটির জন্য দলের প্রায় অর্ধেক খেলোয়াড়কেই দায়ী করা যেত।


পুরো লেখাটি পড়তে না চাইলে ভিডিওটি দেখুন



কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে রাগের মাথায় ফার্গুসন ড্রেসিংরুমে থাকা একটি বুটে লাথি দিলে তা আনএক্সপেক্টেডলি গিয়ে লাগে বেকহ্যামের কপালে। বুটের আঘাতে বাম চোখের উপরে কেটে যায় এবং সেখানে দুটি সেলাইও পড়ে। রাগে ফেটে পড়ে বেকহ্যাম কোচের দিকে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এগিয়ে গেলে তাকে থামিয়েছিলেন গিগস, নিস্টলরয় এবং নেভিল। অবশ্য নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফার্গুসন বলেছিলেন, “আমি দুঃখিত ডেভিড, এমনটা করতে চাইনি আমি।” কোনো উত্তর না দিয়ে তখন নীরবে ড্রেসিং রুম ছেড়েছিলেন এই ফুটবলার এবং মাসখানেক পরে ছেড়েছিলেন ওল্ড ট্রাফোর্ড।


২. ইকার ক্যাসিয়াস vs হোসে মরিনহো

কাতালান ক্লাব বার্সেলোনা এবং স্পেনের রাজধানীর ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের সম্পর্ক লিগের রাইভালরি ছাপিয়ে স্পেন জাতীয় দলেও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছিল একটা সময়। স্পেনের অধিনায়ক হিসেবে এই ব্যাপারটি মেনে নিতে পারেননি স্পেনের কিংবদন্তি গোলকিপার ইকার ক্যাসিয়াস। দুই ক্লাবের বাজে সম্পর্কের কারণে জাতীয় দলে যেন কোনো নেগেটিভ ইফেক্ট না পড়ে সেই ব্যাপারে তিনি কথা বলেছিলেন বার্সেলোনার জাভি ও পুয়োলের সাথে। ক্যাসিয়াস বলেছিলেন, “জাতীয় দলের ঝামেলা মেটানোর জন্য আমি বার্সেলোনার কারও সাথে কথা বলেছি, ব্যাপারটি মরিনহো ভালোভাবে নেননি।” ক্যাসিয়াসের সাথে মরিনহোর ঝামেলার শুরু সম্ভবত এখান থেকেই। ২০১১-১২ সিজনে রেকর্ড ১০০ পয়েন্ট নিয়ে মাদ্রিদ লিগ জেতার পর, ডিসেম্বরে মালাগার বিপক্ষে তার বদলে মরিনহো মাঠে নামায় তরুণ গোলকিপার আদানকে। দুই সপ্তাহ পর, ক্যাসিয়াস ইনজুরি আক্রান্ত হলে মরিনহোর দলে অনেকটাই ব্রাত্য হয়ে পড়েন মাদ্রিদের সর্বকালের সেরা এই গোলরক্ষক। এই সময়ে মরিনহো দিয়েগো লোপেজকে মাদ্রিদে নিয়ে আসেন এবং সেই সাথে দলে পাকাপাকি জায়গা হারান ঘরের ছেলে ক্যাসিয়াস।

২০১৫ সালে ফ্রিতে পোর্তোতে যোগ দেন ক্যাসিয়াস। পরবর্তীতে তিনি অভিযোগ করে আর জল ঘোলা করেননি। আক্ষেপ নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার পর শুধু বলেছিলেন, “একই দলে দীর্ঘ একটা সময় খেললে, আপনার উপরে লোকজনের একঘেয়েমি চলে আসে।”


৩. রয় কিন vs অ্যালেক্স ফার্গুসন

MUTV’তে ২০০৫ সালে কিন তার সবচেয়ে কুখ্যাত ইন্টারভিউতে নিজ দলের তরুণ খেলোয়াড়দের বাজেভাবে ক্রিটিসাইজ করেছিলেন। শেষপর্যন্ত অবশ্য যা প্রচারও করা হয়নি। তবে ব্যাপারটি ফার্গুসন একেবারেই হালকাভাবে নেননি, কিন ও দলের বাকি খেলোয়াড়দের সাথে নিয়ে ইন্টারভিউটি একসাথে দেখার ব্যবস্থাও করেছিলেন তিনি।

সেখানে কিন বলেছিলেন, রিচার্ডসন ‘একজন অলস ডিফেন্ডার’, তিনি আসলে অবাক যে কেন ‘স্কটল্যান্ডের মানুষেরা ড্যারেন ফ্লেচারকে নিয়ে এত হাইপড আপ’। ফার্দিনান্দের ব্যাপারে তার বক্তব্য ছিল আরও অপমানজনক, ‘শুধুমাত্র সপ্তাহে ১ লাখ ২০ হাজার ইউরো বেতন এবং টটেনহ্যামের বিপক্ষে ২০ মিনিট ভালো খেলেই, আপনি নিজেকে একজন সুপারস্টার মনে করেন!’ তাছাড়াও, রয়ের বাক্যবাণ থেকে বাদ পড়েননি অ্যালান স্মিথ, ভ্যান ডার সারও।

ড্রেসিংরুম তথা দলের ইউনিটির জন্য এমন ঘটনা ছিল খুবই ভয়াবহ। কিন ড্রেসিংরুম ছেড়ে যাওয়ার পরই ফার্গুসন ও তার সহকর্মীরা সিদ্ধান্ত নেন, ক্লাব ছাড়তে হবে তাকে এবং শেষপর্যন্ত তা-ই হয়েছিল। আলেক্স ফার্গুসন তার অটোবায়োগ্রাফিতে লিখেছেন, “রয় কিনের সবথেকে বড় সমস্যা তার জিহ্বা।”


৪. রুদ খুলিত vs অ্যালান শিয়েরার

১৯৯৯ সালে সান্ডারল্যান্ডের বিপক্ষে নিউক্যাসলের ম্যাচটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে এটি যেমন ডার্বি ম্যাচ ছিল, তেমনি সিজনের শুরুর ছয়টি ম্যাচের পাঁচটিতেই পরাজিত হয়ে নিউক্যাসল তখন জিততে মরিয়া। সেই ম্যাচে নিউক্যাসলের তৎকালীন কোচ ডাচ কিংবদন্তি রুদ খুলিত দলের তারকা স্ট্রাইকার অ্যালান শিয়েরারের বদলে নামিয়েছিলেন তরুণ পল রবিনসনকে। শেষপর্যন্ত ম্যাচটিতে তার দল ২-১ গোলে হারলে তিনদিন পর পদত্যাগ করেন খুলিত।

একাদশ থেকে বাদ যাওয়া এবং নিউক্যাসলের পরাজয়, দুটি ব্যাপারই ভালোভাবে নেননি শিয়েরার। কিংবদন্তি এই স্ট্রাইকার পরে জানিয়েছিলেন, যদি খুলিত পদত্যাগ না করতেন, তাহলে হয়তো তিনিই ক্লাব ছেড়ে চলে যেতেন। খুলিতও বলেছিলেন, “আমি তার মুখের উপরেই বলেছিলাম, আমার দেখা সবচেয়ে ওভাররেটেড খেলোয়াড় তিনি।”

ঐ সিজনেই শিয়েরার ২৩ গোল করে খুলিতের কথা শুধু ভুলই প্রমাণ করেননি, পরবর্তীতে হয়েছেন প্রিমিয়ার লিগ হিস্ট্রির টপ স্কোরারও। যেই রেকর্ড আজও বহাল তবিয়তে আছে।


৫. ফার্নান্দো রেদোনদো vs ড্যানিয়েল পাসারেলা

আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার রেদোনদোর সাথে জাতীয় দলের কোচ পাসারেলার ঝামেলার কারণটা ছিল বেশ উদ্ভট এবং মজার। তাদের সমস্যার মূল কারণ ছিল রেদোনদোর চুল! পাসারেলা আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলার। ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপ জয়ী আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে ছিলেন দলের কোচ। দলের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার রেদোনদোকে সেই বিশ্বকাপের স্কোয়াড থেকে বাদ দিয়েছিলেন শুধুমাত্র বড় চুল কাটতে রাজি না হওয়ার কারণে।



৬. কেপা vs সারি

২০১৮-১৯ কারাবাও কাপ ফাইনালে চেলসি বনাম সিটির মধ্যকার ম্যাচ নির্দিষ্ট সময়ে 0-0 গোলে ড্র হলে, পেনাল্টি শ্যুট-আউটের আগে কোচ মাওরিসিও সারি রেগুলার গোলকিপার কেপাকে তুলে পেনাল্টি স্পেশালিস্ট উইলি ক্যাবালেরোকে নামাতে চান। কিন্তু কেপা মাঠ থেকে উঠতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে সে সময়েই সারি এবং তার কোচিং স্টাফের সাথে কেপার বাকবিতণ্ডা দেখা যায়। শেষমেশ ম্যাচটি হারে চেলসি। কোচ সারি এবং কেপার সম্পর্কেও চির ধরে। ব্যাপক সমালোচনার শিকার হন কেপা। ফর্ম হারিয়ে পরের সিজনে একাদশে জায়গাও হারান তিনি। সারিও চেলসি ছেড়ে জুভেন্টাসে চলে যান পরের সিজনে। যদিও পরে সেই হারানো ফর্ম ফিরে পেয়েছেন কেপা। এই মুহূর্তে চেলসি থেকে লোনে রিয়াল মাদ্রিদে খেলছেন তিনি।

মতামত

0Comments

আপনার মতামত লিখুন (0)

#buttons=(ঠিক আছে!) #days=(20)

এই ওয়েবসাইটি ব্যবহারে আপনার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য কুকিজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা কখনই আপনার সম্মতি ছাড়া আপনার কোনো ডাটা সংরক্ষণ করব না। আরো জানুন
Ok, Go it!